ঢাকা বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বিআইডব্লিউটিএ দুর্নীতি পর্ব-৩

সাইদুরের অঢেল সম্পদের উৎস কি?


আলমগীর হোসেন photo আলমগীর হোসেন
প্রকাশিত: ৪-১২-২০২৪ দুপুর ১১:৪৩

সরকার যায় সরকার আসে শুধু রয়ে যায় সাইদুর। এ যেন শাখের করাত। দুর্নীতি করে তারা, আর দায় চাপে সরকারের কাঁধে। দেশের জনগণ অন্যায়, অবিচার, সেচ্ছাচারিতার কারনে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করলেও টিকিটিও ছুঁতে পারেনা এদের। অথচ এদের হাত ধরেই শক্তিশালী হয়েছিলো স্বৈরশাসকের হাত। সম্প্রতি সিপিডির বিশ্লেষণে জানা যায়, দেশ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে তার বেশির ভাগের সাথে জড়িত সরকারি চাকরিজীবি। দেশকে খালি কলশি বানিয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হতে যা যা প্রয়োজন তার সবই করেছে এই সাইদুরেরা। অথচ  প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান সরকার এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ ১৯৫৮ (ই.পি. অধ্যাদেশ, ১৯৫৮-এর LXXV নং) দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলের নৌ পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও উন্নয়নের লক্ষে সংস্থাটি গঠিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এর নাম করণ করা হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ যার সংক্ষিপ্ত নাম ( বিআইডব্লিউটিএ)। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত বাংলাদেশ নদীমাতৃক একটি দেশ। নদীমাতৃক' শব্দটিকে ভাঙালে হয় নদী মাতা। আমাদের এই দেশে নদীর অন্ত নেই। নদীই হচ্ছে এ দেশের প্রাণ। বাংলাদেশের নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম হচ্ছে  পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ও কর্ণফুলী- তবে এর মধ্যে যমুনা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় নদী। দেশজুড়ে নদীগুলো জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নদীর দু'পাশেই গড়ে উঠেছে নগর ও বন্দর। নদীগুলো কোনটি ছোট আবার কোনটি বড়। প্রতিটি নদীই নির্দিষ্ট অঞ্চলে তার নিজস্ব অবদানের ক্ষেত্রে স্বীকৃত। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০টি নদ-নদী আছে। যা বিপুল জলরাশি নিয়ে ২২,১৫৫ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদ-নদীগুলোর আবার ছোট বড় শাখা প্রশাখা আছে যা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গত ৫০ বছরে দেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার নদীপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ নদীপথ বাংলাদেশের পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। কম খরচে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মালামাল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এই নৌ-পরিবহন।  সেই সহজলভ্য খাতকে কঠিন বানিয়েছে দপ্তরের কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা বছরের পর বছর নিজ  নিজ আখের গুছিয়ে আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও নদী বন্দরগুলোর ভাগ্যে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। সুবিধা ভোগ  করতে পারেনি নদীপথে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারনও। ঘুরে ফিরে একই মুখ বিষয়টি এমন যেন তাদের ছাড়া নৌপরিবহন  দপ্তরে সারাদেশে আর কোন যোগ্য মানুষ নেই। লক পোস্ট হওয়ার ফলে- একই অফিসে দীর্ঘদিন থাকার কারনে তাদেরই ছত্রছায়ায় বিআইডব্লিউটিএ'তে গড়ে উঠেছে দুর্নীতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নামে বেনামে নিজেরা যেমন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তেমনি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের দোসরদের। এককথায় এই প্রতিষ্ঠানের কোমর ভাংতে যা প্রয়োজন তা এদের হাত ধরেই হয়েছে।  