ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

রাজউক দুর্নীতি পর্ব-১১

সেবা গ্রহিতার ৬০ লাখ টাকা করিমের পকেটে


আলমগীর হোসেন photo আলমগীর হোসেন
প্রকাশিত: ১৪-১-২০২৫ দুপুর ৩:৩৭

প্রবাদ আছে টাকার গরম সবাই সইতে পারেনা। টাকা এমনই একটি বস্তু যা দিয়ে মসজিদ, মন্দির বা অসংখ্য ভালো কাজ যেমন করা যায় তেমনি মদ, গাজা, ইয়াবা, অসামাজিক কার্যকলাপসহ অসংখ্য খারাপ কাজও করা যায়। টাকায় সম্পর্ক যেমন মজবুত হয় তেমনি সম্পর্ক নষ্টও হয়। তাই ঘটিয়েছেন আব্দুল করিম। গ্রাহকের ৬০ লাখ টাকা মেরে সেই টাকা দিয়ে ইয়াবা সেবনসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

তিনি বর্তমানে দপ্তরটির প্রশাসন শাখায় সংযুক্ত। সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি করিমের মতো কিছু অসাধু মানুষের কারনে একের পর এক নিত্য নতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের  ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজউকের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন গেড়ে বসেছে। সংস্থাটির সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরেই দুর্নীতি ও ভয়াবহ অনিয়ম রয়েছে। আর এসব দুর্নীতির ক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত স্পষ্ট। ফলে, রাজউক কর্তৃক সার্বিক জবাবদিহি কাঠামো কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন ব্যহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মন্তব্য, নতুন করে দপ্তরটির বারোটা বাজানোর জন্য এই আব্দুল করিমদের অবদান সবচেয়ে বেশি। শোনা যায়, এখানকার নিম্নপদের কর্মচারী পিয়ন, ড্রাইভার, থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পদে আসীন চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই কোটি পতি। মিডিয়ার বদৌলতে মাঝে মধ্যে অনেকের শাস্তির কথা শোনা গেলেও সেগুলো কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। যেটি ঘটেছে আব্দুল করিমের ক্ষেত্রে। তার অর্থ আত্মসাত ও ইয়াবা খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো তাকে দায় মুক্তি দিচ্ছে। 

প্রশ্ন উঠেছে দায়মুক্তিদাতার ব্যাপারেও। দায় মুক্তির পর দিনকে দিন আরো বেপরোয়া হচ্ছে তার চাল চলন ও আচার ব্যবহার। যেন দেখার কেউ নেই। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। করিমের মতো কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যাদের কাছে সেবাগ্রহীতার অর্থও নিরাপদ নয়। অভিযোগ রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) ছোট পদ থেকে বড় পদে চাকরির পাওয়ার পর পর অধিকাংশ কর্মচারি-কর্মকর্তা যেন প্রতিযোগিতা করেন কে হবেন সবার আগে কোটিপতি। কোটিপতি হতে গিয়ে তখন তারা বেছে নেন অসাধু উপায়। তাদেরই একজন মো. আব্দুল করিম।

আব্দুল করিম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পড়ালেখা শেষ করে ২০১৮ সালের শেষের দিকে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসাবে রাজউকে যোগদান করেন।  অভিযোগ আছে, ''গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (গাউক)-এ মাত্র ৭ বছর চাকরি করেই গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য (চুক্তি ভিত্তিক), ঠিকাদারদের থেকে ঘুষ-কমিশন বাণিজ্য, ব্যবসায়িক চুক্তি ও অবৈধভাবে লেনদেন করে গড়েছেন নানা সম্পদ। নামে-বেনামে ঢাকাসহ গ্রামের বাড়ি রংপুরে রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ।

সম্প্রতি, গুলশান-১ রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স ভবনে অবস্থিত এলিট কনাস্ট্রাশন কোম্পনির হয়ে বাদী দিবাকর চন্দ্র রায় ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় (মামলা নং ২৯০৬/২৩) এর পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ড বিধি ৪০৬ ধারা, ৪২০ ধারা ও ৫০৬ ধারায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দী ছিলেন আব্দুর রহিম। বর্তমানে বিবাদী মো. আব্দুল করিম, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) জামিনে আছেন। এদিকে, ২৯/০১/২০২৪ইং তারিখে স্মারক নম্বর-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.২৭.০১.২৪.(১৬৮) এ জানা যায়, এলিট কনস্ট্রাকশন কোম্পনির ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দী থাকায় রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি ৫ মোতাবেক মো. আব্দুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। 

