ইফতারের টেবিলে ৬০ লাখ টাকা অগ্রিম ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ
বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট কতিপয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজধানী একটি হোটেলে দাওয়াত করে ভুড়িভোজের মাধ্যমে অগ্রিম ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পক্ষ থেকে এক অভিযান চালানো হয়েছে। উক্ত অভিযানে দুদক এর কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দপ্তা হতে নতিপত্র জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর ওই সব নথিপত্রের ভিত্তিতে দুর্নীতি অনিয়মের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান ড. সামিনা আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার সেল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিসিএসআইআর এর দরপত্র জমা দেওয়ার আগেই নির্দিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানকে গোপনে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়, আর তার বিনিময়ে হাতবদল হয় মোটা অঙ্কের ঘুষের টাকা। চলতি বছরের গত ২৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদারের বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটির চূড়ান্ত সভা হয়। অথচ উক্ত মূল্যায়ন কমিটির গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবে তার এক মাস আগেই হয়েছিল। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ‘অ্যামব্রোসিয়া রেস্তোরাঁয়’ গত ২৩ এপ্রিল আয়োজিত এক ‘ইফতার বৈঠকে সিদ্ধান্তের কথা বলা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ধানমন্ডির সেই গোপন বৈঠকে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অগ্রিম ঘুষ হিসেবে ৬০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। আর পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও সম্পূর্ণ করতে চুক্তি করা হয়েছি, প্রায় ১ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারার পরিকল্পনা করা হয়।
সূত্রটি আরো জানায়, গোপন সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব ও গবেষণা সমন্বয়কারী ড. মো. নুরুল হুদা ভূঁইয়া, ঢাকা গবেষণাগারের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো. হোসেন সোহরাব, ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার অ্যানালিটিক্যাল রিসার্চ (ইনারস)-এর পরিচালক ড. মো. সেলিম খান, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার সত্যজিৎ রায় রনি, উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. বেনজির আহমেদ এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কাজী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) টেন্ডার ডাকা হয় ৮টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন এমনভাবে বানানো হয়েছিল যে, যাতে চারটি নির্ধারিত কোম্পানি ছাড়া আর কেউ টেকনিক্যাল যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে। এটিই টেন্ডার কারচুপির পরিচিত কৌশল ‘সুবিধাভোগী বান্ধব শর্ত সংযোজন’, যেখানে দরপত্রের শর্তপত্র এমনভাবে লেখা হয়, যেন নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কেউ অংশ নিতে না পারে।
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগ বাণিজ্য, ঠিকাদারীসহ বিভিন্ন সেক্টরকে জিম্মি করে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি বনে গেছেন। সেই চক্রটি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দারা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন বলেও বিসিএসআইআর এর একটি সূত্র জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এত বড় অঙ্কের টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হলেও, সেগুলোর অনেক সময় কোনো ব্যবহার হয় না। যেমন, ‘পেশেন্ট বেড পরিবহনের জন্য’ কেনা একটি বিশাল লিফট এখনও অচল হয়ে পড়ে আছে। যা ক্রয় করার পর থেকে কখনও ব্যবহার করা হয়নি। অথচ এই লিফট ক্রয়ের বিল আগেই সম্পূর্ন পরিশোধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই অতীতে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
আবার বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ড. হোসেন সোহরাবের বিরুদ্ধে রয়েছে অনুমোদনহীন কাজের আদেশ ও নিরীক্ষা আপত্তি সত্ত্বেও বিল প্রদানের অভিযোগ। ড. সেলিম খানের নাম জড়িয়েছে ১০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি ও গাছ বিক্রির অনিয়মের অভিযোগ। তাছাড়া সত্যজিৎ রায় ওরফে রনি চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে থাকছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে একাধি মামলাও রয়েছে। মো. বেনজির আহমেদ নিয়োগে কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার পাশাপাশি, দুদকের চিঠি গায়েব করার অভিযোগেও অভিযুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে। আর কাজী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একাধিক পদোন্নতি ও মানবসম্পদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ইতোমধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করে তা বিশ্লেষণ করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও শেষপর্যন্ত ব্যবস্থা হয় না। স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে আতাত করেই এসব দুর্নীতিবাজার প্রভাবশালী কর্মকর্তারা দীর্ঘ দিন ধরেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছেন।
একজন সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) গবেষণার নামে যা চলছে, তা মূলত কিছু গোষ্ঠীর অর্থ বানানোর উৎসে পরিণত করা হয়েছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়, কিন্তু তার অধিকাংশই ব্যবহার করা হয় না। অথচ ওই যন্ত্রপানিতর ক্রয়ের বিল নির্ধারিত সময়ের আগেই শতভাগ পরিশোধ করা হয়ে থাকে। দুর্নীতিবাজরা তাদের কমিশন বাণিজ্যের কারণেই বিলগুলো দ্রুত পরিশোধ করে থাকেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জন্য সরকার প্রতিবছর গবেষণা উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও, সেই অর্থের বড় অংশ চলে যাচ্ছে টেন্ডার কারচুপি, অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র কেনা ও অস্বচ্ছ বিল পরিশোধের মাধ্যমে খরচ করা হয়ে থাকে। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ তদন্ত, দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সরকারের গবেষণা খাতের প্রতি জনআস্থা আরও কমে যাবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনায় আমাদের এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের সময় তারা বেশ কিছু ফাইল পত্র জব্দ করে নিয়ে যায়। একথা জানানোর পর, তিনি তার নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করে বলে চেয়ারম্যান স্যারের বক্তব্য নেন। তিনিই একমাত্র বক্তব্য দিতে পারেন। এরপর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান ড. সামিনা আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার সেল ফোনে বার বার কলা করা হলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি।
এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
