ঢাকা রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে কাগজ জালিয়াতি করে ইটভাটা দখল


শাহেদ ফেরদৌস হিরু photo শাহেদ ফেরদৌস হিরু
প্রকাশিত: ৮-৫-২০২৪ দুপুর ১২:৫০

স্বাক্ষর জালিয়াতি ও ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ইটভাটা ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। চক্রটির কেউ একটি কথিত সংস্থার চেয়ারম্যান, কেউ সদস্য, কেউ স্বাক্ষী, কেউ আবার দাতা সেজে ভূয়া আম-মোক্তারনামা ও ভূয়া স্ট্যাম্প তৈরী করে নোটারী করেন। উদ্দেশ্য কয়েককোটি টাকার ইটভাটা ও জমি হাতিয়ে নেওয়া। জালিয়াতির প্রায় সব ধাপ সম্পন্ন করে প্রকৃত চুক্তিনামার মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানীকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন না ইটভাটা ও চুক্তির বকেয়া টাকা। উল্টো কোম্পানির এমডিকে ইটভাটায় পুড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ এই চক্রটির বিরুদ্ধে। 

ইটভাটা দখলে রাখার অভিযোগে সামান'স গ্রুপ নামের ওই কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসাইন মিসবাহ বাদী হয়ে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন। সিআইডি চট্টগ্রাম অফিসের এসআই রাশেদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন। 

এদিকে মামলা দায়ের হওয়ার পরপরই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই চক্রটি। চক্রটির অন্যতম প্রধান সহযোগী শ্রী পল্লব কান্তি চৌধুরী কথিত জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে মামলার বাদী ও সামান'স গ্রুপের অন্য সদস্যদের এসপি, ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হুমকি দিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত। সর্বশেষ মামলার বাদী সহ কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান সাদ্দাম হোছাইন আজাদ, ডিএমডি শুইয়াইব মোঃ ফখরুদ্দীন ও ডিরেক্টর সেলিম উদ্দিন ইটভাটার অফিসকক্ষে গেলে তাদেরকে মারধরের চেষ্টা করেন মামলায় অভিযুক্তরা। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে এসে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি কোর্ট ডায়েরি করেন মামলার বাদী।

মামলার বাদী জানান, কোম্পানির সিদ্ধান্তে ইটভাটাটি তিন বছরের জন্য হেলাল উদ্দিন ও মোজাম্মেল হককে ভাড়া দেওয়া হয়। স্ট্যাম্পে তিন বছরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪৫ লাখ টাকা। মোজাম্মেল হক মারা যাওয়ায় হেলাল এককভাবে ইটভাটা পরিচালনা করা শুরু করে। হেলাল দুই বছরে ভাড়ার ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও ১৫ লাখ টাকা ভাড়া না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। ভাড়ার টাকা দেওয়ার জন্য গত বছরের ২৬ জুন হেলালকে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে ইটভাটার যাবতীয় সম্পত্তিসহ বিভিন্ন মালামাল বুঝিয়ে দিতে বললে অভিযুক্তরা তাকে চুল্লিতে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন। এছাড়াও বিভিন্ন পাহাড় কাটা ও অনিয়মের বিষয়ে ইটভাটায় কোন সরকারী কর্মকর্তা বা সাংবাদিক গেলে কথিত একটি সংস্থার চেয়ারম্যান পল্লবে কল ধরিয়ে  দিয়ে হুমকি দিয়ে সবাই কে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এছাড়াও সামান’স গ্রুপের কর্মকর্তারা ইটভাটায় গেলে হেলাল একটি চুক্তিনামা দেখান। চুক্তিনামায় ইটভাটাটি ছয় বছরের চুক্তিতে ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন। দুই কিস্তিতে ভাড়ার ৯০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলেও দাবী করেন যা সম্পূর্ণ ভুয়া। জনস্বার্থে দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার কথিত চেয়ারম্যান শ্রী পল্লব কান্তি চৌধুরী নামের এক প্রতারকের সহযোগীতায় কথিত আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল নেতৃত্বে ভুয়া ভাড়ার চুক্তিনামা দেখিয়ে লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে আইবিএম (ইসলাম ব্রিকস ম্যানুফেকচারিং) নামে ইটভাটাটি দখল করে নেওয়া হয়। যদিও হেলালের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়নি এবং তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে জানান কোম্পানীর এমডি।

সামান'স গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, আমমোক্তারনামায় জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার কথিত চেয়ারম্যান শ্রী পল্লব কান্তি চৌধুরী তার নিজস্ব সংস্থার প্যাড ব্যাবহার করে সামান'স গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের আইডি কার্ডের তথ্য ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে 

মোঃ হেলাল উদ্দিনের নামে সামান'স গ্রুপ মালিকানাধীন মেসার্স ইসলাম ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচার নামের ইটভাটাটি আজীবনের জন্য আমমোক্তারনামা প্রদান করেন। সেখানে স্বাক্ষী দেখানো হয় হেলাল উদ্দিনের ভাই, ভাগিনা ও বোনের জামাইকে। এছাড়াও উক্ত আমমোক্তারনামায় হেলাল উদ্দিনকে দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার সদস্য বলে দাবী করা হয়।

