আবুল খায়ের গ্রুপের গুঁড়ো দুধ চুরি
শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা,অধরা মূলহোতা

চট্টগ্রামে আবুল খায়ের গ্রুপের আমদানি করা গুঁড়োদুধ চুরির ঘটনায় শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠেছে। চোর সিন্ডিকেটের মূলহোতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ২/১ জন চুনোপুটি আটক করে বিষয়টি নিস্পত্তি করার চেষ্টা চলছে। আবুল খায়ের গ্রুপের প্রভাবশালী একাধিক কর্মকর্তা, গোডাউনের সিকিউরিটি সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট এই চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে। মূলহোতারা নিজেদের রক্ষা করতে ’উদোর পিণ্ডি বুধোর’ ঘাড়ে চাপিয়ে দায় এড়াতে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানা যায়, খুলশী থানা অভিযান পরিচালনা করে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা/সমালোচনার জন্ম দেয়। খুলশী থানাধীন আবুল খায়ের গ্রুপের গুদাম থেকে তাদের মালামাল চুরি, চোরাই পণ্যসহ চোর গ্রেপ্তার শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানার আবুল খায়ের গ্রুপের গোডাউন থেকে চুরি হওয়া ২৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার মালামাল (আমদানি করা গুঁড়ো দুধ) উদ্ধারসহ মো. সাজ্জাদ হোসেন দুলাল (২৮) নামের এক চোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত দশটায় নগরীর বায়েজীদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকা থেকে খুলশী থানা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় চুরি করা পণ্যভর্তি একটি কার্ভাডভ্যানও জব্দ করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন দুলাল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার হাটহাজারী পৌরসভার ১১ মাইল সুধানগর গ্রামের মৃত মো. সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের পুত্র। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় খুলশী এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুপের গোডাউন থেকে ২৫ কেজির ২৪১ বস্তা গুঁড়ো দুধ চুরি হয়। যার মূল্য ২৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রাথমিকভাবে খবর পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযু্িক্তর সহায়তায় আসামীকে চিহ্নিত করে শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে অক্সিজেন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ফটিকছড়ি থানার নানুপুর বাজার এলাকার একটি গোডাউনের ভিতর থেকে কার্ভাডভ্যান (চট্টমেট্টো -ট-১১-৫১-৯৪) র্ভতি অবস্থায় পাওয়া য়ায়। মূলত গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন দুলাল একজন পেশাদার চোর। এ ঘটনায় ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে খুলশী থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন দুলালকে ওই মামলায় দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আবুল খায়ের গ্রুপের গোড়াউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় বেশ কিছুদিন ধরে আমদানি করা গুঁড়ো দুধ চুরি হয়ে আসছিল। এই পরিকল্পিত চুরি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠছে গোডাউনের দ্বায়িত্বে থাকা প্রভাবশালী কর্মকতাদের বিরুদ্ধে। কারণ আবুল খায়ের গ্রুপের খুলশী গোডাউনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ২৪ ঘন্টা সিকিরিউটি গার্ড দায়িত্ব পালন করে। তাছাড়া পুরো গোডাউন এলাকা সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। তার পরেও একজন ড্রাইভার কিছু লোক নিয়ে বড় একটি কার্ডাডভ্যান ভর্তি গুঁড়োদুধ চুরি করতে পারে তা খবর প্রচারের পর জনমনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
