অডিট আপত্তি ও তদন্ত কমিটি গঠন
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকের প্লট কেলেংকারী ফাঁস!
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরে ১০৩ নম্বর প্রধান সড়ক লাগোয়া বাণিজ্যিক ব্লক। এই ব্লকের শেষ অংশে লেকপাড়ে বেশ কিছু জায়গা খালি রাখা হয়েছিল নকশায়। আরবান ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটি (ইউইউএফ) হিসেবে চিহ্নিত ওই জায়গা রাখা হয় মূলত প্রয়োজন সাপেক্ষে পরিষেবা অবকাঠামো স্থাপনের জন্য। কিন্তু লেকপাড়ে এমন সুন্দর জায়গা খালি পড়ে থাকবে, তা মানবেন কেন ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা। শুরু হয় ওই জায়গা গিলে ফেলার আয়োজন।
নকশা পরিবর্তন ও লেক ভরাট করে সেখানে সৃজন করা হয় দুটি প্লট, যার নম্বর ৯১ ও ৯৩। এর প্লট একটি নেন তৎকালীন প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পরে প্রকল্প পরিচালক) নিজেই, অন্যটি বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্ত্রীর নামে।
শুধু যে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে তা নয়, কম দামে নেওয়ার জন্য প্লটের শ্রেণিতেও আনা হয় পরিবর্তন। বাণিজ্যিক ব্লকে অবস্থিত প্লট দুটির বাজারদর কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা হলেও আবাসিক প্লট হিসেবে তা বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্লটের শ্রেণির মারপ্যাঁচে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কম পেয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেকপাড়ের ৯১ নম্বর প্লটটি নিজ নামে বরাদ্দ নেন রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক। তিনি দীর্ঘ সময় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম), ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (এপিডি) এবং ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২১ সালে উজ্জ্বল মল্লিক রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পিডি হন তাঁরই আস্থাভাজন কর্মকর্তা মনিরুল হক।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পদ পিএম হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেই লেকপাড়ে প্লট দুটি সৃজন করান উজ্জ্বল মল্লিক। আর কাজটি যেন বিনা বাধায় করা যায়, সে জন্য প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটা এক্সপার্টের মালিক জাহাঙ্গীর কবীরকেও দলে ভিড়িয়ে নেন তিনি। একই সেক্টরের ৯৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান জাহাঙ্গীর কবীরের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা কবীর। কাগজপত্রে প্লট দুটি সাড়ে ৭ কাঠা দেখানো হলেও সীমানা প্রাচীরে তাঁদের দখলে আছে ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠা জমি। এই দুটি প্লট বর্তমানে গাছপালা আচ্ছাদিত বাগানবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, ‘আমি রাজউকের কোটায় প্লট বরাদ্দ নিয়েছি। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এর বেশি আমার কোনো বক্তব্য নেই। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডাটা এক্সপার্টের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর কবীরের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফাহিম নামের একজন ফোন ধরেন। তাঁর বড় মেয়ের স্বামী পরিচয় দেওয়া ফাহিম জানান, জাহাঙ্গীর কবীর সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে কোম্পানির পরিচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর রফিকুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
যেভাবে ১৯ কোটি টাকা গচ্চা রাজউকের:
উজ্জ্বল মল্লিক ও মেহেরুন্নেসা কবীর প্রতি কাঠা প্লটের বিপরীতে রাজউকের কোষাগারে জমা দিয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১৫ কাঠা জমির বিপরীতে মোট ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যে ব্লকে তাঁরা প্লট দুটি বরাদ্দ নিয়েছেন, তার পাশেই রয়েছে আরও ১২টি বাণিজ্যিক ব্লক।
স্বাভাবিকভাবেই এই দুটি প্লটের দাম এসব বাণিজ্যিক প্লটের সমান হওয়ার কথা। রাজউক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কাঠা বাণিজ্যিক প্লটের দাম ১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে উজ্জ্বল মল্লিক ও জাহাঙ্গীর কবীরের স্ত্রীর দখলে থাকা জমির দাম কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা। এখানে দৃশ্যত রাজউকের গচ্চা গেছে ১৯ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এস্টেট বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পূর্বাচল প্রকল্পে প্রধান সড়ক সংলগ্ন একটি প্লটও কারও নেই। এমনকি সংস্থাটির চেয়ারম্যানেরও নয়। একমাত্র উজ্জ্বল মল্লিক ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে প্লট দুটি বাগিয়ে নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘মূল মাস্টার প্ল্যানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্লট সৃজন বা শ্রেণি পরিবর্তন করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।’
মূল নকশায় পরিবর্তন এনে নতুন প্লট সৃজন করে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার সময়ে এ ধরনের কোনো বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া উজ্জ্বল মল্লিকের বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে আমার কাছে এ মুহূর্তে কোনো তথ্যও নেই। তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।
শুধু পূর্বাচল নতুন শহর নয়, রাজউকের সব কটি প্রকল্পেই এমন অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘রাজউকের সব কটি প্রকল্পেই এমন ঘটনার নজির রয়েছে। যাঁরা প্রকল্পের থাকেন, তাঁরা নিজের ইচ্ছেমতো প্লট সৃজন করে বরাদ্দ নেন।
এ ক্ষেত্রে বাদ যায় না লেক, পার্ক এমন কি খেলার মাঠও। তাঁরা কৌশলে বরাদ্দ নেওয়ার আগে প্লটের শ্রেণি পরিবর্তন করে দফায় দফায় সংশোধন করে নেন। মন্ত্রণালয় ও রাজউকের উচিত সব কটি প্রকল্পে কারা নিজ স্বার্থে বারবার নকশায় পরিবর্তন এনেছে, এসব পরিবর্তন এনে কোন স্বার্থান্বেষী মহল নামে-বেনামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত করা। এদের শাস্তির আওতায় আনা না গেলে সরকারের পরিকল্পিত আবাসনের যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পর্ক ও প্রশাসনিক সুযোগ কাজে লাগিয়ে এটি করেছেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ধরনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’
অডিট আপত্তি এবং তদন্ত কমিটি গঠন:
সর্বশেষ জানাগেছে, এ বিষয়ে অডিট আপত্তি দেওয়া হয়েছে। রাজউকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্লট কেলেংকারীর বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার পর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জামিল আহমেদ / জামিল আহমেদ
তিতাস গ্যাস জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ এর অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার আয়োজিত
ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় দফা দাবি
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার অনুষ্ঠিত
কামরাঙ্গীরচর থানার মোঃ আমিরুল ডিএমপি লালবাগ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নির্বাচিত
পেশাদারিত্ব ও মানবিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডিসি মহিদুল ইসলাম
ঝিনাইদহ অফিসার্স ফোরামের নতুন কমিটি গঠন
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ শিখাচ্ছে পাথওয়ে
উত্তরায় SEDA ফাউন্ডেশনের ১৭তম মেধা যাচাইয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে রাজউক চেয়ারম্যান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় নকশা দাখিল ও অপসারণের নির্দেশ
হাতপাখা নির্বাচিত হলে ঢাকা-১৮ কে একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলা হবেঃ আলহাজ্ব আনোয়ার