অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
শেখ হাসিনার সরকার তথা আওয়ামী লীগের শাসনের পতন ও তাদের পরিণতির ধরনটা ছিল ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া ৭৫ বছর বয়সী দলটির জুটেছে ফ্যাসিবাদের পদক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে দলীয় নেতৃত্বকে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন দলটির এই পরিণতি,এর কারণ বা বাস্তবতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে তারা। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের তিন মাস পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত দলটির নেতা-কর্মীদের চিন্তায় বা কথায় কিন্তু কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। অনুশোচনা প্রকাশের কোনো ইঙ্গিতও নেই। এমনকি দলটির নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারেও তাদের কোনো বিকল্প চিন্তা আছে বলে মনে হয় না। দলটি গণ-অভ্যুত্থান ও তাদের সরকারের পতনকে এখনো একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে। এরই মধ্যে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া দলটির কোনো কোনো নেতা অডিও-ভিডিও বক্তব্য ছেড়েছেন সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমে; কেউ কেউ বিবৃতি দিয়েছেন। দেশি-বিদেশি পরিকল্পনায় ষড়যন্ত্র করে হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে-এটাই তাদের নেতাদের বক্তব্যের মূল বিষয়। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার কয়েকটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এই ফোনালাপগুলো যদি আসল হয়ে থাকে, তাহলে আমরা দেখব তাঁর কথাবার্তা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে, কোনো পরিবর্তন নেই। এসব ফোনালাপে ক্ষোভ ও ক্রোধেরই প্রকাশ ঘটেছে। যেকোন দেশের স্বৈরাচার সরকার যতোই শক্তিশালী হোক তার পতন অনিবার্য। বাংলাদেশের মানুষ সেটাই দেখতে পেলো।
এ পতন একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। ভূলুণ্ঠিত গণতন্ত্র আবার জেগে উঠবে। সংবিধানের পাতা আবার কথা বলতে শুরু করবে। নির্যাতন আর নিপীড়নে যারা বোবা হয়ে গিয়েছিলেন তাদের মুখে কথা ফুটবে। আঁধার কেটে গিয়ে আলোর মুখ দেখতে পাবে মানুষ, এটাই বড় পাওয়া। এতো দ্রুত পট পরিবর্তন ঘটবে এটা কেউ ধারণা করেনি। দোর্দন্ড প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতার মসনদে থাকায় শেখ হাসিনার কথা, আচরণ, ভাবভঙ্গি সবকিছুই ছিল গোঁয়ার্তুমিতে ভরা। তার সভার অন্য সদস্যরা ছিল অনমনীয়। যেখানে দীর্ঘদিন যাবত দেশের মধ্যে গণতন্ত্রের লেশ মাত্র ছিল না। রাষ্ট্র পরিকাঠামোর সামান্য নিয়ম অনুসরণ পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি। সে পরিস্থিতির মধ্যে গণতন্ত্র ভূলুন্ঠিত হয়ে দেশে শুরু হয়েছিল অরাজকতা আর নিপীড়ন। ভোটের মাঠ থেকে শুরু করে দেশের সকল অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় ছিল তারা। সেখানে চলছে লুটপাট। কেউ কোনো শব্দ করতে পারেনি। মিছিল-মিটিং বিরোধীদের জন্য ছিল অসাধ্য বিষয়। পরোয়ানা-হুলিয়া নিয়েই বিরোধীদের পালিয়ে বেড়াতে হতো। পুলিশ, প্রশাসন থেকে সব বাহিনীকে কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা থাকতো সব সময়। সাপ বাজীর খেলায় থাকতো সব সময় মত্ত। কেউ তাদের বিরুদ্ধাচারণ পর্যন্ত করতে পারতো না। পুলিশ প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ছিল তাদের হাতে ক্রীড়নক। সরকার প্রধান পুতুলের মতো নাচাতেন। সব কিছুই ছিল তার হুকুমের গোলাম। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় তার ভেতরে অতিমাত্রায় দম্ভ আর আত্ম অহমিকা পেয়ে বসেছিল। কিছুকেই তিনি তোয়াক্কা করতেন না। তার পাশের চামচারা ছিল তার চেয়েও বেশি এগিয়ে। তাদের বেসুরো ভাষা আর লাগামহীন কথাবার্তায় ছিল স্বৈরাচারী মনোভাব। তার কাছের লোকজন শেখ হাসনিার চাটুকারিতায় থাকতো ব্যস্ত। বাইরের বাস্তব পরিবেশ তার কাছে কখনো পৌঁছায়নি। দেশ ও দেশের মানুষের হাহাকারে তিনি জেগে উঠতে পারেননি। ক্ষমতার লালসা তাকে অন্ধ করে দিয়েছিল।
