নেত্রকোণা-৫ আসনে প্রচারণায় এগিয়ে নৌকা বাকিরা চলছেন ঢিমেতালে
দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। চালাচ্ছেন গণসংযোগ। চাইছেন ভোট, তবে নেত্রকোনা- ৫ (পূর্বধলা) আসনে নৌকা প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। বলতে গেলে, মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার গণসংযোগেই নির্বাচনের আমেজ তৈরি হয়েছে। এছাড়া পোস্টার, হ্যান্ডবিল এবং অন্যান্য প্রচারণা কার্যক্রমেও একক আধিপত্য বজায় রেখেছে নৌকা। অবশ্য বেশকিছু জায়গায় অবস্থান রয়েছে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এমন প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ এলাকার সাধারণ মানুষজনও বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই নৌকা মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের কোনো প্রার্থীই তাদের কাছে আসেননি।
মূলত, হোগলা, ঘাগড়া, জারিয়া, ধলামূলগাঁও, পূর্বধলা, আগিয়া, বিশকাকূনী, খলিশাউড়, নারান্দিয়া, গোহালাকান্দা, বৈরাটি এই ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসন।
এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে যারা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা-৫ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচাই-বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন পাঁচজন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন, ড. আনোয়ার হোসেন, মাজহারু ইসলাম সোহেল, ওয়াহেদুজ্জামান আজাদ, আব্দুল ওয়াহহাব হামিদী।
এরমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী বীর মুক্তিযুদ্ধা আহমদ হোসেন নৌকা মার্কা, জাতীয় পার্টি মনোনীত এমপি প্রার্থী ওয়াদুজ্জামান আজাদ লাঙ্গল মার্কা, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী আব্দুল ওয়াহহাব হামিদী সোনালী আঁশ মার্কা, স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আনোয়ার হোসেন ঈগল পাখি মার্কা, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম সোহেল ট্রাক মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
সরেজমিনে যেমন দেখা গেল নির্বাচনী মাঠ নেত্রকোণা-৫ আসনে তিনটি রাজনৈতিক দলের তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় টিকিট পেয়েছেন, তাদের সাথে লড়বে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে ভোটগ্রহণে আর বেশিদিন বাকি না থাকলেও মাঠে নৌকা, লাঙ্গল ও ট্রাক মার্কা প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে। অবশ্য কয়েকজন প্রার্থীও নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে সীমিত কার্যক্রমের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়,শ্যামগঞ্জ,জারিয়া পূর্বধলাসহ নেত্রকোণা-৫ আসনের আওতাধীন এলাকার অধিকাংশ জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল সড়কেই ঝুলছে পোস্টারে। প্লাস্টিকের দড়িতে পোস্টার লাগিয়ে লম্বালম্বিভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে, রাস্তার একপাশ থেকে অপরপাশ পর্যন্ত। এসব পোস্টারের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আহমদ হোসেনের পোস্টারই প্রায় ৬০ শতাংশ। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে অন্যকোনো প্রার্থীর পোস্টার তেমন দেখা যায়নি।
আবার কিছু এলাকায় জাতীয় পার্টির ওয়াহিদুজ্জামান আজাদ লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম সোহেলের ট্রাক মার্কার, ড. আনোয়ার হোসেনের ঈগল পাখি মার্কার পোস্টারও দেখা গেছে। এর বাইরে গণসংযোগ কিংবা মাঠে ময়দানে কাজ করার ক্ষেত্রেও নৌকার তুলনায় অন্য প্রার্থীদের সরব অবস্থান দেখা যায়নি। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নেত্রকোনা-৫ আসনের আওতাধীন এলাকায় গণসংযোগে একক আধিপত্য ধরে রেখেছেন নৌকার আহমদ হোসেন। প্রতিদিনই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নেত্রকোণা-৫ আসনের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাচ্ছেন তিনি। দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি,পাচ্ছেন যথেষ্ট সাড়াও। আহমদ হোসেন কে দেখেই অধিকাংশ সড়কে তৈরি হয় জটলা। মানুষজন দাঁড়িয়ে যান ছবি কিংবা সেলফি তোলার জন্য।
নৌকার পর প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজারুল ইসলাম সোহেল। পূর্বধলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানানোসহ তিনি অংশ নিয়েছেন গণসংযোগেও। রোববার বিকেলে পূর্বধলায় পথসভা এবং নির্বাচনী প্রচারণাও চালান তারা।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে এমন মন্তব্যও করেন অনেকে।আন্দা এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো পূর্বধলা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। মানুষজন ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। প্রচার-প্রচারণায় অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে নৌকার প্রার্থী এগিয়ে আছেন। অধিকাংশ দিনই আমরা নৌকার প্রার্থীকে এলাকায় দেখতে পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে উন্নয়নের যে জোয়ার বইয়েছেন সেটি অব্যাহত রাখার জন্য নৌকার বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যাশা করি বিপুল ভোটে নেত্রকোণা-৫ আসনে আহমদ হোসেন জয়লাভ করবেন। এই আসনে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহিংসতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি আমরা দেখিনি।
সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, রাস্তাঘাটে নৌকার প্রার্থীর গণসংযোগ এবং প্রচার-প্রচারণা ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়েনি। আমাদের-২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা ভোট চাইতে এসেছিলেন। অন্য কারো দেখা আমরা পাইনি।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের অশান্তি তৈরি না হোক, তেমনটি প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। নিজেদের অবস্থান নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে প্রার্থীরা জনগণের কাছে যাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। গণসংযোগ ছাড়াও উঠান বৈঠক, পথসভায় মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।
নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী আহমদ হোসেন বলেন, আমি সব দলের এমপি হতে চাই,পূর্বধলা আওয়ামী লীগ আজ এক হয়ে গেছে,জাতে মাতাল তালে ঠিক তার নাম আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এই আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। উৎসবমুখর পরিবেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আচরণবিধি মেনে শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাব। জয়ের বিকল্প কোনো কিছু নেই। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করার।
এমএসএম / এমএসএম