স্বপ্না পারভীন সন্ত্রাসীর চেয়েও ভয়ংকর
ঢাকার ধানমন্ডির মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীন সন্ত্রাসীর চেয়েও ভয়ংকর রূপের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করছেন একই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক। ষড়যন্ত্র, মারামারি, হুমকিধামকি এবং আদালত মামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নানারকম ফাঁদ পাততে পারেন এই প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীন। স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সহকারী শিক্ষক লায়লা আফরোজের ওপর অতর্কিত হামলা করে স্বপ্না পারভীন সন্ত্রাসীর চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের কোচিং করতে বাঁধ্য করার কৌশল অবলম্বন করতে দু-তিনজন শিক্ষক তার ইশারায় চলে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার স্কুল থেকে নিহত হওয়া অষ্টম শ্রেণির আব্দুল মোতালেব নামের এক ছাত্রের লাশ নিয়েও ষড়যন্ত্র করে প্রতিপক্ষের একজন শিক্ষককে দমন করার অপকৌশল করেছিলো। স্বপ্না পারভীনের অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করায় ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে হাফিজ নামের একজন সন্ত্রাসীকে দিয়ে সাংবাদিককে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলো। একই সময়ে তিনি আরো দুজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দিয়েছিলো।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের সময়কে জানিয়েছেন থানা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে একটি অভিযোগ প্রধান শিক্ষক আমার কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করবো। তদন্তের পরে ব্যবস্থা। প্রাথমিকের বিভাগীয় উপ পরিচালক (ডিডি) আলী রেজা একই কথা বলছেন সকালের সময়কে। কি বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা জানতে এই প্রধান শিক্ষককের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীনকে ইতোমধ্যেই ঢাকার চানখারপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। তবে সেই বদলির বিরুদ্ধে তিনি আপীল করছেন প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে। তার দপ্তরের সচিব মহাপরিচালক বিভাগীয় উপপরিচালককে তিনি সেই আপীলে বিবাদী করছে। হাজারীবাগের স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ১৪ নাম্বার ওয়ার্ড সভাপতি সৈয়দ আমিনুল হোসেন খোকনের ছত্রছায়ায় এই প্রধান শিক্ষক সরকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো। স্থানীয়রা বলছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা খোকন ছিলো একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। খোঁজ নিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি, সকলেই বলছে তিনি এখন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
সরজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায় মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্কুল নিয়ে তার গঠন করা আছে বিশেষ এক সিন্ডিকেট। বিদ্যালয়ে সময়মত পাঠদান না করা, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক পন্থায় টাকা আদায়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে দেয়ার হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চিঠি দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। তাছাড়া কোন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই মারধর, মামলা-হামলার শিকার হয়ে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। স্বপ্না পারভীনের ভয়ে স্কুল সংশ্লিষ্ট লোক ও অভিভাবকরা তটস্থ থাকেন।
রাজধানীর জিগাতলা ট্যানারি মোড়ে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারী বিশেষ বরাদ্দে ২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি নামে সরকারি বিদ্যালয় হলেও টাকা ছাড়া গরীব শিশুরা এখানে পড়তে পারে না। বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায়ই টাকা আদায় করেন শিক্ষকরা। এতে প্রতি বছর অসংখ্য শিশু বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ছে। প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীনের অনিয়ম-দুর্নীতির ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় একাধিক শিক্ষককে মারধর ও মামলা হামলা করে স্কুল ছাড়া করেছেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভিন ৬ষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ ১০০০ টাকা, টাই বাবদ ৭০ টাকা, সিলেবাস বাবদ ৭০ টাকা, এবং পরীক্ষার ফি বাবদ ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করেছেন বলে ২০২৩ সালে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত কমিটি। এরপর ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক কার্যালয়ের স্বারক নম্বর ৩৮.