শেখ হাসিনার দলটির দুঃসময়ের কান্ডারী ছিলেন যারা তারা ছিলেন বঞ্চিত আর নিপীড়নের শিকার। কর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি কখনো। তাই দলের ভেতর থেকেও প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। এতোবড় দল। এতো কর্মী। কাউকে দুঃসময়ে শেখ হাসিনা কাছে পেলেন না। কেউ মাঠে নামেননি। সুযোগ সন্ধানীদের দলে ভিড়িয়ে ত্যাগী নেতাদের দলিতমথিত করেছেন। তাই সুযোগ সন্ধানী আর ত্যাগী নেতাকর্মী কেউ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তাদের দম্ভচূর্ণ হতে সময়ও বেশি লাগেনি। জনজোয়ারে আত্ম অহমিকার দল কতোক্ষণ টিকে ছিল তা দেশের সাধারণ মানুষ নিজ চক্ষে দেখেছে। নির্বোধের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো।দাম্ভিকতা আর স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণেই ক্ষমতা হারানোর প্রধান কারণ। তিনি ক্ষমতায় থেকে যেভাবে বেনজীরকে দিয়ে বিরোধী দমনে সফল হয়েছিলেন তা অন্য কোনো সদস্য দিয়ে পারেননি। বেলা শেষে তার নির্দেশনা কেউ মানতে রাজী হয়নি। সবচেয়ে বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়েছেন সেনাপ্রধান। তার দূরদর্শিতায় দেশের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। হাসিনার হুকুম মতে তিনি যদি ঢাকায় আসা লংমার্চ ঠেকাতে যেতেন তাহলে রক্তের বন্যা বয়ে যেতো। কার্ফু দেয়ার আগের দিন সব বাহিনীর বৈঠকে সবার মতামতই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ দেশের মানুষের সাথে বেঈমানী করতে রাজি হয়নি। কাউকে তিনি বেনজীর বানাতে পারেননি। তাতেই পাশার দান উল্টে গেছে। শেখ হাসিনা কখনো ভাবতেই পারেননি এতো তাড়াতাড়ি তাকে দেশ ছাড়তে হবে। দেশের মধ্যে তার দলীয় সন্ত্রাসীরা যে ধরনের বেপরোয়া অন্যায় আর জুলুম চালাচ্ছিল তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে টিকে থাকাটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তিনি দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন বাহিনীকে ম্যানেজ করতে পারলেও মিডিয়াকে পুরোপুরি বশে আনতে পারেননি। তাদের পক্ষের কুটচালবাজদের পরামর্শে তিনি সাংবাদিক নিপীড়ন আইন তৈরি করে তাদের দমানোর চেষ্টা করেছিলেন।
অনেক ক্ষেত্রে তিনি সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু সবাইকে সেই ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখেতে পারেননি। তার এবং তার আমলাদের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে তিনি বলতেন, এসব পত্রিকা আপনারা নর্দমায় ফেলে দেবেন। মিডিয়ার কোনো সমালোচনা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। একরোখা মনোভাব পোষণ করতেন সবসময়। তাই সব পেশাজীবী মানুষের কাছে তার দলের ভাবমূর্তিতে পচন ধরেছিল। নির্বাচন থেকে শুরু করে সবখানেই ছিল নৈরাজ্যের পাহাড়। তিনি বেনজীরকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করতে যেয়ে তাকে অনেক বেপরোয়া করে তুলেছিলেন। তার দুর্নীতি ছিল নজীরবিহীন। হাসিনার সরকার নির্বাচন কমিশনকেও অনেক লুটপাট করার সুযোগ করে দিয়েছে তার পক্ষে কাজ করার জন্য। বিচার ব্যবস্থায় কালিমা লেপন করা হয়েছে। তবে দেশে যদি সংবিধান আর গণতন্ত্রের ধারা বজায় থাকতো তাহলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সব কিছুতেই তিনি মনোযোগ দিতেন। তখন দম্ভ ভরে কঠোর জবাব তার মুখ থেকে বের হতো না। দম্ভই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছে। কোন ক্ষমতায়ই কারো জন্য চিরস্থায়ী হয় না। এটা তিনি ভুলে গিয়েছিলনে। এক কথায় বলা যায়,দলটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার নজিরও সৃষ্টি হয়েছে এবার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পতন হয় ৫ আগস্ট। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে কোনো নির্দেশনাও দিয়ে যাননি তার দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে। তাঁরা সরকার পতনের খবরে হতবাক ও দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের সেই পরিস্থিতিতে সারা দেশে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গুলোর নেতা-কর্মীদের কাছে তখন জীবন বাঁচানোই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেই পরিস্থিতিতে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় দলের নেতৃত্বের প্রতি তৃণমূলের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, যা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা দলটির নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। তাঁদের কেউ কেউ পালানোর সময় আটকও হন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগ দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। গণহত্যা, হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একটা অংশ। দেশে ও বিদেশে পালিয়ে থাকা দলটির নেতাদের মধ্যে গত এক মাসে বলা যায় একটা যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও এক্স হ্যান্ডলে এখন তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশিত হচ্ছে। এসব ঘটনায় তাঁদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে। আগস্টের মাঝামাঝি ও শেষ দিকে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, দলের এমন একাধিক নেতা বলেছেন, মূলত দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন এবং চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতা তৈরির চিন্তা তাঁদের এখনো নেই। ফলে দলটির অনেক বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নামে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে অন্যদের কোনো যোগাযোগ নেই। দলটিও এ মুহূর্তে তাঁকে এড়িয়ে চলতে চাইছে। ফলে যিনি তাঁদের সরকার পতনের আগে প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিতেন, এখন তাঁর নামে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না দলটি। দেশের বাইরে থেকে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা কতটা কাজে দেবে, সেই প্রশ্নও তাঁদের মধ্যে রয়েছে। আবার বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বিকল্প নেতৃত্ব দিয়ে দেশের ভেতরে আস্থার সংকট কাটানোর চেষ্টা কতটুকু কাজে দেবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কিন্তু দলটির মধ্যে এখনো বিকল্প চিন্তারও কোনো ইঙ্গিত নেই।
অস্তিত্বের সংকট থেকে আওয়ামী লীগকে বের করে আনতে ও দলকে সংগঠিত করার চেষ্টায় সামনে কর্মসূচি নেওয়ার চিন্তাও করছে দলটি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা জুলাই-আগস্টের পরিস্থিতির দায় এড়িয়ে এগোতে চায়। বিদেশে পালিয়ে যাওয়া নেতারা দেশের বাস্তবতা কতটা বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছেন-সেই প্রশ্নও তুলেছেন দেশে পালিয়ে থাকা নেতাদের কেউ কেউ। হাসিনা সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আট শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১ হাজারের বেশি, যাঁদের মধ্যে অনেকে চোখ হারিয়েছেন, অনেকে পা হারিয়েছেন, পঙ্গু হয়ে গেছেন কেউ কেউ। স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনো আন্দোলনে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থার সংকটের পেছনে এটাই বড় কারণ। দেশ শাসনের সময়টাতে আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও ভিন্নমত দাঁড়াতে পারেনি। নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। ছাত্র আন্দোলন সামলাতে শুরু থেকে একের পর এক সরকার যা করেছে, যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সবই ছিল ভুল। দলটির নেতাদের অনেকে এখন তা মনে করেন। দলটি কতটা হালে পানি পাবে বা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নন দলের অনেক নেতা। এ ছাড়া দলটি প্রাণহানি বা হতাহতের ঘটনার দায়ভার নিতে রাজি নয়। দলটি এখনো ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কথা বলছে। কিন্তু তাঁদের এই কৌশলে যে মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরানো যাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে তাদের এই গোপন ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, এবং এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
T.A.S / T.A.S