নানা অনিয়মে জর্জরিত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
জনবল সংকট, ঔষধ সরবরাহে ঘাটতি, পাকা রশিদ না দিয়ে চিরকুটের মাধ্যমে টেষ্টের টাকা নয় ছয়, রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালের অভ্যন্তরে পরিক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও ডাক্তাররা রোগীদের বেসরকারী ক্লিনিকে পাঠিয়ে টেষ্টের কমিশন বাণিজ্য করাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই এখন রোগী।
ডাক্তার ও নার্সের স্বল্পতা রয়েছে। তাছাড়া নৈশ প্রহরী, মালি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ শূন্য। হাসপাতালে গত দুই মাস যাবৎ ওমিপ্রাজলসহ বেশ কিছ ুঔষধের সংকটও রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা টিউরী গ্রামের একরামুলের ব্যবস্থাপএে(রেজিঃ নং৩৪১২৩/১৪২) চিকিৎসক আল্ট্রাসনোগ্রাফ করার এডভাইস দিলে তার নিকট হতে বিনা রশিদে সরকার নির্ধারিত ২শত ২০ টাকার স্থলে ৩শত টাকা নেওয়া হয়েছে।
এক্স-রে এর জন্য কাউন্টারে রোগীদের নিকট হতে টাকা জমা নিলেও তার কোন পাকা রশিদ না দিয়ে সাদা কাগজের চিরকুটে টাকার পরিমান লিখে এক্স-রে করা হচ্ছে। গত ২৫ জুলাই এক্স-রে বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ফাহিমের নিকট থেকে ০৬/২২১ নং চিরকুটে ২শত ৫০ টাকা এবং মোসাম্মত ফাহিমার নিকট থেকে ০৮/২২১ নং চিরকুটের মাধ্যমে ৩শত টাকা নিয়ে তাদের এক্স-রে করা হয়েছে। হাসপাতালে অন্যান্য পরিক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করে সরকারী অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অনুসন্ধানে দেখাযায়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের এক্স-রে, রক্ত পরিক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, মলমূত্রসহ অন্যান্য পরিক্ষা-নীরিক্ষার ফি বাবদ রোগীর জমা দেয়া অর্থ পাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় না করে (নিজেদের মনগড়া সাদা কাগজে তৈরি) টোকেনের মাধ্যমে আদায় হচ্ছে। এছাড়াও পরিক্ষা-নিরীক্ষা ফি কাউন্টারে জমা নিয়ে রিপোর্টে ফ্রি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এভাবে টেষ্ট বাবদ আদায় করা সরকারী টাকা রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা না দিয়ে একটি চক্র আত্মসাৎ করছে। গত ২৫ মে তানজিলার (পেসেন্ট আইডি নং-ইউঐ১১৫১৩২২) কয়েকটি প্যাথলজিক্যাল টেষ্টের জন্য টাকা জমা নেয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনা টাকায় টেষ্ট গুলো করে দিয়েছে বলে রিপোর্টে ফ্রি উল্লেখ করে তার জমাকৃত অর্থ হাতিয়ে নেয়।
তানজিলার মত করে প্রতিদিন রোগীদের সাথে প্রতারণা রাষ্ট্রের হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, এই চক্রের মূল হোতা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাডাঃ এস এম মনজুর এ- এলাহী। সূত্রটি আরোও জানায়, মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
অনুসন্ধানে আরোও জনা যায়, ডাক্তাররা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে অপ্রোয়জনীয় টেষ্ট লিখে নির্দিষ্ট প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠাচ্ছে। কিছ ুঅসাধু ডাক্তার হাসপাতালের ভিতরে গড়ে তুলেছে দালাল সিন্ডিকেট। সেই দালালদের মাধ্যমে রোগী পাঠাচ্ছে বাইরের ক্লিনিক গুলোতে। একটি সূত্র জানায়, রোগীরা টেষ্ট করার পর কমিশন বাবদ শতকরা ত্রিশ ভাগ টাকা চলে যাচ্ছে ডাক্তারদের পকেটে। আর এই টাকা সাচ্ছন্দেই দিচ্ছে হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এতে করে পকেট কাটা হচ্ছে রোগীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার-কর্মচারী জানান,এ প্রভাবশালী-চক্রটি দীঘর্ দিন যাবৎ হাসপাতালটিতে এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে তারা চক্রটির বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছেনা।
সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার স্থলে একশ শয্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও হাসপাতালটির ওয়ার্ড, কেবিন বেড, টয়লেট, বারান্দসহ সব স্থানেই ময়লা আবর্জনায় ভরা যা প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের দুটি এ্যম্বুলেন্স দীর্ঘ দিন যাবৎ বিকল হয়ে পড়ে থাকলেও তা সচল করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ নয় ছয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এস এম মনজুর এ- এলাহী প্রতিবেদককে জানান,বিষয় গুলো আমার জানা ছিলনা। যারা এ সকল অপকর্মের সাথে জরিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহমুদা আখতার প্রতিবেদককে জানান, রোগীদের নিকট হতে বিনা রশিদে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। এ সকল অনিয়ম বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুঠোফোনে কথা বললে স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামান প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।
এমএসএম / এমএসএম