শোনা যাচ্ছে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক এই সিন্ডিকেটের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই কারো। তাইতো সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন শত শত কোটি টাকা লোপাটের কারনে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দার প্রান্তে গেলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা কেন নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ বছর পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় লাগামহীন নৈরাজ্য হয়েছে দপ্তরটিতে। আওয়ামী ঘরানার লোক দেখে হতো শত শত কোটি টাকার টেন্ডার ও কমিশন বানিজ্য। যা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিকবার ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কোন দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় না এনে উল্টো তাদের কারো কারো আবার পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, দুর্নীতির কারনে এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিকবার অভিযোগ জমা পড়েছে। দৈনিক সকালের সময়'র বিশেষ অনুসন্ধানে বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং বিভাগে দুর্নীতির সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তির তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরই একজন সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড্রেজিং (পুর)। 
 সূত্র জানায়, বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌপথে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হলেও ফেরি চলেনি এক দিনও। নাব্য সংকটে ফেরি চালুর আগেই বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে কিছুদিন লঞ্চ চলেছিলো। আড়ম্বরে উদ্বোধন হলেও কখনও ফেরিঘাটের গেট খোলেনি। যমুনা নদীতে গাইবান্ধার বালাশী ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার নৌরুট এবং দুই প্রান্তে টার্মিনাল তৈরির কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প শেষে ফেরি চলাচলের কথা থাকলেও নাব্য সংকটে এক দিনও তা চলেনি। এর পর কিছুদিন লঞ্চ চললেও বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ আছে, যমুনার ওই স্থানে এত বড় নৌপথ চালু রাখা প্রায় অসম্ভব। এটি জানা সত্ত্বেও জনগণের টাকা লুটপাট করতে প্রকল্পটি হাতে নেয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, যমুনার দুই পাড়ে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে ময়মনসিংহ এবং রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে এখানে একটি নৌরুট প্রয়োজন আছে। ব্রিটিশ আমল থেকে গাইবান্ধার তিস্তামুখ-বাহাদুরাবাদ নৌপথ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানীতে যাতায়াতে দু’পাশে ছিল রেললাইনও। চলাচল করতো ফেরি। ১৯৯০ সালে নাব্য সংকটে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর হয় বালাশীতে। এর পর যমুনা বহুমুখী সেতু চালুর পর ২০০০ সাল থেকে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের যাতায়াতের পাশাপাশি সংকট বাড়ে পণ্য আনা-নেওয়ায়। কারণ, সড়কপথে যমুনা সেতু হয়ে এই দুই ঘাটের দূরত্ব ২৮৭ কিলোমিটার। বিআইডব্লিউটিএ'র তথ্যমতে, উত্তরের ১৩ জেলার মধ্যে পণ্য সরবরাহ সহজ করতে এবং যমুনা সেতুতে যানবাহনের চাপ কমাতে ২০১৪ সালের দিকে এই নৌপথে ফের ফেরি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে পতিত স্বৈরাচারের দোসর সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া নৌপথটি পরিদর্শন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকে পাস হয় ‘বালাশী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে ড্রেজিং করে নৌপথ সচল এবং দুই প্রান্তে ফেরি টার্মিনাল ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। পরে মন্ত্রী এমপিদের পকেট ভারি করার লক্ষ্যে কয়েক দফায় তা বাড়িয়ে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তবে চরম ভুল করা হয় নৌপথ নির্ধারণে। বালাশী থেকে বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটারের যে নৌপথ নির্ধারণ করা হয়, যমুনা নদীর এ অংশে কিছুদূর পরপরই আছে চর-ডুবোচর। এত বড় রুট নিয়মিত ড্রেজিং করেও নৌচলাচলের উপযোগী রাখা প্রায় অসম্ভব। অথচ বালাশীঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলারই সানন্দবাড়ী পর্যন্ত নৌপথের দূরত্ব ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার। এখানে যমুনা বেশ প্রশস্তও। সানন্দবাড়ী থেকে ময়মনসিংহ ও ঢাকায় সড়ক যোগাযোগও রয়েছে। তবে এই পথ বাদ দিয়ে ২৬ কিলোমিটার নৌরুট চালুর সিদ্ধান্ত হয় মূলত লুটপাট করতেই। এভাবেই সাইদুরেরা ভূয়া প্রকল্পে অর্থ ছাড় নিয়ে নামে বেনামে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক যেমন বনে গেছেন। তেমনি সেই অর্থ পতিত আওয়ামী সরকারের দোসরদের নিকট পৌঁছে দিয়ে তাদের হাতকে শক্তিশালী করেছে। আর নিজেরা থেকেছে নিরাপদে। এখানেই থেমে নেই তাদের দুর্নীতি, নদী খনন না করেও অর্থ লোপাটের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, ভোগাই-কংস নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বিআইডব্লিটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবু বকর সিদ্দিক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) দিদার এ আলমের বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে নদী খনন না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য ছিল। জানা যায়, সে সময় অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (সজেকা)’র উপ-পরিচালক মো: আবুল হোসেন এবং একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টিম মাঠে নামে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাতে অভিযোগের অধিকাংশ তথ্যেরই সত্যতা মেলে। প্রথমত : দুর্নীতির প্রথম দফায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ড্রেজিং এস্টিমেট ধরা হয়। দ্বিতীয় দফায়: দরপত্র অনুযায়ী, ড্রেজার দিয়ে খনন, এস্কেভেটরের সাহায্যে খনন এবং কোদাল দিয়ে মাটি স্থানান্তরের পৃথক ৩ ধরনের কার্যাদেশ ছিল। বাস্তবে এস্কেভেটর দিয়ে খননের কোন প্রমাণ তারা পায়নি। বর্ষার পানি নেমে গেলে খননস্থলে ৮/১০ মিটার গভীর পানি থাকা দূরের কথা-বিভিন্ন জায়গায় জমে পলির স্তর। যাতে প্রতীয়মান হয়, কোনো ধরনের খনন কাজ হয়নি সেখানে। অর্থাৎ সে সময় কোনো ধরনের খনন কাজ না করেই পরস্পর যোগসাজশে তুলে নেয় বরাদ্দের মোটা অংকের অর্থ।
তথ্য মতে, বিআইডব্লিটিএ’র কার্যাদেশ পাওয়া স্থানীয় বালুদস্যুরা ভলগেট দিয়ে কংস ও ভোগাই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে উঠে পড়ে লেগে যায়। এই বালু বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকা। সুত্র জানায়, এর বড় অংশ ভাগ পান বিআইডব্লিটিএ’র সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু প্রকৌশলীরা। এ হিসেবে, নদী খননে বরাদ্দকৃত কোনো অর্থই খরচ হওয়ার কথা নয়। অথচ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে তুলে নিয়েছে বরাদ্দের অর্থ। বিআইডব্লিউটিএ'র এই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হতো তৎকালীন সৈরশাসকের দোসর প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, বিআইডব্লিউটিএ’র মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে। দুদক সূত্র জানায়, সে সময় ভোগাই ও কংস নদ খননের নামে অর্থ আত্মসাতের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র তাদের হস্তগত হয়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক, বিআইডব্লিটিএ’র মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলী, দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
 সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মতো পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণও আছে দুদকের হাতে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ইশারায় তারা এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করাই জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? তাহলে কি এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ধরা ছোয়ার বাইরেই রয়ে যাবে। এদিকে সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমানের ড্রেজিং বিভাগে দুর্নীতির নিত্য নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সাইদুরের এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা এক সময় অর্থনৈতিকভাবে ছিলো চরম দুর্দশাগ্রস্ত, হঠাৎ কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। যা নিয়ে আমাদের এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। 
