চট্টগ্রামে ভুয়া ওয়ারিশ সেজে সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা

চট্টগ্রামে ভুয়া ওয়ারিশকে বৈধ সাজিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হজারী। তার বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ ইদ্রিস (৭০) নামের এক ব্যক্তির সম্পত্তি গ্রাস করতে তিনি এমন কূটকর্ম অবলম্বন করছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হলে তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়ার পর তদন্তে সত্যতা মিলেছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডি।
আদালতে দাখিল করা সিআইডির প্রতিবেদন সুত্রে জানা যায়, জহর লাল হাজারী স্বাক্ষরিত সজল চন্দ্র সেন (অনিল) নামে একটি ভুয়া ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করেন। সাথে একই ব্যক্তির জাল জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রও পাওয়া যায়। এতে তিনি খুলশি এলাকার সজল কান্তি সুশীল এর নাম পরিবর্তন করে সজল চন্দ্র সেন (অনিল)-এর নামে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করেন।
কাউন্সিলরের যোগসাজশে এ জাল-জালিয়াতির সাথে সজল কান্তি সুশীল (প্রকৃত) নিজেও জড়িত সিআইডি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে । তাদের এমন জুচ্চুরির কারণে ভুক্তভোগী মামলা-মোকদ্দমায় দীর্ঘ দিন ধরে টিকে থাকলেও প্রকৃত জমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
মামলার বিবরণ ও সিআইডি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাউন্সিলেরের যোগসাজশে ভুক্তভোগীর সম্পত্তি জাল-জালিয়াতি করে আত্মসাতের বিষয়টি সি আর মামলার (৪৭৫/২০২২/লোহাগাড়া) তদন্তে অপরাধের সত্যতা পাওয়া যায়। এতে সাজানো ওয়ারিশ জাল-জালিয়াতির চিত্রটি স্পষ্ট উঠে আসে।
ভুক্তভোগী ইদ্রিস চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মৌজায় বিএস ৭৫৩ খতিয়ানের ৩৫৪৫ দাগের আন্দর ০.০৫৬২ একর (৫.৬২ শতক) সম্পত্তির (বাড়ী) প্রকৃত মালিক। কোতোয়ালী সতীশ বাবু লেনে অবস্থিত এ সম্পত্তিতে তিনি দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশি ধরে দখলে আছেন। পূর্বে মূল মালিক ছিলেন সতীশ চন্দ্র সেন নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মরণে পুত্র (১) চন্দ্র শেখর সেন ওয়ারিশ হন।
চন্দ্র শেখর সেনের মরণে দুই(২) পুত্র-দেব প্রসন্ন সেন ও শক্তি প্রসন্ন সেন ওয়ারিশ বহাল থাকেন। ১৯৬৪, ৬৫ সালে তাদের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগে মামলা হয়। ৮৮৯২/৬৪-৬৫ নং ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট মামলায় তারা এ সম্পত্তি হারান। পরে নিলামে উঠেলে সর্বোচ্চ দর ধাতা (বিডার) বিমল চন্দ্র সেন ও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নামে দু’ব্যক্তি ১৯৬৬ সালে খরিদ করে (সমান ভাগে) এ সম্পত্তি ভোগ দখলে নেন।
২০০১ সালে বিমল চন্দ্র সেনের ওয়ারিশের কাছ থেকে ০.২৯ শতক ৩৯১৬ নং কবলা মূলে ইদ্রিস এ সম্পত্তি ক্রয় করেন। একই সালে সিরাজুল ইসলামের নিকট হতে ০.০২৯ শতক ৩৮৬৩ নং কবলা মূলে ক্রয় করে স্বত্ব দখলে নেন।
২০১২ তে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক উক্ত সম্পত্তি ভূল ক্রমে ( ক) তালিকায় অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত হলে, ইদ্রিস সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অর্পিত মামলা ১৯৮/১২ দায়ের করেন। তিনি ২০২০ সালে এ সম্পত্তির রায় ও ডিক্রিপ্রাপ্ত হন। সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে অর্পিত মামলা ৬৩/২০ দায়ের করলে নিম্ন আদালত এ রায় ও ডিক্রি বহাল রাখেন।
এ অর্পিত মামলার সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে আত্মসাৎ করতে কাউন্সিলর জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তিনি ২০১২ সালের সজল চন্দ্র সেন (অনিল) এর নামে ভুয়া জন্মসনদ সাজান। এ জন্মসনদের পরিচিত নং ১৯৭৭১৫৯৪১৩৪০১৪১৬১। এর সাথে সংযুক্ত করেন ছবি সংবলিত একই ব্যক্তির নামে জাল জাতীয় পরিচয় পত্রও। যার আইডি নং ১৫৯৪৩০৮১৩৫৬৩২।
তিনি সনদগুলো দিয়ে চট্টগ্রাম অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইবুনাল মামলা ৯৭/২০১২ দায়ের করেন। এ জাল-জালিয়াতি আদালতের নজরে না আসতে, কামাল উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে সজল চন্দ্র সেন অনিল (ভুয়া নাম) আমমোক্তার নামা (পাওয়ার) দেন। বর্তমানে কামাল উদ্দীন জীবিত নেই ।
