ঢাকা বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

তানোরে এক কৃষকের ক্ষেতেই চাষ হচ্ছে ১১৫ রকম ধান


সোহানুল হক পারভেজ, তানোর photo সোহানুল হক পারভেজ, তানোর
প্রকাশিত: ২২-১০-২০২৪ দুপুর ১:২৭

রঘুশাইল, হরিরাজ, সাগর ফেনা, লক্ষ্মীকাজল, কালিটেপি, রত্না, স্বর্ণামাসুরী, নারকেল মুচি, রাঁধুনি পাগল, পাঙ্গাস, ঝিঙ্গাশাইল, কালোজিরা, সুবাস, বাঁশমতি, চিনি শঙ্কর, বাদশাভোগ, এক ধানে দুই চাল, জটাবাঁশ ফুল, বিন্নি। পরিবেশবান্ধব ও সুগন্ধি এসব ধানের নাম এখন আর অনেকের মনে নেই। নতুন প্রজন্ম তো দূরের কথা, প্রবীণদের অনেকের মনের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে নামগুলো। তবে এসব ধান অনেক যত্নে আগলে রেখেছেন কৃষক জাইদুর রহমান। এসব বিলুপ্ত হওয়া ধান নতুন করে ফিরিয়ে আনতে তার নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা রয়েছে।

চলতি আমন মৌসুমে নিজের ক্ষেতে ১১৫ জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন তিনি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েকজন উদ্যোগী কৃষক তার দেয়া ফ্রি বীজ নিয়ে চাষ করেছেন আরও ৩৫ প্রকার ধান।

রাজশাহীর বরেন্দ্র ভূমির তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের বাসিন্দা কৃষক জাইদুর রহমান বলেন, এমন উদ্যোগী হওয়ার বড় কৃতিত্ব তার বড় ভাই ইউসুফ মোল্লার। ২০২২ সালে বড় ভাই ইউসুফ মোল্লা মারা যাওয়ার পর তার বীজভাণ্ডারের দায়িত্ব নেন তিনি। আদর্শ কৃষক হিসেবে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ইউসুফ মোলস্না। তার প্রচেষ্টায় বিলুপ্তপ্রায় ২৫০-এর বেশি ধানের বীজ তার বীজভাণ্ডারে সংরক্ষণে আছে। এত রকম জাতের ধান একসঙ্গে চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে ইউসুফ মোল্লার বীজভাণ্ডারই প্রথম স্থানে আছে বলে দাবি করেছেন কৃষক জাইদুর রহমান ও কৃষি কর্মকর্তারা।

ব্যক্তি উদ্যোগে এসব বিলুপ্ত ধানের বীজ দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণে আছে ইউসুফ মোল্লার বরেন্দ্র বীজভাণ্ডারে। ২০১২ সাল থেকে রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুরসহ সারাদেশে প্রায় ৩০০ কৃষককে তিনি এসব বীজ শর্তসাপেক্ষে সরবরাহ করেছেন। এছাড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকায় ১০০-এর বেশি ও রাজশাহী গবেষণাগারে প্রায় ৬৫ জাতের ধানবীজ সরবরাহ করেছেন। সরবরাহ করা বীজের মধ্যে চলতি আমন মৌসুমে ১৫০ প্রকার ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে নিজের ক্ষেতে এবার ১১৫ প্রকার, একই উপজেলায় ১০, বগুড়ায় ১৫, নীলফামারীতে ১০ এবং ঝিনাইদহে চাষ করা হয়েছে ১২ প্রকার ধান।

সম্প্রতি সরেজমিন দুবইল গ্রামে কৃষক জাইদুর রহমানের ক্ষেতে দেখা গেছে, প্রায় এক একর জমিতে ১১৫ প্রকার ধান চাষাবাদ করেছেন। ১০০ বা অর্ধশতক করে একেক প্রকার ধান চাষ করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেতে আলাদা করে ধানের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড দেয়া আছে।

জাইদুর রহমান সকালের সময়কে জানান, পরিবেশবান্ধব সুগন্ধি এসব ধান অল্প দিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে গত ২৫ বছর আগ থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ করছিলেন বড় ভাই ইউসুফ মোল্লা। এখন পর্যন্ত ২৬০-িএর বেশি বিভিন্ন জাতের ধানবীজ সংগ্রহ করেছেন। ২০১২ সাল থেকে ৫০টি করে জাতের ধান তিনি অল্প করে আবাদ করেন। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করছেন।

জাইদুর রহমান আরো জানান, যেসব কৃষককে এসব হারানো ধানের বীজ সরবরাহ করছেন, তা শর্তসাপেক্ষে। তা হলো বীজের বদলে বীজ। একজন কৃষক তার কাছ থেকে ৫ কেজি বীজ নিলে ধান উৎপাদনের পর সে আবার ৫ কেজি বীজ ফেরত দেবে। এছাড়া সংগ্রহে থাকা ১০০ প্রজাতির বেশি বীজ গাজীপুর ধান গবেষণা কেন্দ্র ও রাজশাহী ধান গবেষণা কেন্দ্রে ৬৫ রকম বীজ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ৭২, ঝিনাইদহ ১২ প্রকারসহ দেশে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব জাতের ধান সরবরাহ করেছেন। তারা সেগুলোর বিস্তার করা নিয়ে গবেষণা করছে। বিলুপ্ত বীজ সংরক্ষণের উদ্যোগে উৎসাহ জোগাচ্ছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আর আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিক।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে যেসব বস্তু দ্রুত বিলুপ্ত বা হারিয়ে যাচ্ছে সেসব নিয়ে গবেষণা করেন। এগুলো কিভাবে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে কাজ করে থাকেন তিনি। উদ্দেশ্য হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো নতুন প্রজন্ম যেন চিনতে পারে ও বুঝতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় তানোরের দুবইল গ্রামের কৃষক ইউসুফ মোল্লা ২০১০ সাল থেকে বিলুপ্ত বীজ সংগ্রহের বিষয়ে আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছেন বারসিককে।

অমৃত সরকার বলেন, ২০২২ সালে কৃষক ইউসুফ মোল্লার মৃত্যুর পর তার বীজ সংগ্রহের কাজ যেন বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য তার ছোট ভাই কৃষক জাইদুর রহমানকে উদ্যোগী করা হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে বারসিকের আর্থিক সহযোগিতায় এক একর জমি লিজ নিয়ে জাইদুর রহমানকে দেয়া হয়। এতে ১১৫ জাতের ধান চাষ হয়েছে।

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুলস্নাহ আহম্মেদ সকালের সময়কে বলেন, কৃষক ইউসুফ মোল্লার ২৫ বছরের প্রচেষ্টায় বরেন্দ্র থেকে অনেক নামিদামি বিলুপ্ত ধান নতুন করে জীবন পেয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের মধ্যে তানোর উপজেলার কৃষক হিসেবে ইউসুফ মোল্লা রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের সুনাম ধরে রেখেছেন। ইউসুফ মোল্লার মৃতু্যর পর তার ভাই কৃষক জাইদুর রহমান বীজ সংগ্রহের কাজ এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছেন। তাতে বিলুপ্ত ধান সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম আরো জানতে পারবেন। এজন্য তাকে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এমএসএম / জামান

তারেক রহমানের সংবর্ধনা : চাঁদপুর থেকে যাবে ২৫ হাজার নেতাকর্মী

নাগেশ্বরীতে পূর্ব দুধকুমর পাড় মানব কল্যাণ যুব সংগঠনের শীত বস্ত্র বিতরণ

ভোলাহাট সদর ইউনিয়নে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

দূর্গম পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন করল সেনাবাহিনী

বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারকালে ৩ বাংলাদেশি আটক

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গরু দিয়ে হালচাষ এখন শুধুই স্মৃতি

গাজীপুর রেড ক্রিসেন্ট নির্বাচন: বিএনপি সমর্থিত বাবুল-টুলু প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয়

জয়পুরহাটে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে অ্যাডভোকেসি ডায়ালগ

ভূঞাপুরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দেড় লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

মান্দায় দায়সারা কাজ করে প্রকল্পের সাড়ে ৩০ টন চাল গায়েব

অভয়নগরে মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে কম্বল বিতরণ

তানোরে অসহায় দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ

ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেন দীর্ঘদিন বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা