চৌদ্দগ্রামে সন্ত্রাসী মহড়া দিয়ে ভাইয়ের জমি দখলের চেষ্টা
পৈতৃক সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেয়েও ভাইয়ের জমি জোর করে দখলে নেয়ার চেষ্টায় বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীর মাধ্যমে এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের শামুকসার গ্রামের শামসুল হক ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে। শামসুল হকদের সশস্ত্র মহড়ায় ভুক্তোভোগী পরিবারসহ স্থানীয়রাও চরম আতঙ্কে রয়েছেন। এতে খুন-খারাপির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার সদর দক্ষিণ থানা ও চৌদ্দগ্রাম থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। সদর দক্ষিণ থানায় করা জিডি নং-৬২৯। অন্যদিকে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশও সরেজমিন তদন্ত করে আদালতে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টনের পূর্বেই চৌদ্দগ্রাম থানাধীন কালিকাপুর মৌজার ৪০ শতক সম্পত্তি গোপনে ছেলে মামুনুর রশীদের নামে বিগত ২০০৮ সালের ৩১ অক্টোবর দান দলিল (নং-১৮৬৭) দিয়ে রাখেন শামসুল হক। অথচ আপোষ বন্টন হয় ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল এবং বন্টন অনুযায়ী শামসুল হক তার পৈত্রিক সম্পতি থেকে প্রাপ্য অংশের ৩৩ শতকের মধ্যে গোয়ালগাঁও মৌজার ১৫ শতক ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল সাব-কবলা মূলে হুমায়ুন কবিরের কাছে বিক্রি করে। যার দলিল নং-৩৭৫৩। একই মৌজার অন্য আরেকটি দাগেও আরও ৮ শতক জমি ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল সাব-কবলা দলিল (নং-৩৭৮২) মূলে বিক্রি করে। এছাড়াও লালবাগের বসতভিটা ছেড়ে শামুকসার গ্রামে বসতি গড়ে তুলতেও শামসুল হককে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য দরবারীদের দেয়া সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৭৫ হাজার টাকা দেন হুমায়ুন কবির।
জমির কাগজপত্র, মামলা, পুলিশ প্রতিবেদন ও চৌদ্দগ্রাম ভূমি অফিসের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা যায়, কালিকাপুর মৌজার বিরোধীয় ৪০ শতক জমির ১০ শতকে শামসুল হকের বসতবাড়ী এবং এর উত্তরাংশের ৩০ শতকের মালিক ও ভোগদখলকারী হুমায়ুন কবির ও তার ছেলে আল-আমিন। যার আরএস খতিয়ান নং-৩০, বিএস খতিয়ান নং-৫৫ এবং ১৩৪/১৫০ জমা খারিজ খতিয়ানভুক্ত সাবেক ১০৬/২৯১ বাট্টা দাগ বিএস ১৫৬ দাগের ৪০ শতকের ৩০ শতকই হুমায়ুন কবিরদের দখলে রয়েছে। পক্ষান্তরে হুমায়ুন কবিরের ভাই শামসুল হক ও তার ছেলে মামুনুর রশিদ ওই জমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে হুমায়ুন কবিররা একটি দেওয়ানি মামলা (নং-৪০/২০১৯) এবং কুমিল্লার আদালতে আরেকটি পিআর মামলা (নং-৫৮৩/২০২১) করেন। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আবেদনের বিষয়টি করোনায় সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অপেক্ষমাণ রয়েছে বলে জানান মামলার আইনজীবী।
ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির ও প্রবাসে থাকা তার বড় ছেলে আল-আমিন বলেন, ‘তারা (শামসুল হক ও তার ছেলেরা) মামলার বিচারিক প্রক্রিয়াকে অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই আমাদের ওই জমি এখন নিজেদের দখলে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রবাসী আল-আমিন গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তার পরিবারকে শামসুল হক ও তার ছেলেদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হয়রানি থেকে রক্ষার আকুতিও জানান।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মুহাম্মদ মনির বলেন, ‘বণ্টনের আগে কোনোভাবেই দলিল দেয়ার সুযোগ নেই এবং এটা কেউ দিতে পারেন না। যদি দিয়েও থাকেন এই দলিলের কোনো ভিত্তি কিংবা গ্রহণযোগ্যতা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল হকের ছেলে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘তার বাবার দেয়া দান দলিলের ভিত্তিতেই তিনি জমির মালিকানা দাবি করছেন। এছাড়া এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে’।
এদিকে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের এএসআই মো: সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরেজমিন তদন্ত ও উভয়পক্ষের স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই প্রতিবেদন দিয়েছি। বিরোধীয় সম্পত্তি হুমায়ুন কবিরদের দখলেই রয়েছে’।
এমএসএম / জামান