আবুল খায়ের গ্রুপের আমদানি করা গুঁড়ো দুধ চুরির সাথে গ্রুপেরই একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন এই গোডাউনের পণ্য চুরির সাথে বড় কেউ জড়িত না থাকলে এভাবে প্রকাশ্যে কাভার্ডভ্যান ভর্তি কওে চুরি করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
জানা য়ায় খুলশীর এই গোডাউন হতে বেশ কয়েকবার গুঁড়ো দুধ পাচার করা হলেও কারো কোন খবর ছিলনা । চুরি হওয়া পণ্যগুলো যে কাভার্ডভ্যানে লোড করা হয়েছে ওখানের এক লেবার বুঝতে পারে গুঁড়ো দুধগুলো আসলে পাচার করা হচ্ছে। ওই লেবার কিছু গণমাধ্যমকর্মীকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনার সত্যতা যাচাইরে জন্য গুঁড়ো দুধ ভর্তি কাভার্ডভ্যানটির গতিবিধি নজরদারি করতে থাকে থাকে । এক পর্যায়ে কাভার্ডভ্যানটি খুলশী গোডাউন হতে চোরাই মাল ভর্তি করে নগরীর পলিটেকনিক্যাল মোড় হয়ে উল্টো ঘুরে সেনাকল্যাণ রোড় দিয়ে হামজারবাগ হয়ে অক্সিজেন মোড় ক্রস করলে গণমাধ্যমকর্মীদের মনে কৌতুহল বেড়ে যায়। যেহেতু লেবার বলেছিল এই গাড়ি ফটিকছড়ি কোন এক স্থানে যাবে। গাড়িতে কোন চালানও নাই। কথাটা তারা কামাল মাঝির মুখে আগেও শুনেছে এইবারও হয়তো ফটিকছড়ির দিকে চোরাই মালগুলো নিয়ে যাবে।
কার্ভাডভ্যান (চট্টমেট্টো -ট-১১-৫১-৯৪) র্ভতি অবস্থায় চোরাই মাল কিনা সত্যতা যাচাই করার জন্য একজন সংবাদকর্মী হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচাজকে ফোন করেলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন জানালে কয়েকজন সংবাদকর্মী মোটর সাইকেল যোগে কর্ভাডভ্যানের পিছু নেয়। কোন এক রহস্যের কারনে পরবর্তীতে কাভার্ডভ্যানের নাম্বার এবং গাড়িটি হাটহাজারীর কাছাকাছি যাচ্ছে ফোন করে জানালেও হাটহাজারী থানা কাগজপত্র এবং সঠিক ইনফরমেশন ছাড়া গাড়ি চেক করবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
গণমাধ্যমকর্মীরা কার্ভাডভ্যানটির ভিডিও ফুটেজ নিয়ে রাখে। গাড়ির পিছনে এবং সামনে দুইটি মোটর সাইকেল যোগে পাহারা দিয়ে মালামাল গুলো নিয়ে যাচ্ছিল পাচারকারী চক্রটি। পিছনের পাচার চক্রের একজনকে থামতে বললে তিনি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
গণমাধ্যম কর্মীরা ভিডিও ধারণ করার ব্যাপাটি বুঝতে পারায় প্রভাবশালী কর্মকর্তারা ধরা পড়ার ভয়ে নিজেরাই চুরি হয়েছে বলে আইনের আশ্রয় নিয়েছে। পাচার চক্রের সদস্য ড্রাইভারকে প্রাশাসনের কাছে তুলে দিয়ে শক্তিশালী চক্রটিকে বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানা যায়।
জানা যায়, কার্ভাডভ্যান ( চট্টমেট্টো Ñট-১১-৫১-৯৪) গাড়িতে প্রায় ৫৫০ বস্তা গুঁড়ো দুুধ পাচার করা হয়েছে শুক্রবার রাতে । কিন্তু উদ্ধার করা হয়েছে ২৪১ বস্তা। ৫৫০ বস্তা গুঁড়ো দুধের আনুমানিক মূল্য ৬৫লাখ টাাকার মতো। কিন্তু উদ্ধার হওয়া পণ্যের বাজার মূল্য ২৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার মতো।
অনুসন্ধানে উঠে আসে একটি শক্তিশালী পাচার চক্রের বিষয়টি। এই পাচার চক্র খোদ আবুল খায়ের গ্রুপের উচ্চপদের কিছু কর্মকতার্র সরাসরি ইন্ধন রয়েছে বলে জানা যায়। জানা যায়, এই সক্রিয় পাচারচক্র বিভিন্ন সময় আবুলখায়ের গ্রুপের গোডাউন হতে অস্থায়ী লেবার ১ ঘন্টার চুক্তিতে নিয়ে গিয়ে গুঁড়ো দুধ পাচার কাজ করে আসছিল। অস্থায়ী চুক্তিতে চোরাই পণ্য গাড়িতে লোড করা এক লেবার জানায়, কামাল মাঝি নামের একজন তাদের প্রায় সময় ভাড়া করে নিয়ে যেতো।ওইদিনও নিয়েছে। এই পাচার চক্র একটি শক্তিশালী চক্র। এই পাচার চক্রের সাথে জড়িত আছে খুলশীর আবুল খায়ের গ্রুপের গোডাউনে কর্মরত অনেকেই। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও এই পাচার কাজে সহায়তা করেন বলে জানা যায়। স্থানীয় প্রসাশন ও কয়েকটি থানাকে ম্যানেজ করে তারা এই পাচার কাজ করেন বলেও জানান শ্রমিকেরা।
জানা যায়, এক কার্ভাডভ্যান মালামাল পাচার করার জন্য ড্রাইভার ৫ লাখ টাকা , কামাল মাঝি ২ লাখ ৫০ হাজার, প্রভাবশালী এলাকার লোকজন প্রায় ৫ লাখ টাকার ভাগ নেয়। এলাকার আরো প্রভাবশালী ৪-৫ জনের একটি চক্র এই পাচার কাজে জড়িত আছে বলে জানা যায়। আবুল খায়ের গ্রুপের খুলশী গোডাউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের যোগসাজশের ব্যাপারে অভিয়োগ উঠে আসে অনুসন্ধানে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রায় সদস্য এই প্রভাবশালী পাচার চক্রের কাছে অসহায় বলেও জানা যায়।
চুরির বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবুল খায়ের গ্রুপের দুই কর্মকর্তা জানান ,আবুল খায়ের গ্রুপের গোডাউন অনেক বড় , ওখান থেকে পাঁচশ বা এক হাজার বস্তা চুরি হলেও বুঝার উপায় থাকেনা কিন্তু বছর শেষে আমাদের হিসেবে ঠিকই চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে । পাচার চক্রের সাথে অফিসের কোন কর্মকতা জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তারাও স্বীকার করেন অফিসের মানুষ জড়িত না থাকলে বাইরের মানুষ কোনভাবেই এমন কাজ করার সুযোগ পাবেনা।
আবুল খায়ের গ্রুপের অফিসার এইচআর (এডমিন) ইমরুল এবং সহকারি ম্যনেজার আনিসুর রহমান বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে সন্দেহ করছিলাম এখানে এমন কিছু হচ্ছে। এবার চুরির বিষয়টি ধরা পড়লো। আমরা আমাদের সুরক্ষার জন্য কাজ করব যাতে এই রকম আর কোন চুরি না হয়। বাকীটা প্রসাাশনের কাজ ।
এমএসএম / এমএসএম

জয়পুরহাটে গ্রাম আদালত বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ঝালকাঠিতে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

মেঘনায় স্পিডবোট ডুবি, অক্ষত উদ্ধার ২৮ যাত্রী

বিয়ানীবাজারে প্রবাসী জামায়াত কর্মীকে হত্যার হুমকি

ত্রিশালে ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু

মেহেরপুরে কাব কার্নিভাল ২০২৫ এর উদ্বোধন

বারইয়ারহাটে আন্ডারপাস অথবা ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

বাঘায় বিশেষ অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ আটক ৫

সিংগাইরে শ্রেষ্ঠ ওসি তৌফিক আজম, ওয়ারেন্ট তামিলে এএসআই জলিল পুরস্কৃত

চুয়াডাঙ্গায় কেরুজ পুকুরে বিদ্যুতায়িত জিআই তারে কৃষকের মৃত্যু

পঙ্কিল রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে আনবেন না: শিক্ষা উপদেষ্টা

কুতুবদিয়ায় তিন দিনে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
