কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় রুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ
পলাতক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে উদাসীন রুয়েট প্রশাসন

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বিধি অনুসারে রাজনীতি করার সুযোগ নেই রুয়েটে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তবুও গেলো ১৫ বছরে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে সরাসরি বিভিন্ন মিছিল, মিটিং ও সভা-সমাবেশে সক্রিয়ভাবে অংশ করতে দেখা গেছে রুয়েটের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জুলাই-আগষ্টের গণঅভূত্থ্যানের সময়ে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন সহ ভয়ভীতি দেখানো এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলানোর অভিযোগও রয়েছে। এনিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ৫ আগস্টের পর রুয়েটের নয় জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলাও দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে রুয়েট প্রশাসনকে একাধিকবার পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেও শিক্ষার্থীদের পাত্তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন রুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রুয়েটের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাহনেওয়াজ সরকার সেডু, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশীদ, প্রকৌশল শাখার সহকারী প্রকৌশলী নায়েম রহমান নিবিড়, পুরকৌশল শাখার জুনিয়র সেকশন অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু, শিক্ষা শাখার প্রোগ্রামার একেএম আনোয়ারুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ডাটা প্রসেসর মো. মহিদুল ইসলাম, শহীদ লেফটেন্টে সেলিম হলের হিসাব সহকারী মো. সুজন ইসলাম ও গ্লাস এন্ড সিরামিক্স বিভাগের ডাটা প্রসেসর আব্দুল্লাহ আল মামুন শুভ এর নামে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে রাজশাহী মহানগর ও জেলার কয়েকটি থানা পৃথকভাবে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফাহমিদ লতিফ লিওন ও সাধারণ সম্পাদক সৌমিক শাহার নামের বোয়ালিয়া থানায় মামলা আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
রুয়েট শিক্ষর্থীদের দাবি, ছাত্র জনতার ওপর গুলি বর্ষণ, বোমা ও পাথর নিক্ষেপ সহ আওয়ামী লীগের এই গণহত্যা ও নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতাকারী এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন। এবং তারা দিব্যি অফিস করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহণ করে উল্টো শিক্ষার্থীদের নানান ভাবে চাপ ও হয়রানি করার চেষ্টা করছেন কিছু শিক্ষক ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা। পক্ষান্তরে ফ্যাসিস্ট দোসরদের গোপনে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের স্বপদে বহাল রাখার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা।
তবে রুয়েটের শিক্ষাক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিষয়ে একেবারেই জানা নেই বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্টার আরিফ আহম্মেদ চৌধুরীর। তার ভাষ্য, ‘৫ আগষ্টের পর থেকে রুয়েটে আটজন অফিসে আসেন না। তাই সম্প্রতি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য একটি আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুসারে সেই আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা আপাততঃ স্থগিত করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কেউ কেউ মেডিকেল লিভের আবেদন দিয়েছেন।’
রাজনৈতিক পদ-পদবী ও ফৌজদারি মামলার বিষয়ে জানেন কিনা- এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি জানান,‘তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও পদ-পদবীর বিষয়ে রুয়েটের কাছে কোনো তথ্য নেই। আর রুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পূর্ণরূপে বন্ধ আছে। তাছাড়া এ বিষয়ে আরএমপি থেকে তাদের কোনো প্রকার চিঠি না পাওয়ায় আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রুয়েটের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শঙ্কর সাহা। এর আগে তিনি ২০১৫-২০২০ মেয়াদে মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তিনি পদ হারান। এছাড়াও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্বরত। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি ও হৃমকি প্রদর্শন সহ ধর্মীয় বিষয়ে কটুক্তি করার জন্য তাকে শিক্ষার্থীরা রুয়েট ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের আপন ছোট ভাই রুয়েটের শাহনেওয়াজ সরকার সেডু। রুয়েটে চাকরি করেও আছেন নগরীর ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে। ক্ষমতার দাপটে রুয়েটের সমস্ত টেন্ডার বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিয়োগ বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা ও কথায় কথায় শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে তার ওপর। তিনি ৫ আগস্টের পর পলাতক। তবে ৫ আগস্টের আগে থেকেই সাময়িক বরখাস্ত আছেন পুরকৌশল শাখার জুনিয়র সেকশন অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু। রুয়েটে রাজনৈতিক তদবিরে চাকরীর পর থেকেই নিজ কর্মস্থলে না এসে নিতেন বেতন-ভাতা। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তার বেতন-ভাতাসহ তাকে শো-কজড করে রুয়েট প্রশাসন।