এদিকে ২০১৬-২০১৭ সালে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন (টিআইএন নং-৬১৯৪৬১৫৭১২৬৩, সার্কেল-৩৬, করাঞ্চল-০২) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মো: ছাইদুর রহমান পিতা-মৃত আনিছুর রহমান এবং মাতা মোসা: শামছুন নাহার, নিজের জন্ম তারিখ-১০/০৬/১৯৭৩ ইং সাল বলে উল্লেখ করেছেন। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন, মুক্তারামপুর গ্রামে। ওই বছর আয়কর নথিতে তিনি বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৯ হাজার ৩৮৮ টাকা দেখিয়েছেন। এ হিসেবে ৩১ হাজার ৯৬৮ টাকা কর পরিশোধ করেছেন। উৎসে কর পরিশোধ শোধ করেছেন ৫ হাজার টাকা।আয়কর নথিতে তিনি স্বর্ণ বিক্রির প্রমাণস্বরূপ তিনি ৩টি মানি রিসিপ্ট দেখিয়েছেন। একটি রসিদে স্বর্ণের বিক্রিয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৬ টাকা। একটি রসিদে দেখিয়েছেন, ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯৫ টাকা। আরেকটি রসিদে দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৪ টাকা। দু’টি রসিদই ঢাকার ১৩/৪, চাঁদনী চক মার্কেটে অবস্থিত ‘বলাকা জুয়েলার্স’র। যদিও সরেজমিন অনুসন্ধানে ওই স্থানে এ নামে কোনো স্বর্ণালঙ্কার দোকানোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রায় ৩৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার আয়কর ফাঁকি দিতে তিনি দাখিল করেছেন স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির ভুয়া রসিদ। গোপন করেছেন নিজের বেনামী সম্পদের তথ্য। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ২৫/বি, এম. ডব্লিউ মানামা হাইটস’র ৮ তলায় রয়েছে ১৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। একই এপার্টমেন্টে ছাইদুর রহমানের আরও ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর ৫৫/৫৬ সিদ্ধেশ্বরীর ৪/এ, আমিনাবাদ হাউজিং এ রয়েছে বিশাল ফ্ল্যাট। এসব সম্পত্তি তিনি শ্বশুরের বলে প্রচার করেন। নিজ জেলা কুড়িগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় রড-সিমেন্টের দোকানটি ছাইদুর রহমানের। এখানে রয়েছে অন্তত: ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। দোকানটি পরিচালনা করেন তারই আপন ভাই আব্দুল আলীম। এছাড়াও কুড়িগ্রামের কাঁঠাল বাড়ি, বড় পুলের পাড় গর্বোরদোলায় আছে তার আধুনিক একটি ব্রিক ফিল্ড- যার নাম  মেসার্স এম. টি. আর ব্রিকস। যেখানে উন্নতমানের কংক্রিট ও হলো ব্লক তৈরি করা হয়। এটিও তার ভাই পরিচালনা করছেন।
নদী খনন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য নিতে বিআইডব্লিটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো: ছাইদুর রহমানের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হলে তিনি জানান নিউজ করবেন তো ফোন দিয়েছেন কেন বলে লাইন কেটে দেন। 
চলবে------

এমএসএম / এমএসএম

আদম পাচারের ফাঁদ পেতে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ

এলজিইডিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে!

প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার চাকরি বাঁচাতে মরিয়া,দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন

দুর্নীতির শীর্ষে ২৪ তম বিসিএস ক্যাডারের অনেকেই

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ১০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যাকসিন ক্রয়ে ভয়ংকর অনিয়ম

সংবাদ প্রকাশ করায় কন্ঠরোধের অপচেষ্টা

সিকদার হাসনাত স্বপনেই বেপরোয়া প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার

সেবা গ্রহিতার ৬০ লাখ টাকা করিমের পকেটে

মেট্রোরেলের দুর্নীতি শেষ কোথায়

র এর কুদৃষ্টি অর্থনীতি সমিতির দিকে

পলাতক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে উদাসীন রুয়েট প্রশাসন

স্বৈরাচারী সরকারের প্রভাব খাটিয়ে ৩৩ কেভি অবৈধ বিদ্যুৎ পোল স্থাপনের অভিযোগ

ড্রেজিংয়ের টাকায় আংগুল ফুলে কলাগাছ সাইদুর