ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

মাহবুব ইসলাম

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্ব গতিতে জীবন চালাতে হাসফাস 


মাহবুব ইসলাম  photo মাহবুব ইসলাম
প্রকাশিত: ১৬-৯-২০২৩ দুপুর ৪:২৭

মাহবুব ইসলাম 

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করতেছে। এমন  সময় দেখা মিলছে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্ব গতির। এটা ঠিক যেন মরার উপর খারাপ ঘা । দেশের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের দিন পার করতে হচ্ছে অর্থ সংকটে কাটছাট দিয়ে। সারাদিন খেটে সন্ধ্যার পর চায়ের দোকানে টেলিভিশনের পর্দায় যখন দেখছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহ রুপ কাটিয়ে উঠার কোন কিনারার আশ্বাস মিলছে না । কাট ছাট দিয়ে পেট পুজো করা মানুষগুলো তখন আরো নিরাশ হয়ে যাচ্ছে । এমন পরিস্থিতিতে দার দেনা করার সাহসটাও তারা হারিয়ে ফেলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সাথে খাপ খাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত। দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো চরম কষ্টে পড়েছে। আর নিম্নআয়ের  মানুষগুলোর অবস্থা হয়ে উঠছে আরও অবর্ণনীয়। অর্ধাহারে, অনাহারেই দিন কাটাতে হচ্ছে হতদরিদ্র মানুষগুলোকে।  বেশ কিছুদিন আগেও বাজারে যে দ্রব্যমূল্য ছিল যেমন  ১০০ টাকায় ১ কেজি তেল ,  চাউল পাওয়া যেত ৩৫ টাকা কেজি , গরীবের মাংস খ্যাত ডিমের হালিটাও ছিল ৩০ টাকা, আর আলু কেজিতে ১৫ টাকা এইসব যেন রুপকথার কল্প কাহিনী হয়েই জায়গা করছে মানুষের মনে। 

দেশের এমন পরিস্থিতিতে কাটছাট দিয়ে নিজের সংসার চালানো শ্রমিক সুমন মিয়ার সাথে কথা হয় তিনি জানান : সকাল ৬ বাজতেই কাজে হাজির হই, ঘুম থেকে উঠতে হয় আরও আগে। সারাদিন কাজ করি ডিউটি শেষ হয় সন্ধ্যা ৬ টায়। দৈনিক বেতন ৬০০ টাকা মাসে মোট তা পরে ১৮ হাজার টাকা। আমার দুইটা বাচ্চা আছে ওদের একটা স্কুলে ভর্তি করছি। সারা মাস কাজ করি সকাল থাইকা একদম সন্দ্যা পর্যন্ত বেতন  পাইলেই ঘর ভাড়া সহ যত  মাসিক খরচ আছে সব দেওয়ার শেষ করলে থাকে যা টাকা ঔটা দিয়া সারা মাসের বাজারই চলে না । বাজারে গেলেই মনে করেন যাই কিনতে যাই আগুন বরাবর দাম এক একটার। কি কিনব? নিজেই একটা বেবাছেকার মধ্য পইরা যাই । একাটা ভালা মাছ কিনতে গেলে লাইগা যাব ৩০০ টাকা আবার এর সাথে তরকারিও নিতে হয় ধরেন ১ কেজি আলু কিনলেও বড় টা ৫০ টাকা নেয়। তেল এক কেজি ১৯০ টাকা। ১৮ হাজার টাকা আমাদের মত মানুষের জন্য এক মাসে অনেক টাকা।  কিন্তু জিনিসের দাম এত বাড়ার কারনে মাস পার করতে পারি না । ভাল মন্দ খাওয়ার কথা বাদ দিলাম । সাধারণ ভাবেই চলা অনেক কষ্ট হয়। এহন কি করমু বলেন? বাধ্য হইয়া অবারটাইম করতেছি শুক্রবারে । যাই কিছু হোক মাস শেষে কিছু ত আসে । একটা দিন ছুটি কাটালে নিজেরে বিশ্রাম দিলে চলা কষ্ট হয়ে যায় ।

কথা হয় আরেক শ্রমিক শফিকুল ইসলামের সাথে । যিনি দিনাজপুর জেলা থেকে পরিবার নিয়ে একটু সচছল ভাবে চলার জন্য  ঢাকায় পারি জমিয়ে ছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে । এসেই একটা কাজ শুরু করেন তার বেতন মাসিক  হিসেবেই পায়। আগে পেত ১২০০ হাজার টাকা । চার সদস্যের সংসার চালাতে কষ্ট হলেও একটা আশা বুকে পুষন করত। কিছু দিন পর পদোন্নতি হয়ে বেতন বাড়বে তখন ভাল ভাবে চলতে পারব। সময় পার হতে হতে এখন শফিকুলের পদোন্নতি হয়েছে সাথে বেতনটাও বেড়ে ১৮০০ হয়েছে। কিন্ত শফিকুলের বেতনের উন্নতির সাথে সাথে দেশের দ্রব্যমূল্যের ও লাগামহীন উন্নতি হয়। এত উন্নতির মাঝে তার অবস্থার আরও অবনতি দেখা দেয় । সন্তানদের স্কুলে ভর্তিতে খরচ বেড়ে যায় । এদিকে তিনি যেখানে থাকেন সেখানে বাসা বাড়াও ছিল বেশি তাই  উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে পরিবারকে নিজের থেকে দূরে সাভারে পাঠিয়ে দেয় । সেখানে সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করান । এইদিকে শফিকুল পরিবারের সাথে সময় দেওয়ার ইচ্ছেটা মাটিচাপা দিয়ে বাড়তি কিছু আয়ের আশায় ছুটির দিনেও কাজ শুরু করেন।

 সুমন মিয়া ও শফিকুলের মত এমন বহু শ্রমিক, দিনমজুর এবং মধ্যবিত্তদের জীবন আজ দূরভিসহ হয়ে পরেছে দ্রব্যমূল্যর লাগামহীন উর্ধ্বগতির জন্য  । এক আল্লাহ্‌র সাহায্য কামনা করে তারা প্রতিনিয়ত দিন পার করছে ।

 

Sunny / Sunny