এতে সজল চন্দ্র সেন (অনিল) এর পিতা দেখানো হয় সুবল চন্দ্র সেনকে। সুবল চন্দ্র সেনকে সতীশ চন্দ্র সেনের (পূর্ব মালিক) পুত্র দেখানো হয়। বাস্তবিকপক্ষে, সতীশ চন্দ্র সেনের পুত্র(১) ছিল শুধু চন্দ্র শেখর সেন। ২০১৬-তে এই মামলার রায় প্রচার করলে তফসীলোক্ত রায়ের মন্তব্যে সতীশ চন্দ্র সেনের মরণে সুবল চন্দ্র সেন মালিক হওয়ার পিছনে কোন দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি সজল চন্দ্র সেন অনিল (ভুয়া নাম) ও কামাল উদ্দীন । এতে আদালত এ আপিল (৯৭/২০১২) খারিজ করে দেন।
কাউন্সিলর জাল-জালিয়াতি পূর্বক সুবল চন্দ্র সেনকে সতীশ চন্দ্র সেনের (পূর্ব মালিক) পুত্র ও সজল চন্দ্র সেন অনিলকে সুবল চন্দ্র সেনের পুত্র (ওয়ারিশ) সাজিয়ে একটি সনদ ইস্যু করেন। ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদসহ পুনরায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন ট্রাইবুনাল আপিল ৫০/২০১৬ দায়ের করেন। এতে আদালত অনিলের অনুকুলে এ সম্পত্তি অবমুক্তির নির্দেশ দেন। অনিল উচ্ছেদপূর্বক ডিক্রিদাতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেন। এরপর ইদ্রিস, সুবল চন্দ্র সেন (অনিলের বাবা), সতীশ চন্দ্র সেন-এর (পূর্ব মালিক) কোন পুত্র ছিলনা এবং সজল চন্দ্র সেন প্রকাশ অনিল একজন ভুয়া ব্যক্তি হিসাবে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন।
নির্বাচন কমিশন সার্ভারে আইডি নাম্বার-১৫৯৪৩০৮১৩৫৬৩২ তল্লাশি দিলে উঠে আসে এ জালিয়াতির চিত্র। সজল চন্দ্র সেন (অনিল)-এর নামের জায়গায় পাওয়া যায় সজল কান্তি সুশীলের নাম। পিতা -জ্ঞান্দ লাল সুশীল, মাতা-সাধনা বালা সুশীল, ভোটার নং ১৫১৬৩১১৩৫৬৩২। ঠিকানা-রূপসী হাউজিং সোসাইটি, টেকনিক্যাল রোড, খুলশী, চট্টগ্রাম।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন সার্ভারে ব্যক্তিগত পরিচিত নম্বর-১৯৭৭১৫৯৪১৩৪০১৪১৬১ সার্চ দিলে কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী এ জালিয়াতির বিরুদ্ধে আদালতে সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জালিয়াতির বিষয়ে অবগত হয়ে আসামীগণের দাখিলকৃত আপিল মামলা নং ৫০/১৬ ও প্রদত্ত রায় ১৮/১০/২১ খারিজ করে দেন।
অভিযুক্তরা এই জালিয়াতির বিচারে হেরে যাওয়ার পরেও ভুক্তভোগীকে হুমকি-ধমকি প্রদান ও সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একই এলাকার দুলাল চক্রবর্তী ও বিমল চক্রবর্তী নামে ভারতীয় নাগরিককে মৃত ধরনী ধর চক্রবর্তীর ওয়ারিশ সাজিয়ে সম্পত্তি হস্তগত করার প্রামাণ পাওয়া যায়। ওয়ারিশ সনদ ইস্যুর তারিখ ১৫-১১-২০১৬ ইং এবং জন্মসনদ ইস্যুর তারিখ ১৩-০৮-১৪ ইং। শ্রী বিমল চক্রবর্তী জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৫০১৫৯১৬৩২১০১৩৪৬। শ্রী দুলাল চক্রবর্তী জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৫২১৫৯১৬৩২১০১৩৪৫। সার্ভারে নম্বরগুলোর তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি হওয়ার আগেই এ দুজনকে দিয়ে অন্য ব্যক্তির নামে দানপত্র করান। এরপর দানকৃত সম্পত্তি নিজের নামে করে নেন। যার কবলা নং ৪০০৬। চুক্তি নেয়ার দলিল নং ৪০০৬ (২৭-০৩-২০১৯)। অর্পিত মামলা ১১১৫/১২ এবং অর্পিত আপিল ৪৩/১৭ চট্টগ্রাম জেলা জজ ৭ম আদালতে চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোনে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সাক্ষাতে কথা বলার আহবান জানান। পরে প্রতিবেদক সাক্ষাত করতে চাইলে দুরে থাকার অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
এমএসএম / এমএসএম

নবীনগরে কাঁঠালের ছড়াছড়ি: বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক ও ভোক্তা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় স্টপেজের দাবিতে ট্রেন থামিয়ে অবরোধ

সন্দ্বীপ থানার অভিযানে ১২ মামলার আসামী গাঁজা ব্যবসায়ী আটক

নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ যুবদল সভাপতি গ্রেফতার

কাউনিয়ার মেহরাব নৌপ্রধান স্বর্ণপদক পাওয়ায় এলাকায় অভিনন্দনের ঝড়

টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদী ৩ উপজেলাবাসীর মরণ ফাঁদ

সাভারে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চিতলমারীতে কোডেক এর সমৃদ্ধি কর্মসূচি উপজেলা দিবস উদযাপন

দাউদকান্দিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান পরিচালিত হয়েছে

সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ’র গুলিবিনিময়-আটক ৩

পঞ্চগড়ে মাদক সহ কারবারিকে আটক, ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দিলেন চেয়ারম্যান

উদাখালি মডেল কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠান
