ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কাস্টমস দুর্নীতির মাফিয়া মহসিন


আলমগীর হোসেন photo আলমগীর হোসেন
প্রকাশিত: ৩১-৮-২০২৪ বিকাল ৫:৪১

অঢেল সম্পদের নিত্য নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কাষ্টমস কর্মকর্তা মহাসিন খানের বিরুদ্ধে। এর আগে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে তিনটি পর্ব প্রকাশ করায় পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক নুর হাকিম,বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ আলমগীর হোসেন, ও চট্টগ্রামের বিশেষ প্রতিনিধি সুমন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করে। এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা। ইতিমধ্যে দৈনিক সকালের সময়ে উল্লেখিত সম্পদের চেয়েও বেশি তথ্য প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। সম্পদের খতিয়ান:- (১) এলাকার নাম, বোয়ালিয়া, মৌজা নং- ৩০৯, ভি এস নং-৩৫১, খতিয়ান নং-৩৬১৬ দাগের ৯৩ শতাংশের মধ্যে ৫৩ শতাংশ ক্রয় করেছে মহাসিন। রেজিষ্টেশনের তারিখ ২৭-০২-২০২২ যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।

(২)এলাকার নাম, বোয়ালিয়া, মৌজা নং- ৩০৯, ২ দাগে জমির পরিমান ১৮ শতাংশ। রেজিষ্ট্রেশনের তারিখ ২৭-০২-২০২২ যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় কোটি টাকা। (৩) এলাকা ভবানিপুর, মৌজা নং- ২৬৩, ভি এস খতিয়ান নং- ১১৬, এসএ দাগ নং- ৭০.৭১.১৩৪ মোট ৫ দলিলে ১৪৫ শতাংশ জমি। রেজিষ্ট্রেশনের তারিখ ০৬-০২-২০২২ ও ২৭-০১-২০২১ দাতা রনজিত ভদ্র যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় কোটি টাকা। 

(৪)  ভবানিপুর মৌজা ভি এস খতিয়ান নং- ৪৫৯, ভি এস দাগ নং- ১৩৩, জমির পরিমান ৩০ শতাংশ, যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৪০/৫০ লক্ষ টাকা। এখানে উল্লেখ থাকে যে এই জমিতেই মহাসিনের পুকুরসহ পাকা ঘাটলা করা তৃতীয় তলা বাড়ী অবস্থিত যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। আশ্চর্যের বিষয় এই বাড়িতে কেউ বসবাস করে না।

(৫) হরিরামপুর থানার অন্তর্গত নেসরাগন্জ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে মহাসিনের নিজ নামে ৫ বিঘা ধানি জমি রয়েছে যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ২০/২৫ লক্ষ টাকা। দেখা শুনা করে তার বড় ভাই মোস্তফা খান। অন্য আরেকটি সুত্রে জানা গেছে মহসিন   ফরিদপুরেও বিপুল সম্পদ ক্রয় করেছে। সকালের সময়ে তার সম্পদের সংবাদ প্রকাশের পর দুর্নীতি আড়াল করার চেষ্টায় সেখান থেকে বেশ কিছু বিক্রিও করে করে দিয়েছে।  এছাড়াও তার আপন ফুফু বাড়ি মুন্সিগন্জে কোটি কোটি টাকার সম্পদ কিনেছে বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে। 

তাদেরই একজন মহসিন খান। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর একাধিকবার অভিযোগও দাখিল  হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তার অসংখ্য বন্ধু বান্ধব রয়েছে বলে জানা যায়।  তাদের হয়ে ছাত্রদের কোটি বিরোধী আন্দোলনের সময় কোটি কোটি টাকা দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করেছে বলে শুনা যাচ্ছে। তার পুরো নাম মহসিন খান, পদবী- কাস্টমস সুপারিন্টেন্ডেন্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে  অন্যের খরচে লেখা পড়া করে ১০ বছরে সরকারি জুনিয়র অফিসার মহসিন এখন প্রায় কোটি কোটি টাকার মালিক। নিজ গ্রাম ভবানিপুরে করেছেন আত্মীয় স্বজনসহ নামে বেনামে তিনটি বিল্ডিং, তাঁর মধ্যে নিজের ৩ তলা বিশিষ্ট রাজপ্রাসাদসম বিল্ডিংটির চতুরপাশে প্রাচির করা। সাথে দৃষ্টি নন্দন পুকুর দুই দিকে রাজকীয় সিঁড়ি যুক্ত পাকা ঘাটলা। এলাকা বাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর আপন বড় ভাই এখনও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই বড় ভাইকে তিনি ৩ তলা ফাউন্ডেশনের ৩/৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের একটি বিল্ডিং নির্মাণ করে দিয়েছেন যার একতলার কাজ প্রায়  শেষ পর্যায়ে। একই গ্রামে বসবাসরত মহসিনের নিজ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে তাঁর আপন বোনের জন্য ১ তলা বিশিষ্ট একটি নান্দনিক বাড়ি। 

এলাকাবাসির সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে, একসময় অনেক অর্থ কষ্টে দিন কাটতো মহসিনদের। এমনকি ঠিক মতো দুমুঠো ভাতও খেতে পেতোনা তারা। 

সরেজমিন তদন্তে, নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভবানিপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তাদের আঞ্চলিক ভাষায় জানান, মহসিনের বাবা মান্নান খাঁ দুধ বিক্রি করে ও চেয়ে চিন্তে কোন রকম দিনাতিপাত করতো এখন তাঁর এক ছাউল কি চাকরি করে জানি না। দেহি হঠাৎ করে ৩ টা বিল্ডিং বানায়া ফালালো।
অন্য আরেক মহিলার কাছে মহসিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন মান্নান খাঁ অনেক গুলো ছাওয়াল পাল নিয়ে চলতে পারতো না, দূরের গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা করতো সেই মান্নানের ছাওয়াল না-কি  টাহার কুমির। এলাকা বাসির এমনও অভিযোগ আছে মহসিন হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ায় মানুষের সাথে খারাপ আচরণও করে। তারই প্রেক্ষিতে    গত ৩১-০৭-২০২৩ ইং তারিখে, মো: শাহ আলম নামের জনৈক ব্যক্তি দুদকে অভিযোগ দায়ের করেন। 
অভিযোগে বলা হয়, নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মূল্য সংযোজন কর, ঢাকার গুলফেশা প্লাজায় কর্মরত কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট তার বর্তমান কর্মস্থাল, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি সাগরিকা রোড, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
তিনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ঘুসের
বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। কম ভ্যাট আদায় দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব
ফাঁকি দিতে তিনি সহায়তা করেছেন। ব্যবসায়ীদের নানা ইস্যু নিয়ে এবং ফাইল আটকিয়ে ঘুস নেন
তিনি। তার এসব কাজে সহযোগিতা করেন ওই সার্কেলের কিছু নিম্ন পদস্থ কর্মচারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে মহসিন ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে গত আওয়ামী সরকারের আমলে সেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে আওয়ামীলিগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। এ সকল অপরাধের জন্য তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার বলে অনেকেই মনে করে।

এমএসএম / এমএসএম