জবি শিক্ষক সমিতি: আশ্বাস বাস্তবায়নের চেয়ে প্রশাসনিক পদ দখলেই গুরুত্ব
গত বছরের ২১ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. একে এম লুৎফর রহমান নির্বাচিত হন। প্রায় এক বছর পার হলেও শিক্ষকদের কল্যাণে উদ্যোগ গ্রহণের চেয়ে সাংগঠনিক ঢাল ব্যবহার করে প্রশাসনিক পদ-পদবী পাওয়া, প্রভাব বিস্তার সহ নানাবিধ কর্মকান্ডেই ব্যস্ত সময় পার করেন শিক্ষক সমিতি।
গবেষণা কিংবা একাডেমিক কাজ নয় বরং পছন্দের ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ পাইয়ে দিতে এবং ব্যাক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিগত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ও সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে বার বার অনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
গতবছর নির্বাচনের পূর্বে চটকদার ইশতেহারের ঘোষণা দিলেও অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি শিক্ষক সমিতি। আর বাস্তবায়ন করা অনেক বিষয়ে রয়েছে আবার শুভংকরের ফাঁকি। খোদ শিক্ষকরাই শিক্ষক সমিতির বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে বার বার বিব্রত হয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষক লাউঞ্জ চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও সেখানে খাবারের দাম করে রাখা হয়েছে আকাশচুম্বী। অস্বাভাবিক দামের পেছনেও শিক্ষক সমিতিরই কতিপয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগও উঠেছে বার বার৷ নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক দাবি করলেও গতবছর সাদা দলের সাথে আঁতাত করে নির্বাচনে অংশ নেয় আইনুল-লুৎফর প্যানেল। যার ফলে সাদা দল অর্থাৎ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের বিভিন্ন শর্ত রক্ষা করেছে শিক্ষক সমিতির বর্তমান নেতৃবৃন্দ। যেটিকে আদর্শ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাওয়ার সমান বলে মনে করেছেন অনেক শিক্ষক।
ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও সেটিই এখন পর্যন্ত অকার্যকর।
অপরদিকে এবছর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ইস্যুতে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় গুচ্ছে থাকার যুক্তি তুলে ধরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ওপর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম লুৎফর রহমান ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়৷
খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সামনে একজন শিক্ষকের ওপর সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতির নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনায় দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজও গায়বে করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের বাসায় গিয়ে মাফ চাওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম লুৎফর রহমান।
ইশতেহারের অন্যতম আশ্বাস ছিল টারিনটিন সফটওয়্যারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ৷ তবে বছর পার হতে চললেও গবেষণার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিই বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ শিক্ষক সমিতি। অনেক শিক্ষক ব্যক্তিগত খরচেই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছেন। উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালুর ঘোষণা দিলেও এটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
আশ্বাস আর বাস্তবায়নের দৌড়ে শিক্ষক সমিতি পিছিয়ে থাকলেও পিছিয়ে ছিলনা প্রশাসনিক পদ দখলের দৌড়ে৷ উপাচার্য আর কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে আগ্রাসী আচরণ করেন শিক্ষক সমিতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক হাসপাতালের আইসিউতে থাকাকালীন সময়েও সিন্ডিকেট সভা পেছানোর দাবিতে হাসপাতালেই কয়েকদফায় বিবৃতি পাঠায়৷ উপাচার্যের অসুস্থতাকালীন সময়ে আরও কয়েকটি বিষয়েও বারবার দাবি জানানোর মাধ্যমে তার পরিবারকেও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে চরমভাবে সমালোচিত হয় শিক্ষক সমিতি।
অসুস্থতার সময়ে নানা দাবিতে চাপ প্রয়োগ করলেও মারা যাওয়ার পর তাকে দাফনের সময় শিক্ষক সমিতির কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ প্রয়াত উপাচার্যের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত শোকসভা ফেলে আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত হয় শিক্ষক সমিতি। প্রয়াত উপাচার্য ইমদাদুল হকের মেয়ে তাসলিম হক মোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকসভায় শিক্ষক সমিতির এহেন কর্মকাণ্ডে চরম বিরক্তিও প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে একাডেমিক কার্যক্রম ফেলে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ধর্না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ যেন দ্বিতীয়বার দায়িত্বে আসতে না পারেন সেজন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাকে বিতর্কিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে শিক্ষক সমিতি। যার ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে কথিত নানা অভিযোগ উথ্বাপিত করে কয়েক দফা সাংবাদিক সম্মেলন করেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিকরা শিক্ষক সমিতির এসব দৌরাত্ম্যের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে তাদেরকে মামলার হুমকি দেন অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে ফাইট দিতে তিনি ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দায়িত্ব নেননি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের সাথে তুচ্ছ বিষয়ে সবার সামনেই উচ্চবাচ্য করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষক সমিতি নিজদের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যস্ত। সিন্ডিকেট সভা দ্রুত আয়োজন করার দাবি জানানোর বিপরীতে তারা আরও এটিকে পেছানোর দাবি জানান ব্যক্তিগত স্বার্থে৷ নেতৃবৃন্দ কখন কি করে তা অন্যান্য শিক্ষকরা জানতেই পারেনা৷
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আশ্বাসগুলো বাস্তবায়নে। কিছু বিষয় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। একেবারে পুরোপুরি কাজ করতে পেরেছি সেটা নয়।
সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একে এম লুৎফর রহমান বলেন, আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। তবে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি দাবি বাস্তবায়নে।
এমএসএম / এমএসএম
ইবি'র ৪৭তম জন্মিদনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী অবন্তির ভাবনা
জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমনের ভাবনা
ছাত্রদলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের সাপ্তাহিক স্কুল উদ্বোধন
শেকৃবিতে নিয়োগে আওয়ামী পুনর্বাসন, এলাকাপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ
উত্তরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন
জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবে সাংবাদিক সম্পদ
দীর্ঘ তিন যুগ পর জাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিল
জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবিরের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
জকসু নির্বাচন: ছাত্রদল সমর্থিত "ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান" প্যানেল ঘোষণা,
এইচএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ
বাকৃবিতে প্রিসিশন ব্রিডিং-ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা