ফের আওয়ামী পন্থী একাংশ শিক্ষক বেরোবি প্রশাসনে আসতে মরিয়া
দীর্ঘ দিনের অবসানের পর ভিসি পেয়েছে প্র রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এখন উপাচার্য পদ ছাড়া প্রায় ৪৬ টি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছে শিক্ষকরা। ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পরপরই এ সকল প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। যারা বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।
শিক্ষকদের এই অংশ পদত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকদের আরেকটি অংশ প্রশাসনের পদে আসতে উঠে পরে লেগেছে। আওয়ামী লীগের আমলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে এখানে বিএনপি বা সাদা দলপন্থী তেমন শিক্ষক কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
তাই এই সুযোগে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ তাদের আগের রূপ পরিবর্তন করে সাদা দল গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। লোক প্রশাসন বিভাগের একজন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুইজন, পরিসংখ্যান বিভাগের একজন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের একজন ও মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটির গঠনের চেষ্টা চালানো হয়। তবে পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় এখনই কমিটির গঠন করছেন না তারা।
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা যায়, নতুন প্রশাসন আসলে শিক্ষকদের মধ্য থেকে যারা দায়িত্ব পাবেন, তাদের বেশিরভাগ শিক্ষকই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামীপন্থী নীল দলের সদস্য তুহিন ওয়াদুদ, তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদে ছিলেন। নীল দলের সহ-সভাপতি ও একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক উমর ফারুক ও একই বিভাগের শিক্ষক ও নীল দলের যুগ্ম সম্পাদক মো: আশানুজ্জামান এবং নীল দলের কার্যকরী সদস্য ড.আপেল মাহামুদ। নীল দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের হারুন-আল- রশিদ, বর্তমানে এ শিক্ষক অর্থ কমিটিরও সদস্য।
অন্যদিকে কলা অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করছেন নীল দলের সদস্য ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান। বাংলা বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. সাইদুল হক ও গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও নীল দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। নীল দলের আরেক সদস্য ও বঙ্গবন্ধু ক্লাব বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম। এ তালিকা রয়েছেন নীল দলের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ তানজিউল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মো. সরোয়ার আহমাদ ও মোঃ রহমতউল্লাহ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ফারজানা জান্নাত তসি।
এছাড়াও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আরেকটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও আসতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক উপ-উপাচার্য সরিফা সালোয়া ডিনা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তাবিউর রহমান প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের আবু রেজা মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ড.নুর আলম সিদ্দিকী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মোঃ রফিউল আজম খান ও ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস রহমান ও সহকারি অধ্যাপক মাসুদ-উল- হাসান ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য , বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র ও প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক কমলেশচন্দ্র রায়। বর্তমানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করছেন এ গ্রুপেরই শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী শিক্ষক দ্বারা বঞ্চিত হয়েছি।তারা সবসময় নিজদের ছাত্র সংগঠনকে সমর্থন দিয়েছে। অবশেষে আওয়ামী শিক্ষকদের অবহেলার কারণে আমরা আমাদের আবু সাইদ ভাইকে হারিয়েছি।তাই আমরা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক দায়িত্বে আওয়ামী লীগ দোসরদের দেখতে চাই না।এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্টদেরও দেখতে চাই না।আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত প্রশাসন গঠনের জন্য নতুন ভিসির কাছে তারা দাবি জানাবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় কোনো শিক্ষককেই তারা প্রশাসনে দেখতে চান না।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকবৃন্দই আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত সেহেতু এসব শিক্ষকবৃন্দের মধ্য থেকেই নতুন উপাচার্য যিনি আসবেন তাদেরকে নিয়েই কাজ করতে হবে। অনেকই দলনিরপেক্ষ এবং মেধাবী শিক্ষক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের সংস্কৃতি চালু আছে তা হলো যে সরকারের আমলে যিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হন তাকে অনেকটা বাধ্য হয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো দলের ফরম পূরণ করতে হয়। তিনি আরোও বলেন নতুন উপাচার্য আসলে তার উচিত পূর্ববর্তী উপাচার্যদের আমলে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন না তাদের প্রাধান্য দেওয়া, সেই সঙ্গে পূর্বে যারা দায়িত্ব পালনকালে কোনোপ্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণের সাথে জড়িত ছিলেন না তাদেরকে সুযোগ দেওয়া উচিত।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দের মুল কাজ নিজে গবেষণা করা এবং ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণায উদ্ধুধ করা। যারা এগুলো করতেছে এদের বিগত কর্মকান্ড দেখলে ই বুঝা যাবে এরা আসলে কি চাচ্ছে আমরা সবাই নতুন একটা বাংলাদেশের সপ্ন দেখতেছি আমাদের নতুন উপাচার্য মহোদয় এসেছেন। উনি একজন ভাল মানুষ আশাকরি ভাল কিছু হবে।
ইইই বিভাগের সাদা দলের সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ড মো ফেরদৌস বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ এর অধিক শিক্ষক রয়েছে। এই সব শিক্ষক অধিকাংশ আওয়ামী পন্থী ছিলো।এদের এখন অনেকে নীল দলের,হলুদ দল ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ করতো। তবে প্রশাসনে জামায়াত, বিএনপি এবং আওয়ামী পন্থী যেই শিক্ষকেই আসুক না কেনো সে যেন নিরপেক্ষ, নির্দলীয়,গবেষণা আগ্রহী থাকে এবং সেই সাথে তার বিরুদ্ধে যেন কোনো অভিযোগ না সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দের মুল কাজ নিজে গবেষণা করা এবং ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণায উদ্ধুধ করা। যারা এগুলো করতেছে এদের বিগত কর্মকান্ড দেখলে ই বুঝা যাবে এরা আসলে কি চাচ্ছেন।
এমএসএম / T.A.S