প্রকৃত সত্য ঘটনা আড়াল করে সংবাদ প্রকাশ করেছে ইনকিলাব, অনুসন্ধানে যা জানা গেল?
দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রথম পাতায় গত ১০/১১/২০২৪ ইং তারিখে “লুটেরার হাতে হাসিনার রপ্তানি ট্রফি” বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ, শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর নোমান গ্রুপের প্রতিবাদলিপি দেখে দৈনিক সকালের সময় সরেজমিনে অনুসন্ধানে নেমেছে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও আসল ঘটনা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে। যেহেতু সংবাদপত্র হচ্ছে জাতির দর্পন। তাই সাংবাদিকতার আদর্শকে ধারন ও বহন করে আমরা নিরপেক্ষভাবে উক্ত প্রতিবেদনটির পুঙ্খানু পুঙ্খভাবে বিশ্লেষন করে প্রতিবেদক এই অনুসন্ধানি সংবাদ তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে আমাদের এবং সংগ্রহ করা হয়েছে প্রমান পত্র। ১৩২ নং পাগাড় মৌজার সি,এস খতিয়ান নং- ৫৩, ৪৮, ৮৪, ৭৬, ৯০, এস,এ খতিয়ান নং- ৮৬, ৭৮, ১৫০, ১৩৩, ১৬০, এবং সি,এস ও এস,এ দাগ নং-৪১৭, ৪৮০, ৫০২, ৫০৪, ৫০৬, ৫০৭, ৫০৯, ৫১২, দাগের রেকর্ডীয় মালিক পরেশ নাথ সরকার গং। উক্ত পরেশ নাথ সরকার গং ভোগ দখলে থাকাবস্থায় গত ১৫/০১/১৯৭০ইং তারিখে জয়দেবপুর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে রেজিষ্ট্রীকৃত ১০৮২ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা ৭.১৮ একর বা ২০.৫১ বিঘা প্রায় ভূমি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এমপ্লয়ীজ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড এর পক্ষে চেয়ারম্যান গোলাম কবির খান ও সেক্রেটারী বজল করিম খান বরাবরে বিক্রয় করে দেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উক্ত সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়ীজ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়ীজ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড এর পক্ষে চেয়ারম্যান গোলাম কবির খান ও ট্রেজারার আলী আজগর আহমেদ গত ১৯/১১/১৯৭৯ইং তারিখে রেজিষ্ট্রীকৃত ৪৩১৯৫ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা ৬.৫০ একর বা ১৮.৫৭ বিঘা ভূমি এস, এম আহাদ ও এস,এম আহাদের স্ত্রী আমেনা খাতুন এর বরাবরে বিক্রয় করে দেন।
এস, এম আহাদ ও মিসেস আমেনা খাতুন গত ১৬/০১/১৯৯৬ইং তারিখে ২২৮ ও ২৩০ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা নোমান স্পিনিং মিলস লিঃ ও নোমান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এর নিকট সি,এস ও এস, এ - ৫০৪, ৫০৭, ৫০৯, ৫১২ ও ৫০২ নং দাগের ২৬৬.৭৫ ও ৬৬ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া দেন। পরবর্তীতে নোমান স্পিনিং মিলস লিঃ ও নোমান টেক্সটাইল মিলস লি: খরিদ সূত্রে মালিক থাকিয়া গত ১৬/০৬/২০০৫ইং তারিখে ২১৯১ ও ২১৯২ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা সি,এস ও এস, এ - ৫০৪, ৫০৭, ৫০৯, ৫১২ ও ৫০২ নং দাগের ২৬৬.৭৫ ও ৬৬শ তাংশ জমি জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিঃ এর নিকট বিক্রয় করে দেন।
উপরোক্ত সি,এস- ৪১৭, ৪৮০, ৫০৬ ও ৫১২ (আংশিক) নং দাগের (৭১+৬৮+২১৯+২৭.২৫) = ৩৮৫.২৫ শতাংশ সম্পত্তি হইতে ৪১৭ নং দাগে ২১ শতাংশ ভূমি ১২৫২ নং জোতে কাদিলা আনজুম, ২৫ শতাংশ ভূমি এ, এফ, এম আলী কামাল এর নামে জোত ভুক্ত হয় এবং ৫১২ নং দাগে ২৭.২৫ শতাংশ ভুমি জোতে রিফাত গার্মেন্টস ও ৭৭১৪, ৬৮৮৮, ১৬৬৩ নং জোতে ছোবহান এবং খালিদ হোসেন এর নামে জোত ভুক্ত হয়। এবং ৪৮০ ও ৫০৬ নং দাগের জমি সমূহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গের দখলে আছে। ইনকিলাব প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছিলো নোমান গ্রুপ আহাদ গং থেকে ২০ বিঘা জমি কিনেছে যাহা ডাহা মিথ্যা ও কাল্পনিক দাবী করেছে নোমান গ্রুপ। নোমান গ্রুপ আহাদ গং থেকে জমি ক্রয় করেছে ৯.৫০ বিঘা প্রায় অবশিষ্ট জমি অন্যরা ক্রয় করেছে।