০১.৩০০০.০০০.২৭.০৪৩.২৩-১৮৩ (৬) অফিস আদেশে মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীনকে অসদ আচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে। তাছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি পৃথক চিঠিতে তাকে চানখাঁরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি বদলির আদেশ না মেনে ওই চিঠির কার্যকারিতা চ্যালেঞ্জ করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আদালত চলতি বছরের গত ২৭শে আগস্ট তার দন্ড বহাল রেখে রায় দেয়ার পরেও তিনি স্বস্থানে অবস্থান করে অভিযোগকারী ও স্বাক্ষীদের বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি দেখান এবং মারধর করে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলে শিক্ষার্থীদের র্যাগিং শুরু করেন। এতে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লায়লা আফরোজ শিক্ষকদের অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই প্রধান শিক্ষক তার সিন্ডিকেট নিয়ে এই সহকারী শিক্ষিকাকে নির্যাতন করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীনের নেতৃত্বে সহকারী শিক্ষিকা উম্মে হাবিবা, মোঃ রফিক আহমেদ, সায়মা আক্তার টুসি, সোনিয়া আহমেদ, তানিয়া আহমেদ, ইসরাত জাহান, তৃপ্তি দে, তাসলিমা আক্তার এবং মিশরাত জাহান ডালিয়া মিলে অপর সহকারী শিক্ষিকা লায়লা আফরোজকে ব্যাপক মারধর করে আহত করে। শারীরিকভাবে আক্রমণ চালান। এসময় তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও হাতে থাকা স্বর্ণের বালা ছিনিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় আহত শিক্ষিকা হাজারীবাগ থানায় মামলা করতে গেলেও তার মামলা নেয়নি পুলিশ। ওই ঘটনা সাজাতে সহকারী শিক্ষক রফিক অসুস্থতার অভিনয় করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার পায়তারা করছে। এর আগেও নানা অজুহাতে ও শিক্ষিকার উপর একাধিকবার আক্রমণ চালায় ওই সিন্ডিকেট।
এছাড়াও ওই সিন্ডিকেটের অত্যাচারে বিগত কয়েক বছরে অন্তত আরো দুই শিক্ষিকা স্কুলটি ছেড়ে চলে গেছে। তাদের মধ্যে সহকারী শিক্ষিকা সুরাইয়া আক্তার মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগে ছুটিতে রয়েছেন। আরেকজন সৈয়দা মাহবুবা খাতুন চাকরি ছেড়ে বিদেশে চলে গেছেন।
প্রধান শিক্ষকের হামলার ঘটনা জেনে নির্যাতনের শিকার সহকারী শিক্ষক লায়লা আফরোজকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সকালের সময় তার সাথে কথা বলে, আহত সহকারী শিক্ষিকা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই এখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি, পরীক্ষার ফিসহ অনৈতিকভাবে বিভিন্ন সময়ে টাকা উত্তোলন করে আসছেন প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীন ম্যাডাম। এতে বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। আমি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করতে অপারগতা জানালে নানাভাবে আমাকে নির্যাতন চালাতে থাকেন প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক জনাব মো: রফিক আহমেদ ও উম্মে হাবিবা । এক পর্যায়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা শিশু নির্যাতনের অভিযোগ এনে মিথ্যা জিডি করে আমাকে হয়রানি করেন। আদালত থেকে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর পুণরায় তিনি আমার উপর বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানি শুরু করেন। বিগত ২৯/১০/২০২৪ তারিখে আবার একটি মিথ্যা জিডি করেন হাজারীবাগ থানায়। এক পর্যায়ে গত ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষিকাসহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মিলে আমাকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পূণরায় টাকা উঠাতে বললে আমি অপারগতা প্রকাশ করায় আমার পাঠদানরত ক্লাসে ঠুকে একপর্যায়ে প্রচন্ড মারধর করে ও আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন এবং হাতের বালা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনা আমি হাজারীবাগ থানায় অভিযোগ দিলে এখন পর্যন্ত মামলা করেনি পুলিশ। বর্তমানে আমি জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীন ম্যাডাম এই ঘটনার পর আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে মিথ্যা অজুহাতে মিছিল করানোর উপস্থিতি নিচ্ছেন বলেও আমি শুনেছি। আমার বাসায় লোক পাঠিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। হয়রানির শিকার অভিভাবকরা অনেকবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করলেও কোনো সমাধান পায়নি।
