প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। রাজধানীর মিরপুর ১নং সেকশনের মাজার রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ৫ বছরের অস্থায়ী সনদ দিয়ে এর যাত্রা শুরু ২০০২ সালে। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পার হলেও দুর্নীতির কারনে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এখনো স্থায়ী সনদ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। সাজ্জাদুল জুম্মা, মীর সাহাবুদ্দীন, মো. আশরাফ আলী ঘনিষ্ট তিন বন্ধু ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ায় দুর্নীতি করতে সুবিধা হয়। এ ছাড়া তিন বন্ধুই ছিল স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর।
বিশ^বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে,সাজ্জাদুল জুম্মা বিশ^বিদ্যালটি প্রতিষ্ঠার পর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। তিনি ২০০২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত টানা ১১ বছর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ৩ বার আওয়ামীলীগ থেকে নমিনেশন নিয়েছেন। তিনি স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের রাজশাহীর মেয়র কামরুজ্জামান লিটন এর বোন জামাই। গত নির্বাচনে খুলনা ডিভিশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হওয়ায় নিজের ইচ্ছা মত ইউনিভার্সিটি চালিয়েছেন। ইউনিভার্সিটির নামে ৩ বিঘা জমির প্রয়োজন থাকলেও ৪২ শতাংশ কম কিনে সরকারি আইনের লঙ্ঘন করছেন। যার কারনে স্থায়ী সনদ পাওয়া সম্ভব হয়নি। জমি কেনার সময় বোর্ডকে না জানিয়ে নিজের ইচ্ছা মত অগ্রিম টাকা প্রদান করেছেন। দলীয় প্রভাব বিস্তার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস খুলে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে,মীর সাহাবুদ্দীন ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পযর্ন্ত প্রাইম বিশ^বিদ্যালয় চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সাজ্জাদুল জুম্মার বন্ধু এবং একই এলাকায় বাড়ি। এস টি ইমাম ও রাশেদুল হাসান এর সহযোগী। সাবেক অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর খুলনা বিভাগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। ঝিনাইদহের কুখ্যাত এম. পি. আনার এর আত্মীয় ও ব্যবসায়ীক সহযোগী।
তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতি করে জমি কেনায় সহযোগীতা করার অভিযোগ। তার সময় বিশ্ববিদ্যালয় এর বিল্ডিং এর কাজে দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বোর্ড সিদ্ধান্ত ৬ তলা থাকলেও ১০ তলা করে টাকা আত্মসাত করেছেন । বিল্ডিং তৈরিতে রাজউকের অনুমোদন ছিল ৯তলা কিন্তু করা হয়েছে ১০তলা, যা এখন অবৈধ বিল্ডিং। নিজ ভাগিনাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রকম কেনাকাটা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় এর এফ.ডি.আর. ও প্রোভিডেন্ট ফান্ড ভেঙ্গে পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও অবৈধ ১০তলা বিল্ডিং নির্মান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস দিয়ে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্ষতি সাধন করেছেন। একবার ক্যাম্পাসে মেয়েদের সাথে অসদাচরণ করলে ছাত্র-ছাত্রীরা আটক করে,পরে ক্ষমা চেয়ে রেহাই পায়। এমন ঘটনা আরও অনেক করলেও ধরা পড়েনি আশরাফ আলী ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পযর্ন্ত প্রাইম বিশ^বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সাবেক অতিরিক্ত সচিব। তাদের বন্ধু এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি জমি কেনায় দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এর বিল্ডিং এর কাজে দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধেও। বিশ্ববিদ্যালয় এর এফ.ডি.আর. ও প্রোভিডেন্ট ফান্ড ভেঙ্গে অবৈধ ১০তলা বিল্ডিং নির্মানে মীর সাহাবুদ্দিন এর সহযোগী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস দিয়ে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য করার ক্ষেত্রেও তার সহযোগীতা ছিল। করোনার সময় অনেক শিক্ষক- শিক্ষিকার চাকরী থেকে অপসারণ করেছেন এবং বেতন কর্তন করেছেন।তিনি সহকারি পরিচালক (হিসাঃ)এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এর বহু টাকা আত্মসাত করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান ইন্টারনাল অডিট এবং এডি একাউন্টস এর তদন্ত করছেন। ইতি মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হলেও পরবর্তী কার্যক্রম বাধা প্রদান করতে এডি একাউন্টস কে ছুটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং তিন বন্ধু মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তার ভাগিনার মাধ্যমে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা প্রদান করে বিভিন্নভাবে আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন। এদের সাথে দুর্নীতির কারনে বহিষ্কৃত ও অভ্যন্তরীণ আরও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগ দিয়েছেন যারা একই সিন্ডিকেট এর সদস্য। ২০১৩ সালের পরে তারা কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি জয়েন্ট স্টক থেকে অনুমোদন করেনি। যার ফলে বর্তমানে কমিটি অনুমোদন করাতে পারছেনা বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয় সাজ্জাদুল জুম্মা, মীর সাহাবুদ্দীন সাথে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয় মো. আশরাফ আলী সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আর এ বিল্ডিং এর কাজ আমি করিনি। আমার আগে যে চেয়ারম্যান ছিলো তারা করেছে।
এমএসএম / এমএসএম