১৯৯৬ সালের ১৬ জানুয়ারী টঙ্গী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে ২টি দলিল (নং ২২৮ ও ২৩০) সম্পাদিত হয় উক্ত দলিলে উল্লেখিত সম্পত্তির ওপর মিল নোমান স্পিনিং লিমিটেড ও নোমান টেক্সটাইল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড স্থাপন করে অত:পর সম্পত্তি অতিমূল্যায়িত করে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, পল্টন শাখা থেকে অন্তত: দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রতিবেদনে অভিযোগ করেন। উক্ত বক্তব্য অস্বীকার করে নোমান গ্রুপ কর্তৃপক্ষ বলেন নোমান স্পিনিং লিমিটেড ও নোমান টেক্সটাইল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এর জমি ২২৮ ও ২৩০ নং দলিল ইসলামী ব্যাংকের পল্টন শাখায় বন্ধকও রাখা হয়নি এবং লোনও নেয়া হয়নি।
প্রতিবেদনের সত্যতা জানার জন্য ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, পল্টন শাখায় যোগাযোগ করা হলে শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরুল করমি জানান, ২২৮/২৩০ নং দলিল এর সম্পত্তি অত্র শাখায় বন্ধক রেখে নোমান স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও নোমান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে ১৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়নি এবং এই সম্পত্তি বন্ধক রাখার তথ্য গোপন করে ২০০৫ সালের ১৬ জুন নোমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাবের এন্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড এর কাছে পৃথক ২ টি বিক্রি দলিল (নং ২১৯১/২০০৫ ও ২১৯২/২০০৫) সৃষ্টি করে চার হাজার কোটি টাকার টার্ম লোনও দেওয়া হয়নি। এসব হাস্যকর, মনগড়া, মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। নোমান গ্রুপ আমাদের ব্যাংকের ভালো গ্রাহক। ব্যাংকখাতকে অস্থিতিশীল করতে এমন অপপ্রপ্রচার ও গুজব চালিয়ে যাচ্ছে। ইনকিলাবের মত পত্রিকা এ ধরনের মিথ্যা, মনগড়া ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা দুঃখজনক। আমাদের বক্তব্য না নিয়ে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার করা সঠিক হয়নি।
ঐ সম্পত্তি বন্ধক রাখার তথ্য গোপন করে ২০০৫ সালের ১৬ জুন নোমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাবের এন্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড এর কাছে পৃথক ২ টি বিক্রি দলিল (নং ২১৯১/২০০৫ ও ২১৯২/২০০৫) সৃষ্টি করে অত:পর ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি, দিলকুশা শাখায় বন্ধক রেখে আরও অন্তত: দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে এবং উক্ত ২টি ব্যাংক অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি থেকে আরও ৪ হাজার কোটি টাকার টার্ম লোন নিয়েছে মর্মে যে তথ্য প্রতিবেদনে এসেছে নোমান গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।
এই বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের দিলকুশা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ইনকিলাবে যে দলিল নং ২২৮/২৩০ উল্লেখ করা হয়েছে তার অনুকুলে বর্তমানে কোন ঋণ স্থিতি নাই। আমাদের বক্তব্য না নিয়ে এই সব প্রতিবেদন প্রকাশ করা সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলে মনে করি। সঠিক সংবাদ প্রকাশ না করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ডাকা যায় না।
প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানতে নোমান গ্রুপের লিগ্যাল উইংস এর ম্যানেজার আমিরুজ্জামান রকি জানান পরেশ নাথ সরকার গং থেকে গোলাম কিবরিয়া গং এবং গোলাম কিবরিয়া গং থেকে আহাদ গং এবং আহাদ গং থেকে নোমান স্পিনিং মিলস লি: ও নোমান টেক্সটাইল মিলস লি: তৎপরবর্তীতে জাবের এন্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স মিলস লি: পর্যন্ত সব দলিল যথাযথ প্রক্রিয়া আনুসরণ করে উক্ত ৩৩২.৭৫ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম