বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট নিয়ে দ্বন্দ্ব
রাজধানীর মুগদার গ্রিন মডেল টাউনে বেসরকারি বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট নিয়ে দ্বন্দ¦ শুরু হযেছে। অধ্যাপক কামালউদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী বর্তমান বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এবং তার ছোট ভাই সাইয়্যেদ শহীদুল বারী সদস্য সচিব। কিন্তু বড় ভাইয়ের ছেলে ওসমা মোসাদ্দেক বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের সদস্য না হয়েও চাচার কাছ থেকে জোড় করে স্বাক্ষর নিয়ে নিজেকে সদস্য সচিব দাবী করছেন। এ বিষয় তার চাচা সাইয়্যেদ শহীদুল বারী মুগদা থানা একটি অভিযোগ দাখিল করছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এ খসড়ায় বলা হয়েছে, ইউজিসির সুপারিশ ও সরকারি অনুমোদন ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজে কোনো পরিবর্তন হবে না। প্রয়োজনে ইউজিসি বা সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে পারে।
অথচ ট্রাস্টি বোর্ডের আব্দুল্লাহ জাফরীর ছেলে কোন আইন না মেনেই তার আপন চাচা সদস্য সচিব শহীদুল বারী কাছে থেকে জোর করে স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নিজেকে সদস্য সচিব ঘোষণা করছে।
এ বিষয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব সাইয়্যেদ শহীদুল বারীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি এখনও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব। আমার কাজ থেকে জোর করে স¦াক্ষর নিয়ে আমার বড় ভাইয়ের ছেলে নিজেকে সদস্য সচিব দাবী করছে। এ পদটিতে যেতে হলে কতগুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হয়, যার কোনটি তিনি অনুসরণ করেনি। আমাকে লাঞ্চিত করার বিষয় আমি মুগদা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি,তদন্ত চলছে।
অনিয়ম আর লুটপাটের কারণে আগে থেকেই ডুবতে বসেছে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ট্রাস্টি সম্মানি বাবদ নিয়েছেন ছয় কোটি ১৩ লাখ টাকা।আর বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ কোটি টাকা এফডিআরের অর্থও তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে ১০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হলেও জমি কেনা হয়েছে মাত্র তিন কোটি টাকার। ভবন নির্মাণেও করা হয়েছে নানা অনিয়ম। বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিষয় নিয়ে তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
ইউজিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামালউদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনম রফিকুর রহমান এবং সদস্যসচিব সৈয়দ শহীদুল বারী মিলে মাসিক ভিত্তিতে গত ১১ বছরে ছয় কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা সম্মানি নিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান মাসিক সম্মানি ও গাড়ি সুবিধা বাবদ নিয়েছেন তিন কোটি ৬৬ লাখ ছয় হাজার ২১৩ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যান নিয়েছেন এক কোটি ৩৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৮ টাকা এবং সদস্যসচিব নিয়েছেন এক কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৯৪০ টাকা।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রাস্ট ডিডে উল্লেখ রয়েছে, এই ট্রাস্ট জনহিতকর, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক ইসলামী আদর্শে পরিচালিত হবে। ট্রাস্ট প্রপার্টি জনস্বার্থে অর্থাৎ শিক্ষার বিষয়ে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির কিছু ট্রাস্টি এটাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি যখন চরম আর্থিক দৈনদশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখনো এই তিনজন ট্রাস্টি তাঁদের সম্মানি নিয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৪৪(৭) মোতাবেক সাধারণ তহবিলের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ছাড়া অন্য কোনো কাজে খরচ করা যাবে না। তাই আইনবিরুদ্ধ হওয়ায় এ পর্যন্ত গ্রহণ করা সব সম্মানি সাধারণ তহবিলে ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ফেরত দেওয়া না হলে আইনগত প্রক্রিয়ায় অর্থ পুনরুদ্ধারে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা করা যেতে পারে।
এ বিষয় ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক সুলতান মাহমুদ ভুইয়া‘র কাছে জানতে চাইতে তিনি বলেন, আমি এক মাস হয় পরিচালক হিসাবে যোগদান করেছি ,বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয়। তবে আমাকে এ বিষয় লিখিত দিলে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
অভিযোগের বিষয় বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামালউদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী ও তার ছেলে ওসমা মোসাদ্দেকের সাথে যোগা যোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এমএসএম / জামান