যদিও এ ধরনের প্যাডে আমমোক্তারনামার কোন আইনগত ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। শুধু তাই নয় মামলার বাদীকে ভয় দেখানোর জন্য সেই প্যাডে তিনি স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার ও চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের নামে  ও বিভিন্ন স্মারক নাম্বার ব্যাবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ও নিয়েছেন বলে জানান তারা।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন পদুয়ার তেওয়ারখীল এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও আবু বক্কর, চরম্বা এলাকার আবদুল গণির ছেলে নাজিম উদ্দিন এবং মল্লিক ছোবহান এলাকার জার মূলকের ছেলে জানে আলম।অভিযোগ অস্বীকার করে হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি ৬ বছরের জন্য ইটভাটা ভাড়া নিয়েছি। এবং

জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার চেয়ারম্যান শ্রী পল্লব কান্তি চৌধুরীর কাছ থেকে আজীবনের জন্য ২ কোটি টাকা দিয়ে আমমোক্তারনামা নিয়েছি। ভূয়া স্বাক্ষর, ভূয়া কাগজপত্র ও আমমোক্তারনামার মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে যান তিনি। এবং এক পর্যায়ে শ্রী পল্লব কান্তি চৌধুরীর ভয় দেখান তিনি। সর্বশেষ তিনি ওই কথিত সংস্থার চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক পকেটে রাখি বলে ফোন কেটে দেন।

ইটভাটা দখলের বিষয়ে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার  চেয়ারম্যান পরিচয়দানকারী শ্রী পল্লব কান্তি চৌধুরী বলেন, ইটভাটাটি হেলালকে আমি আমমোক্তারনামা দিয়েছি। তিনি আমমোক্তারনামা দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার চেয়ারম্যান আমি। এই সংস্থাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সরকারীভাবে অনুমোদন প্রাপ্ত।  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাইকোর্ট, বিভাগীয় কমিশনার,  ডিসি, পুলিশ সুপার,  ওসি, ৯৯৯ ও প্রতিটি থানার ডিউটি অফিসারকে বলে দেওয়া হয়েছে আমার নাম।  সবাই আমাকে চিনে। আমি সুরক্ষা প্রদান ৭নং আইন ২০১১ বিধিমালা অনুযায়ী সব ধরনের বিচার করতে পারি। 

তিনি বলেন, ইটভাটার বিষয়ে দু'পক্ষই দুইটি মামলা দায়ের করেছে। সামান'স গ্রুপের মামলাটি বর্তামানে চট্টগ্রাম সিআইডির এসআই রাশেদুল ইসলামের হাতে তদন্ত অবস্থায় রয়েছে। তার সাথেও কথা বলেছি। তিনি আমি যেভাবে বলি সেভাবে করে দিবেন। তারা সবাই আমাকে চিনে।

এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সংস্থার কোন ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি কার সাথে কথা বলেছেন জানিনা তবে আমি সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে এই সংস্থাটি চালাচ্ছি। এ বিষয়ে সবাই জানেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাশেদুল ইসলাম জানান, স্ট্যাম্প ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ইটভাটা দখলের একটি মামলার আমার কাছে রয়েছে। মামলাটির স্বাক্ষর পরীক্ষা করার জন্য ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা শেষ বিস্তারিত আদালতে প্রেরণ করা হবে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ খায়রুল কবীর মেনন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা-২ এর নামে দূর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী নামে কোন সংস্থা নেই। এধরনের তথ্য ব্যাবহার করে কেউ যদি চেয়ারম্যান বা সদস্য সেজে সাধারণ মানুষকে হয়রাণি, ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। ভূক্তভোগীরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠালে আমরা ব্যাবস্থা গ্রহণ করব।

এমএসএম / এমএসএম

চসিকের সিইওকে সরাতে মেয়রের ডিও লেটার

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদের নির্বাচন প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অভিযোগ

মুলাদীতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

কামালপাড়া যুব সংঘের আহ্বায়ক কমিটি গঠন

‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি’: কানাডা বিএনপি নেতা হুমায়ুন পাটোয়ারী

পটুয়াখালীতে কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ৩৫ লক্ষাধিক টাকার মাদক ও জাল নোট জব্দ

কেরানীগঞ্জে চাষের মাগুরকে খাওয়ানো হচ্ছে মরা মুরগি, তীব্র গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

যথা সময়ে নির্বাচন, সহিংসতা প্রতিরোধে জনগণকেও ভূমিকা রাখতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

নুরাল পাগলা’র দরবারে পুলিশের ওপর হামলা, ৩৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় ডেকোরেশন কর্মীর লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রারে রৌমারীতে সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

চৌগাছায় পনিতে ডুবে আড়াই বছরের শিশু আবু বক্করের মৃত্যু