ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

বশেমুরবিপ্রবির প্রভোস্টকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগ, ব্যাখ্যা চাইল প্রশাসন


বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি photo বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৪-৯-২০২১ দুপুর ১১:৪৬

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বঙ্গমাতা হলের সদ্য বিদায়ী প্রভোস্ট শামস আরা খান সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়ামিনুল হাসান আলিফের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শামস আরা খানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নিকট লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

উপ-রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সদ্য বিদায়ী প্রভোস্ট এবং ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামস আরা খানের বিরুদ্ধে গত ৩১/০৮/২০২১ তারিখে কিছু বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করেছেন, যা তার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এহেন পোস্টের কারণ তথ্য-উপাত্তসহ পত্র প্রাপ্তির তিন (৩) কার্যদিবসের মধ্যে তৎবিষয়ে আপনার লিখিত জবাব নিম্নস্বাক্ষরকারীর দপ্তরে প্রদানের জন্য বলা হলো।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শামস আরা বলেন, গত ৩০-০৮-২০২১ রাত ৭টা ৩২ মিনিটে বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পরিচয়ে একটি মেয়ে আমাকে ফোন করে জানায় তার একজন রুমমেট গতকাল (২৯-০৮-২০২১) হলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে গিয়ে তাকে জানিয়েছে তাদের রুমে চুরি হয়েছে। এ সময় আমি তাকে জানাই গতকাল কেউ কোনো চুরির অভিযোগ লিখিত বা মৌখিক কোনোভাবেই করেনি। তখন সে আমাকে বলে মেয়েটি বুঝতে পারেনি, আর সে আগে রুমমেটদের সাথে কথা বলতে চেয়েছে। এরপর আমি তাকে বলি, তারা যেন কী কী চুরি হয়েছে তার বিবরণসহ একটি লিখিত অভিযোগ অফিসে দেয় এবং রুম পরিদর্শন যেন করা যায় তার জন্য রুমের চাবি নিয়ে হলে আসে। উত্তরে মেয়েটি জানায়, তার কী চুরি হয়েছে সেটা সে এখনো জানে না আর এই মুহূর্তে তাদের আসা সম্ভব নয়, সে শুধু হল কর্তৃপক্ষকে একটু সতর্ক হওয়ার জন্য বলতে চাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাকে জানাই, হল কর্তৃপক্ষ হলের সার্বিক নিরাপত্তায় শতভাগ দায়িত্ব পালন করছে। আবাসিক রুমের শিক্ষার্থীদের কাছেই তাদের নিজেদের রুমের চাবি থাকে, তাই রুমে শিক্ষার্থী ব্যতীত অন্যদের প্রবেশের সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় কোনো চুরির ঘটনার সুরাহার জন্য ওই রুমের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ এবং তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন। নয়তো হল কর্তৃপক্ষ রুমে প্রবেশ করতে পারবে না। এরপর মেয়েটি আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় জানায়।

তিনি ‍আরো বলেন, কিন্তু গত ৩১ আগস্ট কেএম ইয়ামিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে- বঙ্গমাতা হলে চুরির ঘটনা ঘটেছে এবং প্রভোস্টের কাছে অভিযোগ করা হলেও তিনি চুরির দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপাতে চেয়েছেন। এছাড়া ওই শিক্ষার্থী আরো দাবি করেন, বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থীরা আমার অপসারণ/পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছুই ঘটেনি।

তিনি বলেন, করোনার সময়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪-৫টির মতো চুরির অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই ছিল পোশাক কিংবা কসমেটিকস চুরির মতো বিষয়। এক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া চুরি প্রতিরোধে হলে প্রবেশের সময় লিখিত আবেদন করাসহ মালামাল নিয়ে বের হওয়ার সময় মালামালের তালিকা রাখার নিয়ম চালু করেছি।

শারীরিক এবং মানসিক নিপীড়নের বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে, আমাকে সরাসরি শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। আমি বর্তমানে প্রায় ৩৭ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় রয়েছি। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই চিকিৎসক আমাকে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি আমার হিমোগ্লোবিন লেভেল ৮%-এ নেমে আসায় আমাকে তিন ব্যাগ ব্লাড গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। এমতাবস্থায় গত ২৬ আগস্ট আমি মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করি এবং ৩১ তারিখে যখন আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনসহ দায়িত্বমুক্ত করার কথা সেদিনই আমার অপসারণ দাবি করা হচ্ছে। এমন বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর পোস্ট দেখে আমি মানসিক চাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর ফলে আমার পক্ষে আর ব্লাড গ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি। এককথায় এ ঘটনার কারণে আমাকে এবং আমার অনাগত সন্তানকে শারীরিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর এ কারণে আমি শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছি।

চুরির বিষয়ে বঙ্গমাতা হলের স্টাফ জেসমিন নাহার রুনা বলেন, সম্প্রতি লিখিত আবেদন করে ৪০২নং কক্ষের একটি মেয়ে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে হলে আসে। এ সময় তার কাছে রুমের চাবি না থাকায় রুমের অপর তিনজনের অনুমতি নিয়ে সে তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে এবং মালামাল নিয়ে চলে যায়। এ সময় সে মৌখিক বা লিখিত কোনোভাবেই চুরির অভিযোগ করেনি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চুরির বিষয়টি জানতে পারি।

চুরির অভিযোগ সম্পর্কে অভিযোগকারী রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইভা আক্তার স্বর্ণা বলেন, সম্প্রতি আমাদের রুমের এক শিক্ষার্থী কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে হলে যায়। তার কাছে চাবি না থাকায় সে আমাদের অনুমতি নিয়েই তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে। এরপর তার কাছ থেকে চুরির বিষয়টা জানতে পারি এবং বিষয়টি প্রভোস্ট ম্যামকে জানাই। আমাদের রুমের চারজনেরই পারবারিক এবং একাডেমিক কারণে ব্যস্ত থাকায় আমাদের পক্ষে গোপালগঞ্জে গিয়ে কী কী চুরি হয়েছে সেটি নিশ্চিত করা কিংবা লিখিত অভিযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা মূলত ম্যামকে অভিযোগটি জানিয়েছিলাম যাতে প্রশাসন আরো সতর্ক হয়, আর কোনো চুরির ঘটনা না ঘটে এবং আমাদের কক্ষেরই কোনো শিক্ষার্থীর ওপর দায়ভার না আসে।

প্রভোস্টের অপসারণ চেয়েছিলেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এ ধরনের কিছু বলিনি। আমরা শুধুমাত্র চেয়েছি চুরির ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কে প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকবে বা কে থাকবে না এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।

এদিকে, হল প্রভোস্ট শামস আরা খানের অপসারণ বা পদত্যাগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছিল কিনা- এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে উপ-রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন জানান, এমন কোনো দাবি আসেনি। এ বিষয়ে বঙ্গমাতা হলের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমন কোনো দাবির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এছাড়া, প্রভোস্টের অপসারণ বা পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আন্দোলনও করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কেএম ইয়ামিনুল হাসান আলিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নোটিস দিয়ে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের বিষয়টিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তাছাড়াও আমরা নোটিসের বিষয়টি সম্পর্কে ম্যামের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে অপসরণের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু আমি কোথাও অপসারণের কথা বলিনি, আমি শুধু অভিমুক্ত কথাটি উল্লেখ করছি। আমি শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই পোস্টটি লিখেছি এবং এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমি সকল প্রমাণ প্রশাসনের নিকট উপস্থাপন করব।

এ সময় তিনি আরো বলেন, চিঠিতে শারীরিক নিপীড়নের কথা বলা হয়েছে কিন্তু ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে কিভাবে শারীরিক নিপীড়ন হতে পারে? এ সময় তিনি শব্দটি নিয়ে অনুসন্ধানেরও পরামর্শ দেন।

তবে বাংলা অভিধানে দেখা গেছে, নিপীড়ন শব্দের অর্থ কষ্টদান এবং চিঠিতে উল্লিখিত বাক্যের অর্থ দাঁড়ায় ‘শারীরিক ও মানসিক কষ্টদানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির মেডিকেল অফিসার ডা. অভিষেক বিশ্বাস বলেন, গর্ভাবস্থায় মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় গর্ভবতী নারীর প্রি-টার্ম লেবারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে, যা মা এবং শিশু উভয়কেই মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।

প্রভোস্টকে অপসারণের দাবির বিষয়ে আলিফ বলেন, এই হলে প্রায় ৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ২-৩ জন এমন বক্তব্য দিয়েছেন আর তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই আমি এটা লিখেছি। যেহেতু তারা নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় তাই আমি তাদের নাম প্রকাশ করিনি।

তবে এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, সমাজে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোনো বিষয়ে প্রতিবেদন করার পূর্বে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। একজন শিক্ষক বা দায়িত্বশীল ব্যক্তির অপসারণ দাবি করা হয়েছে এমন শিরোনামে তখনই সংবাদ লেখা যেতে পারে যখন এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে অথবা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবে। এক্ষেত্রে ইনডিভিজুয়াল কোনো ব্যক্তির দাবি তখন তুলে ধরা যেতে পারে যখন ওই ব্যক্তি সরাসরি ওই শিক্ষক কর্তৃক নির্যাতিত বা কোনো অন্যায় আচরণের শিকার হবেন। আর দায়িত্বে অবহেলার প্রসঙ্গ ‍এলে অবশ্যই রিপোর্টারের দায়িত্ব অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মতামত জানার চেষ্টা করা। কারণ এটি খুব স্বাভাবিক বিষয় যে, একজন শিক্ষককে সকল শিক্ষার্থী সমানভাবে পছন্দ করবেন না। তবে তিনি যদি সত্যিই দোষী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই অধিকাংশ শিক্ষার্থী তার বিপক্ষে থাকবে।

জামান / জামান

২০২৫ সালে মাধ্যমিক স্কুলে ছুটি থাকবে ৭৬ দিন

জবি ভর্তি পরীক্ষার তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি

ক্যাম্পাসে মাদক সেবনরত অবস্থায় নারীসহ ৪ জন বহিরাগত আটক

জবিতে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষায় থাকছে লিখিত ও বহুনির্বাচনি

যবিপ্রবিতে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফায়ার অ্যান্ড সেফটি’ শীর্ষক ওয়ার্কশপ

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা: জাবি ক্যাম্পাসে মোটরচালিত যানবাহন বন্ধ

শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে কোর্স সমাপনী সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত

প্রক্টর নিয়োগকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় দ্বিমুখী সংঘর্ষ

জাককানইবির বঙ্গমাতা হলে নতুন হাউজ টিউটর নিয়োগ

৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি

বৈঠক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিতুমীরের ১৪ শিক্ষার্থী

বাকৃবিতে গ্রন্থাগারের উন্নয়নে উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময়