অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সুরক্ষায় শক্তিশালী আইন প্রয়োজন
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সুরক্ষা কেবল একটি অর্থনৈতিক ইস্যু নয় এটি ন্যায়বিচারের বিষয়। তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া সবার জন্য মর্যাদা নিশ্চিত করে। রোববার শ্রম সংস্কার কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে অক্সফাম সুপারিশমালা উপস্থাপন করেছে। শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সরকার,অক্সফাম, এনজিও, উন্নয়ন অংশীদার, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং তাদের কাজের পরিস্থিতি উন্নত করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে বাংলাদেশের শ্রম নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য শাকিল আখতার চৌধুরীর সঞ্চালনায়, অংশগ্রহণকারীরা প্রান্তিক শ্রমিকদের মুখোমুখি হওয়া আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং দেশের শ্রম কাঠামোর মধ্যে তাদের ভূমিকা আনুষ্ঠানিক করার জরুরি প্রয়োজন নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। এই বৈঠক শ্রম অধিকার উন্নয়নে অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক চিহ্নিত করেছে।
শুপারিশ মালায় বলা হয়, বাংলাদেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, যেখানে দেশের শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশেরও বেশি কর্মরত (যার মধ্যে ৯৬.৬ শতাংশ নারী), এখনও মূলত আনুষ্ঠানিক শ্রম আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, শোষণ ও আর্থিক অনিশ্চয়তার শিকার। গৃহকর্মী, বাড়িভিত্তিক পোশাক শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমিক এবং মৎস্যজীবীরা সবচেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে থেকে ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা এবং মৌলিক কর্মস্থলের অধিকারের অভাবসহ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়,অক্সফাম ও তাদের সহযোগীরা জোর দিয়েছেন বাংলাদেশকে আইএলও কনভেনশন সি১৮৯, সি ১৯০ এবং সি ১৮৮-সহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদনের মাধ্যমে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা প্রদানে। সুপারিশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, স্বাস্থ্যবীমা এবং পেনশন স্কিমের মতো সামাজিক নিরাপত্তা জালের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও অধিকার পর্যবেক্ষণের জন্য কার্যকর প্রয়োগ পদ্ধতি জোরদার করার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত।
প্রাক্তন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মাহফুজুল হক বলেন, “টেকসই উন্নয়নের জন্য শ্রম অধিকার অত্যাবশ্যক। নীতিমালা এবং বাস্তবায়নের মধ্যে ফাঁক পূরণ করে আমাদের সবচেয়ে দুর্বল শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
অক্সফাম-এর উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিভিন্ন খাতে প্রান্তিক শ্রমিকরা গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গৃহকর্মীরা গড়ে মাসে মাত্র ৫,৩১১ টাকা উপার্জন করেন, যা তাদের ১০,৮০১ টাকার খরচের তুলনায় অনেক কম। এর মধ্যে ৯৬% যথেষ্ট মজুরি পান না এবং ৬৭% নির্যাতনের শিকার হন। বাড়িভিত্তিক পোশাক শ্রমিকরা প্রতি টুকরো মাত্র ৫০ পয়সা উপার্জন করেন এবং ৭১% লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হন। চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা আয় করেন—যা বৈশ্বিকভাবে সর্বনিম্ন—এবং ৭৪% দারিদ্র্যের সীমার নিচে বাস করেন, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অ্যাক্সেস সীমিত। মৎস্যজীবীরা ন্যূনতম মজুরি সুরক্ষা পান না এবং মাত্র ৪% নারী মৎস্যজীবী ফিশারফোক কার্ড পেয়েছেন।
গৃহকর্মী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সালমা আক্তার বলেন, “আমরা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারি না কারণ ন্যূনতম বেতন পর্যন্ত পাই না যা দৈনন্দিন খরচ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন। আমরা শ্রম আইনের আওতায় নেই, ফলে আমরা সব ধরনের আনুষ্ঠানিক সহযোগিতার বাইরে আছি।” তিনি গৃহকর্মীদের আইন অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে অক্সফাম-এর জেন্ডার জাস্টিস ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রধান মেহজাবিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখা অদৃশ্য হাতগুলোকে দেখা, মূল্যায়ন এবং সুরক্ষিত করার প্রয়োজন। শ্রম সংস্কারে প্রান্তিক শ্রমিকদের অনন্য দুর্বলতাগুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।"
বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সুপারিশ করা হয়। এই শ্রমিকদের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া এবং শ্রমিক ইউনিয়নে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি তাদের কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম প্রসারিত করা তাদের উন্নত সুযোগ দিয়ে ক্ষমতায়িত করতে পারে এবং জীবিকা উন্নত করতে পারে। নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে এবং কর্মক্ষেত্রে সমতা বাড়াতে লিঙ্গ-সচেতন নীতিগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বৈঠকে মেহজাবিন আহমেদ, তারেক আজিজ, শাহাজাদি বেগম, মো. শরিফুল ইসলাম (অক্সফাম বাংলাদেশ) এবং লায়লা জাসমিন বানু (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ম্যানেজার) শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে “অদৃশ্য হাতকে ক্ষমতায়ন: অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রান্তিক শ্রমিকদের সুরক্ষায় শ্রম সংস্কারের সুপারিশ” শিরোনামের বিশ্লেষণ ও সুপারিশপত্র হস্তান্তর করেন। বৈঠকটি একটি শক্তিশালী আহ্বানের মাধ্যমে শেষ হয়, যেখানে সরকারি সংস্থা, নিয়োগকর্তা এবং সুশীল সমাজকে এমন একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানানো হয় যেখানে সব শ্রমিক ক্ষমতায়িত, মূল্যায়িত এবং সুরক্ষিত থাকবে।
T.A.S / T.A.S
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার আয়োজিত
ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় দফা দাবি
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার অনুষ্ঠিত
কামরাঙ্গীরচর থানার মোঃ আমিরুল ডিএমপি লালবাগ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নির্বাচিত
পেশাদারিত্ব ও মানবিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডিসি মহিদুল ইসলাম
ঝিনাইদহ অফিসার্স ফোরামের নতুন কমিটি গঠন
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ শিখাচ্ছে পাথওয়ে
উত্তরায় SEDA ফাউন্ডেশনের ১৭তম মেধা যাচাইয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে রাজউক চেয়ারম্যান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় নকশা দাখিল ও অপসারণের নির্দেশ
হাতপাখা নির্বাচিত হলে ঢাকা-১৮ কে একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলা হবেঃ আলহাজ্ব আনোয়ার
ডেমরায় সাংবাদিকদের সাথে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর মত মতবিনিময় সভা