শেখ পরিবারের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা রেজাউল ও রায়হানের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনডিই’আছেন বহাল তবিয়তে
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মূখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর পরই একের পর এক বেরিয়ে আসে ঠলের বিড়াল ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের আমলা এমপি মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তাদের পাহাড় পরিমান দূর্নীতির খবর। সরকারের আমলা মন্ত্রীদের কার কত সম্পদ- এ নিয়ে যেমন কৌতূহল সব মহলে তেমনি সরকারী আমলাদের সম্পদ নিয়েও জানার আগ্রহ কম নয়।তার মধ্য বাদ যায় আমলা-মন্ত্রী শেখ পরিবারের সদস্যের ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকা কাজ ভাগিয়ে নেওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলোর ।
বিগত ১২ বছরে সড়কে ব্যয় ৮৩ হাজার কোটি টাকা।শতাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনলিস্টেড থাকলে ও স্বৈরাচার ক্ষমতাসীন আমলা মন্ত্রীদের খুঁটির জোরে কাজ পেয়েছে ১৫ প্রতিষ্ঠান। আশীর্বাদ ছিল কাদের, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, তারিক সিদ্দিকি,ববি সিদ্দিকী,লিটন চৌধুরী,নিক্সন চৌধুরীসহ আরো অনেক ক্ষমতাশীন আওয়ামালীগ অনেক এমপি মন্ত্রীরা।
সড়কের ঠিকাদারি কাজে এক বিস্ময়ের নাম ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই)।২০১৭ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটি সড়কে কাজ শুরু করে। মাত্র ছয় বছরে তারা সড়কে একক ও যৌথভাবে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি ভাগিয়ে নিয়েছেন,যা মোট কাজের ১০ শতাংশ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সাতজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, এনডিই ঠিকাদারি কাজ পেতে আওয়ামীলীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত। ওবায়দুল কাদের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছিলেন যে প্রতিষ্ঠানটির পেছনে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক,ববি সিদ্দিকী ও সংসদ এর সাবেক চীফ হুইপ লিটন চৌধুরী ।এনডিই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালনা রেজাউল ও রায়হান লিটন চৌধুরীর বায়রা ভাই ।সেই সুবাধে সড়কে এক রাজস্ব কায়েম করেছেন এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনডিএ(NDE)। অবৈধ উপায়ে মানিলন্ডারিং করে দেশে বিদেশী করেছেন সম্পদের পাহাড়।
২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এক যুগে সওজের ঠিকাদারি কাজের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ সময়ে এনডিইর মতো ১৫টি প্রতিষ্ঠান ব্যয়ের দিক দিয়ে মোট কাজের ৯০ শতাংশ পেয়েছে। এক যুগে সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে সরকার। যার মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার কাজ একক ও যৌথভাবে পেয়েছে ওই ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদারি কাজ পাওয়া, নিম্নমানের কাজ করে টাকা তুলে নেওয়া এবং বেশি কাজ করা দেখিয়ে বাড়তি বিল আদায়ের অভিযোগ ও রয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনডিই এর বিরুদ্ধে ।যদিও বিগত সরকারের আমলে ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে পড়েছিল।এটা ছিল দুর্নীতির মহামারি বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সামছুল হক । অভিযোগ আছে,গত ৬ বছরে শেখ পরিবারের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সুধু সড়ক থেকে মিনিমাম ২ লক্ষ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়েছে এনডিই ।দেশে বিদেশে করেছেন সম্পদের পাহাড়।
অভিযোগ আছে,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন’কে প্রতিহত করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামালীগের বিভিন্ন এমপি মন্ত্রীদের বিপুল পরিমান অর্থের যোগান দিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনডিই ।নিজেরা মাঠে না থাকলে ও তাদের ব্যক্তিগত লাইসেন্সকৃত অস্ত্রগুলো বডিগার্ডদের দিয়ে ছাত্র জনতার আন্দোলনে বনানী গুলশান নিকেতন এলাকায় গুলি চালিয়েছেন ।
অনুসন্ধানে জানা যায়,সংযুক্ত আরব আমিরাত ওমান থেকে পাথর ইমপোর্ট করে চায়না থেকে রেডি মিক্সড আনলে ও টাকা লেনদেন করেন বিস্বস্ত হুন্ডির মাধ্যমে যাতে করে বাংলাদেশ সরকারে বড় ধরনের কর ফাঁকির দেওয়ার সুযোগ থাকে যাহা মানিলন্ডারিং এর সামিল ।
সওজের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ১ হাজার ১০০টি; কিন্তু মাত্র ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে ৯০ শতাংশ কাজ পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সওজের প্রকৌশলীরা বলছেন, এসব ঠিকাদার সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের ‘আশীর্বাদে’ ছিলেন। যদিও ঠিকাদারদের কেউ কেউ বলছেন, নেতাদের আশীর্বাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও সওজের কর্মকর্তাদের ‘কমিশন’ দিতে হতো। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নিলেই তাদের অবৈধ আয় বেরিয়ে আসবে।
সড়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, আসলে বিগত সরকারের আমলে কাকে কাজ দেওয়া হবে, তা আগে ঠিক করা হতো। এরপর দরপত্র ডাকার আনুষ্ঠানিকতা করা হতো। তিনি বলেন, এটা আর চলবে না। প্রতিযোগিতা বাড়াতে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হবে। অতীতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তিনি একটি বিস্তৃত তদন্ত করার কথাও ভাবছেন।
সওজর তথ্য বলছে, এনডিই সড়কে মাত্র ছয় বছর কাজ করে এক যুগে সর্বোচ্চ কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে। জাল ও ভুয়া নথি জমা দিয়ে ঠিকাদারি কাজ নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পেয়ে গত ৬ জুলাই ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এনডিইকে। তখন তারা উচ্চ আদালতে যায়। আদালত নিষিদ্ধ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
সাগর ইনফো বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কে ৩৯টি কাজ করেছে। সওজ সূত্র বলছে, এর সব কটিই এনডিইর সঙ্গে যৌথভাবে করেছে তারা। এটিও তারিক আহমেদ সিদ্দিকের আশীর্বাদপুষ্ট।
এছাড়াও আরো অভিযোগ আছে, সড়কে যাদের কাজ দেওয়ার চেষ্টা থাকে, তাদের সরকারি প্রাক্কলন আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনি কাজ পান। দরপত্রের শর্তও পছন্দের ঠিকাদারের যোগ্যতার সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়।
ঘুষ গ্রহণ, কাজ পেতে অবৈধভাবে সহায়তা করা ও জালিয়াতির সুযোগ করে দেওয়ার দায়ে সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন সামছুল হক। তিনি বলেন, এর জন্য একটা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত করা জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকে বলেন,কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোনো গোষ্টির নাম ভাঙ্গিয়ে জোরপূবর্ক কিছু আদায় করা দূর্নীতির সামিল ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত আইনের আওতা নিয়ে আসতে হবে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনডিইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়হান মুস্তাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী, তারিক সিদ্দিককে লাগে না। খালেদা জিয়াও আমার আত্মীয়।’ তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত। তারা গণপূর্তের কাজ বেশি করেছেন। পরে সড়কে এসেছেন। সরকারি প্রাক্কলনের চেয়ে কম টাকায় দরপত্র দিয়ে তারা কাজ পেয়েছেন।
এমএসএম / এমএসএম