একদিনের ট্যুরেই ঘুরে আসুন চীনামাটির পাহাড়ে
ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা নেত্রকোনা। মগরা ও কংস নদী পরিবেষ্টিত এই জেলা দেখতে অনেকটা চোখ বা নেত্রের মতো। তাই সোজাসাপ্টা নাম নেত্রকোনা। রাজধানী থেকে গাজীপুর, ময়মনসিংহ জেলা মাড়িয়ে পৌঁছাতে হয় সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোনায়। সেখানেই আছে চীনা মাটির পাহাড়। পাহাড় বলা হলেও এগুলো মূলত ছোট ছোট টিলা।
নেত্রকোণা জেলার বিরিশিরি অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। সেখানকার বিজয়পুর সাদা মাটির জন্য খ্যাত। দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও এর আশপাশের এলাকায় আছে চিনামাটির খনি। চিনামাটির এসব টিলা বা পাহাড় দেখতে খুবই মনমুগ্ধকর। লাল, সাদা, নীলাভসহ বাহারি সেখানকার মাটির রং।
চিনামাটি মূলত সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল। এটি একদিকে যেমন দর্শনীয় স্থান, পাশাপাশি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী এলাকা। চিনামাটির পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে সেখানে ভিড় জমায় পর্যটকরা। চাইলে একদিনের ট্যুরেও আপনি ঘুরে আসতে পারেন দর্শনীয় এই স্থানে। এখানেই আছে নীল জলের সোমেশ্বরী নদী। নীচে নীল পানির সোমেশ্বরী নদী আর ঠিক ওপারে ভারতের বড় বড় পাহাড়। এমন একটি দৃশ্য যে কোনো প্রকৃতি প্রেমীর মন ভুলিয়ে দিতে যথেষ্ট।
ছোট বড় টিলা, পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। পর্যটকরা মুগ্ধ হয়ে সেখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন। সমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকিশা বা মোটরসাইকেলে আধা কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে বিজয়পুরের সাদামাটি অঞ্চলে যাওয়া যায়।
চিনামাটির পাহাড় আর সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য ছাড়াও বিরিশিরিতে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে। যেমন- পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি, তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর, সেন্ট যোসেফের গির্জা।
এছাড়া দূর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চুড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড় চূড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন সবটুকু উপভোগ করা যায়। বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দীঘি। সেখান থেকেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। ভাড়া পড়বে ২৫০-৩৫০ টাকা। ৫-৭ ঘন্টার মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর বিরিশিরিতে। বাস সুখনগরী পর্যন্ত যাবে। সেখান থেকে নৌকায় ছোট নদী পার হতে হবে।
ওপার থেকে রিকশা, টেম্পু ,বাস বা মোটর সাইকেলে দূর্গাপুর যাওয়া যায়। রিকশায় গেলে ৮০-১০০ টাকা। বাস বা টেম্পুতে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। এছাড়াও মোটর সাইকেলে ২ জন ১০০ টাকা লাগবে। তারপর বিরিশিরি বাজার থেকে ব্যাটারি রিকশা ভাড়া করে চিনামাটির পাহাড়সহ আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন।
পুরো দিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা। ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যেই উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি, রাণীখং চার্চ,সোমেশ্বরী নদী, গারো পল্লী, কমলা বাগান ও চীনামাটির পাহাড় ঘোরা হয়ে যাবে।
কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
দুর্গাপুরে থাকার জন্য ভালো মানের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস আছে। এছাড়াও দুর্গাপুরে আরও কিছু মধ্যম মানের হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা আছে। যে রেস্ট হাউজে থাকবেন সেখানেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন মধ্যমানের রেস্টুরেন্টে ভাত, ডাল থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছ আর মাংস খেতে পারবেন বিরিশিরিতে।
মনে রাখবেন, নেত্রকোনা যেতে হলে খুব একটা পূর্ব পরিকল্পনার দরকার নেই। তবে ট্রেনে যেতে চাইলে ৩-৪ দিন আগে টিকিট কেটে নিতে হবে। তাৎক্ষণিক টিকিট কাটার কথা চিন্তা মাথায় রাখলে টিকিট নাও পেতে পারেন। যদি বাজেট ট্যুরের প্ল্যান করেন তাহলে কমপক্ষে ৫ জন হলে ভালো হয়, যেহেতু বেশিরভাগ জায়গা ঘুরে দেখতে হয় অটোরিকশা দিয়ে, এতে অন্তত ৫ জন হলে খরচ কিছুটা কম পড়বে।
Aminur / Aminur