ঢাকা সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পালিয়েছেন ৩০ ব্যবসায়ী


সুমন চক্রবর্ত্তী photo সুমন চক্রবর্ত্তী
প্রকাশিত: ২৭-১-২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

চট্টগ্রামের অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছেন। এসব ব্যবসায়ীর কাছে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা ইউরোপ, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

এসব ব্যবসায়ী ভোগ্যপণ্য, শিপ ব্রেকিং, গার্মেন্টস, আবাসন, কৃষি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগের কথা বলে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছেন, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩০ জনের বেশি উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, 'তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। এছাড়া আরও অন্তত ২০ জন আছে,যাদের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধ না করায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।' অর্থঋণ আদালত সূত্র জানায়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দুবাইয়ে বসবাস করছেন ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী জেবুন্নেসা আক্তার। দুবাই থেকে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপের একাধিক মামলা রয়েছে। গত ২১ মে অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান  এ নির্দেশ দেন। নব্বইয়ের দশকে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বাজারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতো তাদের প্রতিষ্ঠান ইমাম ট্রেডার্স। পরে গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয় গার্মেন্টস, যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা খাতে। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বেশিরভাগ বিনিয়োগ হয়েছে জমি কেনায়।

বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ‘ঋণের বিপরীতে কোনও সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় টাকাগুলো আদায় করা যাচ্ছে না। তাই দুবাইয়ে থাকা ওই ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশে বিচারক বলেছেন, দেশের অর্থ পাচার করে দুবাইয়ে নানা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী। তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামে ১৫টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপের অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে। ১০ বছর আইনি লড়াই চালিয়েও ওই টাকা উদ্ধার করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করার মাধ্যমে এই ঋণ খেলাপিরা রাষ্ট্রের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। দীর্ঘ এক যুগ ধরে এই শীর্ষ ঋণ খেলাপিরা কোনও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংকের বিনিয়োগ খাতে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নাগরিকদের আমানতের টাকা ঋণের নামে মুষ্টিমেয় দুষ্কৃতকারীর বিদেশে পাচার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমানতের অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

এদিকে, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে আত্মসাতের দায়ে সিলভিয়া গ্রুপের মালিক মুজিবুর রহমান মিলনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত দণ্ডিত আসামিকে ১০০ কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ এই রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় মিলন পলাতক ছিলেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, অগ্রণী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সিলভিয়া গ্রুপের মালিক মুজিবুর রহমান মিলন তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যান। সিঙ্গাপুরে পলাতক মুজিবুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকরে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের কপি স্বরাষ্ট্র সচিব,অর্থ-সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবরে পাঠানো হয়। 

এছাড়া সীতাকুণ্ডের শাহ আমানত আয়রন মার্টের গিয়াস উদ্দিন কুসুম ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ শোধ না করে ২০১৫ সাল থেকে লাপাত্তা। পাশাপাশি ৫২৫ ঋণ পরিশোধ না করে ২০১৭ সালে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন লিজেন্ড হোল্ডিংয়ের স্বত্বাধিকারী এস এম আবদুল হাই। একইভাবে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ শোধ না করে ২০১৮ সালে কানাডায় পাড়ি জমান বাদশা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইশা বাদশা। একই পরিমাণ ঋণ শোধ না করে ২০১৯ সালে বিদেশে পালিয়েছেন নাম করপোরেশনের কর্ণধার আব্দুল আলিম চৌধুরী। 

এসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে সম্প্রতি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত মামলার আদেশে বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে আদালতের এখতিয়ারের বাইরে চলে যাওয়ায় এমন বহু সংখ্যক ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থপাচারকারী ও ঋণখেলাপিরা বিদেশে বসে বছরের পর বছর মামলার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে অর্থঋণ আদালত আইনে মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা থাকলেও নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনি কাঠামোর দুর্বলতার কারণে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমে ব্যর্থ হতে হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতির ওপর। 

এসব ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী পান্না চক্রবর্ত্তী বলেন, ব্যাংকের বেশ কিছু ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিছু কিছু ব্যবসায়ী পরিশোধ না করেই বিদেশে পালিয়েছেন। যে কারণে ব্যাংক ঋণ আদায়ে মামলা করলেও টাকা আদায় করা যাচ্ছে না।

এমএসএম / এমএসএম

মৃত্যুর এক বছর পর কবর থেকে শিশুর লাশ উত্তোলন

নরসিংদী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আইন উপদেষ্টা

শান্তিগঞ্জে মানসিক রোগীর লাশ উদ্ধার

রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের সুরক্ষার ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষার ওপর একশনএইড এর গবেষণা

রাণীনগরে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে শিক্ষক বরখাস্ত

চৌগাছায় কৃষকদের মাঝে মাষকলাই বীজ ও রাসয়নিক সার বিতরন

কমপ্লিট শাটডাউনে পবিপ্রবি বরিশাল ক্যাম্পাস

বারহাট্টার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান খান রেজভীর চেহলাম অনুষ্ঠিত

খোলা চিঠি লিখে যুবকের আত্মহত্যা, প্রেমঘটিত কারণে হতাশা

বরগুনার পাথরঘাটা বিএনপির সাবেক এমপির উপর হামলায় সাত আসামীর জামিন নামঞ্জুর

অভিভাবকসুলভ প্রধান শিক্ষক মোছা’র বিদায়: ১৬ বছরের সোনালি অধ্যায়ের সমাপ্তি

দেশে প্রথম কলা গাছের তন্তু দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও মাশরুম উদ্ভাবন

বাঘায় ৪৫ বছরে সাড়ে ৩'শ অধিক কবর খুঁড়েছেন দুলাল ও রতন