ইতিহাস হতে জানা যায় কুষ্টা থেকে কুষ্টিয়া নামকরণ হয়েছে। অর্থাৎ এ অঞ্চলে কুষ্টার ব্যাপক চাষাবাদ ছিল এটা সহজেই অনুমেয়।কালেভদ্রে এ কুষ্টাই বই- পুস্তকে পাট নাম ধারণ করেছে।কুষ্টার কদর এখন কুষ্টিয়ায় আর নাই।অর্থাৎ কুষ্টিয়ায় কুষ্টার জনপ্রিয়তা ফিকে হতে বসেছে। কুষ্টিয়া জেলা মোট ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। কুষ্টিয়া ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায় সদরের ইবিথানায় এক সময়ে কুষ্টার ব্যাপক চাষাবাদ হতো।এখন আগের মত তেমনটি চাষাবাদ আর হয়না।সার,বীজ,কীটনাশক,খরা,অনাবৃষ্টির কারণে চাষিরা কুষ্টার চাষাবাদ করতে খেই হারিয়ে ফেলেছে।জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে কুষ্টার চাষাবাদ হয়েছে।তন্মধ্যে ইবিথানায় চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এক বিঘা জমিতে কুষ্টার ফলন হয় ৫ থেকে ৬ মণ।সোনালী রংয়ের কুষ্টা প্রতিমণ বিক্রি করা ষায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়।কিন্তু জলবায়ুর বৈরী আবহাওয়ার কারণে কুষ্টার সে সোনালী রং আার হয়না।কুষ্টার বা পাটের রং হয় মূলত পানির জন্যে। শ্রাবণের এ সময়ে বৃষ্টি নাই।পানির অভাবে চাষিরা কুষ্টা কেটে পালা দিয়ে রেখেছে। সরেজমিনে দেখা ষায় ক্ষেতের পাট শুকিয়ে ষাচ্ছে।পাট শুকিয়ে ষাওয়ার বিষয়ে আব্দালপুর নিবাসী চাষি মোঃ তাইজাল হোসেন জানান,আমাদের অঞ্চল জিকে সেচের আওতায় থাকায় আমরা জিকে সেচের পানির আশায় থাকি এবার জিকে সেচ প্রকল্প সময় মত পানি দেয়নি।তাছাড়া শ্রাবণের বৃষ্টির এ মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় কুষ্টা বা পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। একটি জন বা কৃষাণের মূল্য ৫০০থেকে ৬০০ টাকা।নদী,খাল,বিল,ক্যানালে,পুকুরে কোথাও পানি না থাকার জন্যে পাট জাগ বা পচানো যাচ্ছে না তাই পাট কাটার চেয়ে না কাটাই ভালো।সেজন্যে পাট মঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে।কুষ্টিয়া কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ হায়াত মাহমুদ বলেন,এ অঞ্চলে দুই ধরণের পাট বেশি চাষাবাদ হয়।বাংলাদেশী পাট-৮ বা বারি-১ ও তোষা পাট।চাষিরা ভারতীয় জেআারও-৫২৪ জাতের পাট বেশি চাষ করায় এমনটি হতে পারে কেননা ভারতীয় বীজের উপরে আমাদের আস্থা কম।চাষিদের বারবার পরামর্শ দেয়া সত্ত্বেও তারা ভারতীয় পাট চাষ করেছে।তিনি আরও বলেন,ইদানিং কালে পাটের নানান ধরণের রোগ- জীবাণু আক্রমণ করে।সেগুলোর মধ্যে( ১)এনথ্রাকনোজ (২) শুকনো ক্ষত রোগ(৩) ঢলে পড়া রোগ অন্যতম।এনথ্রাকনোজ রোগ একটি বীজবাহিত ছত্রাক জনিত রোগ।এ রোগে পাটের পাতা কালচে রং ধারণ করে।কান্ড ফেটে যায়।কীটনাশক ফোর্বস থ্রি- ৪০ গ্রাম পাচ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়।শুকনো ক্ষত রোগে প্রভোক্স কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।ভারতীয় বীজের পাট সাধারণত ঢলে পড়ে পাট চাষিদের আমরা এ বীজ ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করি।পানির অভাবের পাট জাগ দেওয়া না গেলে বিটোফ পদ্ধতিতে আশ ছাড়িয়ে অল্প জায়গায় পাট পচানো যেতে পারে অথবা অল্প পানি হলে পাটের তিনটি স্তর করে প্রতি স্তরে জীবাণু পাউডার ২৫ থেকে ৩০ কিলোগ্রাম ছিটিয়ে পাট পচানো ষায়।পাট চাষি আঃ রাজ্জাক বলছে ভিন্ন কথা।পানি ছাড়া পাট জাগ দিলে পাটের কোন রং আসেনা।পাউডার দিয়ে জাগ দিলে পাটের দানা হয়না।জন খরচই উঠছে না তার পর আবার পাউডার দিয়ে জাগ দেয়া। নূন্যতম পাটের মূল্য ৩০০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা করা ও সার বীজ,কীটনাশকের দাম কমানো সহ জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সঠিক সময়ে দিলে কুষ্টা থেকে কুষ্টিয়া জেলার সেই অতীত কাল আাবার পুনরুদ্ধার হবে বলে এ কৃষক মনে করে।