শাহজাদপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জননেতা সাংসদ স্বপন

শাহজাদপুরের উজ্জ্বল নক্ষত্র, লাখো হৃদয়ের স্পন্দন, সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাবেক শিল্প উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাসিবুর রহমান স্বপন (৬৫) সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রিয় জন্মভূমি শাহজাদপুরে। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাদ জুমা শাহজাদপুর হাই স্কুল মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অননুষ্ঠিত হয়। এ সময় এমপিকে চিরকালের জন্য বিদায় দিতে এবং জানাজায় অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে শাহজাদপুরে। জানাজা শেষে শাহজাদপুর চুনিয়াখালিপাড়া শাহ মখদুম কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

এর আগে এদিন শেষবারের মতো শাহজাদপুরে দ্বারিয়াপুরের বাসায় আনা হয় গণমানুষের নেতা আলহাজ হাসিবুর রহমান স্বপনকে। কফিনে মোড়ানো নিথর দেহ নিয় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারযোগে বেড়া খালেকুজ্জামান স্টেডিয়ামে ল্যান্ড করে এবং সেখান থেকে ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে করে শাহজাদপুরের দ্বারিয়াপুর বাসায় আনা হয়। 

শেষবারের মতো তাকে দেখতে সেখানে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। অভিভাবক হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং স্বজন স্তব্ধ নির্বাক হয়ে দেখতে থাকেন প্রিয় নেতাকে। সেখানে চোখের জলে সিক্ত হন শাহজাদপুরের আপামর জনতা। এমনভাবে তারা অভিভাবকহারা হবেন, মেনে নিতে পারেননি কেউই।

গত ২৫ আগস্ট তিনি দ্বিতীয় দফায় করোনায় আক্রান্ত হন এবং ২৬ আগস্ট ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে তুরস্ক নেয়া হয়। ইস্তাম্বুল মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার ভোর ৩টা ৩৩ মিনিটে মারা যান তিনি। চরম দুঃসংবাদটি পাওয়ার পর থেকেই প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন অভিভাবককে একনজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে প্রতীক্ষা করছিলেন শাহজাদপুরের মানুষ। হাসপাতালের সকল প্রক্রিয়া শেষে বিমানে করে শুক্রবার ভোরে ঢাকায় আনা হয় তার মৃতদেহ। সেখানে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বনানীতে প্রথম জানাজা অননুষ্ঠিত হয়। এরপর ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে বেড়া হয়ে স্বজনদের দেখানোর জন্য দ্বারিয়াপুরের বাসায় রাখা হয়। 

এদিন বাদ জুম্মা শাহজাদপুর হাই স্কুল মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে শাহজাদপুর চুনিয়াখালিপাড়া শাহ মখদুম কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় এমপি স্বপনকে।

তিনি ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করে শিল্প উপমন্ত্রী হন। এর আগে তিনি ১৯৮৬ সালে তৎকালীন শাহজাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৯৯২ সালে শাহজাদপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ সালে শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পরপর দুবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত তিনি সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

সাংসদ জননেতা হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জে আ’লীগের নেতাকর্মী ও জনসাধারণের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।