স্কুলের অপর এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, চলতি মাসের ৭ তারিখ বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১টা ১৫ মিনিটের সময় ৫ম শ্রেণীর সুরমা শাখার বাংলা ক্লাসে পাঠদানরত থাকা অবস্থায় হেড আপা ওই দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত সকল সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে ওই ক্লাসে ঢুকে লায়লা আফরোজকে মারাত্মকভাবে মারধর করেন। তাকে কোনভাবে প্রাণে বাঁচিয়ে কক্ষ থেকে বের করে আনি। তখনই লায়লা আফরোজ অজ্ঞান ছিলো। তার মাথা, ঘাড় আর বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল জখম হয়েছে দেখলাম। এসময় আক্রমণকারী শিক্ষক স্বপ্না পারভীন লায়লা আফরোজের গলার চেইন, হাতের বালা, ব্যাগে থাকা কুরি হাজার টাকা, প্রোফেশনাল আইডিকার্ড ছাড়াও গুরুত্বপুর্ণ ডকুমেন্ট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ফজলে রাব্বি ও ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানজিলার মা ময়না বেগম জানান, মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীন, সহকারী শিক্ষক মো. রফিক, উম্মে হাবিবা, সোনিয়া আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফর্ম বিক্রি করা থেকে শুরু করে টাই, মনোগ্রাম, টেস্টমোনিয়াল বিক্রি ও আয়ার টাকাসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে থাকে। এছাড়াও বছরে ৮টি পরীক্ষার নামে ৫০০ টাকা ফি নেয়া হতো। ময়না বেগম আরো জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও বেশ খারাপ হয়ে গেছে। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০-তে নেমে এসেছে, তার মধ্যেও অনেকেই নিয়মিত স্কুলে আসে না। প্রধান শিক্ষিকা এবং শিক্ষকদের অনিয়ম-দুর্নীতি, শিশু শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অনৈতিকভাবে টাকা উত্তোলন, নিয়মিত স্কুলে না আসা, ক্লাস ঠিকমতো না হওয়া এবং শিক্ষার মান নিম্নমুখী হওয়ার ফলে অভিভাবকরা অনেকবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করলেও কোনো ফল মেলেনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, থানা শিক্ষা অফিসারসহ আদায় করা টাকা শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়ে তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করেন। এই সবকিছুর ফলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ খুবই নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। অর্থের অভাবে স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলেও যেতে পারছি না। তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, আমরা গরীব মানুষ। এই স্কুলের সরকারি সকল সুবিধা থাকার পরেও এত টাকা দিতে হয়, যে প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর মতো খরচ হয়ে যায়। অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে তিনি অভিভাবকদের হুমকি দেন। কেউ তার স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে অভিযোগ করতে এলে, তাকে অপমানিত করা হয়। বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ধরনের ভীতি প্রদর্শনের কারণে অধিকাংশ অভিভাবকরা মুখ খুলতে সাহস পান না এবং সমস্যাগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ জানাতেও নিরুৎসাহিত হন তারা। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীনের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের রেজিস্টার খাতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেওয়ার তথ্য। এই তালিকায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে জোবায়ের বিন আব্দুর রাজ্জাক, সাহাব হোসেন আলিফ, মাহামুদুল হাসান সিয়াম, তাহিয়া, আব্দুল আহাদ, তৌসিফা, তাহমিনা, মোস্তাকিম, জাইয়ান শিকদার এবং হুমায়রা। জানা গেছে, এভাবে বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে এই টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা, সেতু, রিয়া, সুমাইয়া, ইয়াসিন, লিমন, নীপা মনি, সুস্ময়, শ্যামলী, নাসরিন, সিয়াম এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শান্ত, মিম, তানিশা ও তাদের অভিভাবক প্রমুখসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তাই স্কুল সিন্ডিকেটের হাতে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাদের।
স্থানীয় থানা হাজারীবাগের ওসি সাইফুল ইসলাম সকালের সময়কে জানিয়েছেন ওই স্কুলে হামলার ঘটনা তিনি জানেন। তিনি বলছেন, দুটি পক্ষ থেকে আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। যেহেতু দুজনেই সরকারি স্কুলের শিক্ষক, সরকারি চাকুরীজীবীদের ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত নিলে আদালতের কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। দুই পক্ষকে আপাতত শান্ত থাকতে পরামর্শ দিয়েছি। ওই থানার অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানাযায় এদের এই দ্বন্দ্ব নতুন মনে হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক তার আধিপত্য বিস্তার এবং তার নিজস্ব প্রভাব খাটাতে সহকারী শিক্ষকের ওপর এমন হামলা করছে।
এমএসএম / T.A.S