শিবচরে শীতকাল এলেই পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শীতকাল এলেই জমে ওঠে পিঠা-পুলির বাজার। কুয়াশা মুড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা ভাঁপা-চিতই পিঠার স্বাদ না নিলে যেন তৃপ্তি মেটে না অনেকের। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসা নানা মুখরোচক পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় শীতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকার পিঠা-পুলি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, শিবচরের বিভিন্ন স্থানে ও হাটবাজারে, সন্ধ্যা এলেই লোকজন রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ও বসে গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠা খেতে ভিড় জমাচ্ছেন। পিঠা তৈরি ও বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বসে বন্ধু-বান্ধবসহ পিঠা খাচ্ছেন। আবার অনেকে পার্সেল বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিঠা বিক্রি করেই শীতের সময় অনেকে সংসার চালান। শিবচর পৌরসভার বাজারগুলোর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে, ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা। অনেকেই মৌসুমী এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তেমন একটা পুঁজি লাগে না বলে সহজেই এ ব্যবসা শুরু করা যায়। তাই তো অনেকেই মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে এটা বেছে নেন। এ ছাড়া এসব দোকানগুলোতে দেখা যায় পিঠা প্রেমী লোকজনদের উপচেপড়া ভিড়। বিক্রেতারাও আনন্দের সঙ্গে পিঠা বিক্রি করে থাকে। পৌর বাসস্ট্যান্ড, লালন মঞ্চ,উপশহর সহ পৌরবাজারের সদরের ফুটপাতে এই পিঠার দোকান দেখা যায়। শীতের পিঠা বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করছেন অনেকে।
পিঠা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব দোকানগুলোতে পিঠা বলতে পাওয়া যায় ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা। তাই মৌসুমি এই পিঠার প্রতি অনেকের বেশ আগ্রহও দেখা যায়। বছরের সাময়িক সময়ের এই পিঠার বাজার এখন পুরোদমে জমে উঠেছে।বিকাল থেকে পিঠা বিক্রি শুরু হলেও বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় এই পিঠার চাহিদা বেশি থাকে বলেও জানান বিক্রেতারা।
পিঠা বিক্রেতা মোতালেব মিয়া জানান, পুরো শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রি করবো। বিকাল থেকে পিঠা বিক্রি শুরু হয়। সন্ধ্যা হলে ক্রেতা সমাগম বাড়ে, যা রাত দশটা পর্যন্ত চলে। প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি চালের গুঁড়ার পিঠা বিক্রি হয়।আমরা কয়েক পদের ভর্তার দিয়ে থাকি যেমন, শুঁটকি, কালোজিরা, সর্ষে, ধনিয়াপাতা বাটা, ভর্তাসহ বিভিন্ন উপকরণ মিলিয়ে চিতই পিঠা বিক্রি করা হয়। এখানে ভাপা আর চিতই পিঠার চাহিদা বেশি। চিতই পিঠা প্রতি পিস ১০ টাকা এবং ভাপা পিঠা প্রতি পিস ১৫ টাকা করে বিক্রি হয়।
মাওলানা মোহাম্মদ ছোবাহান বলেন, আমি প্রায় দিনই সন্ধ্যার পর এই দোকান থেকে পিঠা খাই। শীতকালের খাবারের মধ্যে পিঠা অন্যতম। আগে যদিও বাড়িতে এসব পিঠা বানানোর হিড়িক পড়তো এখন তা আর দেখা যায় না। তবে রাস্তার পাশে খোলা বাজারে তৈরি পিঠাতে ধুলা-বালিসহ নানা রকম জীবাণু লেগে যেতে পারে। যা হতে পারে পেপটিকালচার ডিজিজ, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানা ধরনের কঠিন শারীরিক সমস্যার কারণ। তাই পিঠা তৈরি ও তা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
পিঠা খেতে আসা মিঠুন বিশ্বাস বলেন, পিঠাগুলোর স্বাদ একদম ঘরের তৈরি পিঠার মতো। মনে হচ্ছে ছোটবেলার শীতকালের দিনে ফিরে গেলাম।
T.A.S / T.A.S