রুয়েটে ৫ আগস্টের পর কয়েকদিন অফিসে করেছিলেন রুয়েটের মাস্টারমাইন্ড খ্যাত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশীদ হারুন। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা তাকে অফিসে খোজাখুজি করলে সুকৌশলে রুয়েট ত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনিও পলাতক। রুয়েট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাষ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ের দিকে সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পান হারুণ। রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহব্বায়ক ছিলেন তিনি। ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকায় রাজনৈতিক তদবীরে খুব সহজেই রুয়েটে চাকরি পান তিনি। এরপর থেকেই তিনি রুয়েটে রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করেন। তার হাত ধরেই চাকরি হয় সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাস্বেবক লীগের বেশকিছু নেতার; যারা সকলেই জুলাই আগস্টের অভ্যূত্থানে হামলায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকায় জড়িত ছিল।
২০২৪ সালের ১০ আগস্ট ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণভাবে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একটি অফিস আদেশ জারি করে রুয়েট প্রশাসন। ওই আদেশে বলা হয়, সিন্ডিকেটের ১০৫তম (জরুরি) সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩ এর ৪৪ (৪) ও ৪৪ (৫) ধারা অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে। কিন্তু তারপরও রুয়েটে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই অফিস আদেশের তোয়াক্কা না করেই চালিয়েছেন রাজনৈতিক তদপরতা। এবিষয়ে রুয়েট প্রশাসনও ছিল উদাসীন। তবে গেলো ডিসেম্বরেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা রুয়েটে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের জোর দাবি জানায়। এছাড়াও তারা রুয়েটে যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাত্র-জনতার হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল এবং যারা তাদের ওপর জুলাই আগস্টে নানা ভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন সহ ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করেছিল তাদের বিরুদ্ধে রুয়েট প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
রুয়েটের ছাত্র বৈষম্য বিরাধী আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বলছেন, রুয়েট বিধি উপেক্ষা করে গত ১৬ বছর রাজশাহীর রাজনীতিতে সরাসরি মিছিল, মিটিং ও সভা-সমাবেশে সক্রিয় ছিল রুয়েটের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। তাদের সকলেই আওয়ামী লীগের মূল দল সহ কোনো না কোনো সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। তারা সকলে জুলাই-আগষ্টের গণঅভূত্থ্যানে অংশগ্রহণকারীদের নির্যাতন করেছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রুয়েট প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ, আমাদের পাশেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। সেখানে ৩৩ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে। রাবি ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে। আবার ছাত্রদের ওপর হামলার সাথে জড়িত রাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও পদক্ষেপ নিয়েছে রাবি প্রশাসন। কিন্তু সেদিন থেকে রুয়েট ভিসি দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে রুয়েট প্রশাসনকে একাধিকবার পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেও শিক্ষার্থীদের পাত্তা দিচ্ছে না, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সিভিল ডিপার্টমেন্টের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবু রায়হান বলেন, ‘ছাত্র জনতার ওপর গুলি বর্ষণ, বোমা ও পাথর নিক্ষেপ সহ আওয়ামী লীগের এই গণহত্যা ও নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতাকারী এখনো রয়েছেন ধরাছোয়ার বাইরে। তারা দিব্যি অফিস করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহণ করে উল্টো শিক্ষার্থীদের নানান ভাবে চাপ ও হয়রানি করার চেষ্টা করছেন কিছু শিক্ষক ও প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। পক্ষান্তরে আমরা জানতে পেরেছি, এসব কর্মকর্তারা তাদের স্বপদে বহাল রাখতে গোপনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।’
জানতে চাইলে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা জুলাই আগস্টের বিপ্লবকে প্রতিহত করার কাজে লিপ্ত ছিল এবং যারা অফিসে আসছে না; পলাতক আছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। অনেকের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এনিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটিও করেছি। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছাত্রদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, মাত্র দু’মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তারপরও এর মাঝেই অনেক কাজ-ই সম্পন্ন করেছি। দৃশ্যমান কাজ দেখাতে হলে আমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে। তদন্ত হবে, যাচাই হবে; তবেই ভালো ফলাফল মিলবে। আর ছাত্রদের যেকোনো প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে হবে। আমাকে না জানালে আমি তা কিভাবে জানবো, বলেন উপাচার্য।
এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