এলিট কনস্ট্রাকশন মামলার প্রতিবেদনে জানা যায়, এলিট কন্ট্রাকশন, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স কাম কার পার্কিং গুলশান, ঢাকা সি.আর. মামলা নম্বর ২৯০৬/২৩ গুলশান, ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬ পেনাল কোড রুজু করে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্তের জন্য ডিসি ডিবি গুলশান বরাবরে পাঠানো হয়। ডিসি ডিবি গুলশান কার্যালয়ের স্মারক নম্বর (গো:গুল:বি:) (সি আর ২০২৩) ৪০৪ তারিখ ২৪/০৮/২০২৩ খ্রি: মুলে মামলাটির তদন্তভার কাজী শরিফুল ইসলাম পুলিশ পরিদর্শক, ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম, গুলশান গোয়েন্দা বিভাগকে প্রদান করে। তদন্ত শেষে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দেন।

এতে দেখা যায় বিবাদী মো. আব্দুল করিম, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), পিতা: আফসার আলী, বনানী নিবাসী, ঢাকা। বাদীর (এলিট কন্ট্রাকশন) নিকট হতে ২১/০৩/২০২১ তারিখের ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা, ২১/০৪/২০২১ইং তারিখে ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা, ২৫/০৫/২০২১ তারিখে নগদে ২০ বিশ লাখ টাকা ও ২৭/৭/২০২২ তারিখে নগদে ৩০ লাখ টাকা, মোট ৬০ লাখ টাকা বিভিন্ন অজুহাতে ধার হিসেবে গ্রহণ করে।

প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণ আদালত আব্দুল করিমকে মামলায় জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। বিগত ১/১/২০২৪ ইং তারিখের সি.এম.এম আলাদতের স্বাক্ষরিত বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক বিবেচনায় আপষের শর্তে ১ হাজার টাকা বন্ডে বিজ্ঞ কৌশলী এবং একজন স্থানীয় ব্যক্তির জিম্মায় আসামির জামিন আগাম ধার্য তারিখ ৩০/০১/২০২৪ পর্যন্ত মো. সাদ্দাম হোসেন মেট্রোপলিট্রন ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুর করেন।

এর আগে, কর্মজীবনের শুরুতেই আব্দুল করিম সরকার বিরোধী বিভিন্ন অপ-প্রচারে লিপ্ত হয় যার প্রমাণ মিলে রাজউকের এক অফিস আদেশে। অফিস আদেশ নম্বর-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.৩১.০০৭.১৮-২৩৯৮ তারিখ-১৪/০৮/২০১৮ সাল। আব্দুল করিম তার ফেসবুক আইডি হতে ৪ জানুয়ারি ২০১৭, ৩১ জুলাই ২০১৭, ১১ ও ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৫ মে ২০১৮, ৪ আগষ্ট-২০১৮ তে সরকার বিরোধী আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান এবং বিভিন্ন অপপ্রচার শেয়ার করায় রাজউকের ভাবমূর্তি মারাত্বক ভাবে ক্ষুন্ন হয়। রাজউক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর ৩৭ (খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরন ও ৩৭ (ছ) অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হওয়ায় বিগত ৮/৮/২০১৮ ইং তারিখে উক্ত প্রজ্ঞাপনে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত রাজউক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এবং ৪৩ (১) বিধি মোতাবেক আব্দুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিল।

রাজউকের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিম অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, আমাকে আমার দপ্তর থেকে  নির্দোষ প্রমাণিত করা হয়েছে। তাদের সাথে শত্রুতা তো একটাই আমার জন্য তাদের কাজ বাতিল হয়ে গিয়েছে। কারণ আমি সঠিকভাবে সার্টিফিকেট যাচাই করতে পাঠিয়েছি। তমা কনস্ট্রাকশন ও রাজউকের একটি সিন্ডিকেট আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এসকল বিষয়ে এলিট কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

সে সময় অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল করিম, এলিট কনসস্ট্রাকশন থেকে ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি থাকায় রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি ৫ মোতাবেক সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলমান আছে বলে জানা গেছে। চলবে----

এমএসএম / এমএসএম

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ

পিডব্লিউডি এর কয়েকজন স্টাফের বিরুদ্ধে আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগ

অবশেষে সেই মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশীট

তুরাগ নদীতে মাটি খেকো চক্র বেপরোয়া

আদম পাচারের ফাঁদ পেতে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ

এলজিইডিতে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে!

প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার চাকরি বাঁচাতে মরিয়া,দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন

দুর্নীতির শীর্ষে ২৪ তম বিসিএস ক্যাডারের অনেকেই

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ১০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যাকসিন ক্রয়ে ভয়ংকর অনিয়ম

সংবাদ প্রকাশ করায় কন্ঠরোধের অপচেষ্টা