ফেসবুকে ভুয়া এজাহার ভাইরাল, চট্টগ্রামে প্রতারণার নতুন কৌশল

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় একাধিক ভুয়া মামলার কপি ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে বিভিন্ন মামলার এজাহারের কপি ভাইরাল হচ্ছে, যা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, কিছু অসাধু ব্যক্তি মামলার ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টাও করছে বলে জানা গেছে।
কর্ণফুলীতে জামাল, ইব্রাহিম, আঙ্গুর ও জালাল নামক ব্যক্তিদের নামে বাদি করে একাধিক ভুয়া এজাহার ছড়িয়ে পড়েছে। এসব মামলার কোথাও ২১২, কোথাও ২১৭, আবার কোথাও ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ জানান, আমাদের থানায় এমন কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়নি, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। কিছু ভুয়া এজাহার ঘুরছে বলে শুনেছি, তবে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। কেউ প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত থানায় অভিযোগ জানাতে হবে, যাতে আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।
পুলিশ জানিয়েছে, কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বক্স ভাঙচুরের অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট অজ্ঞাত ৬০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের দাবি, এতে প্রায় ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট এবং ৫ লাখ টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, আনোয়ারা থানায় চার বছর আগে বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানসহ ১১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। নেতাকর্মীরা আতঙ্কে গা ঢাকা দিচ্ছেন, অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। ছড়িয়ে পড়া মামলার বেশিরভাগ কপি কম্পিউটারে টাইপ করা, যা যাচাই করলে ভুয়া বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নেতাকর্মীরা উদ্বেগে রয়েছেন— থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, গ্রেপ্তারের তালিকায় নাম আছে কি না তা জানার জন্য তারা ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ইতোমধ্যে সিএমপির বিভিন্ন থানায় হওয়া মামলায় একাধিক নেতা আসামি হয়েছেন এবং কেউ কেউ কারাগারেও রয়েছেন।
এ সুযোগে একটি প্রতারকচক্র মামলার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেক নেতা দেশ ছেড়েছেন, কেউ কেউ ঢাকার গুলশান, বনানী, চট্টগ্রাম শহর বা ভাড়া বাসায় লুকিয়ে আছেন। এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, আমরা এখন ঘরছাড়া। নিজের বাড়িতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভুয়া মামলার গুজব ছড়ানো হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কর্ণফুলীতে কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো মামলার সত্যতা যাচাই ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ভুয়া মামলা বানিয়ে কাউকে হয়রানি করা হলে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের এক স্থানীয় নেতা, যিনি নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করতে চাননি, তিনি বলেন, আমাদের নামে মামলা হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা নিয়মিত পরিচিতজনদের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছি। যেহেতু কিছু ভুয়া মামলার কপি ছড়ানো হয়েছে, তাই আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি।
অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, আমরা রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক কোনো মামলা দায়ের করিনি, এমনকি আমাদের দল থেকেও এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর কিছু ব্যক্তি হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রতারণামূলক কাজ করছে, যা আমাদের দল সমর্থন করে না।
জাতীয় পার্টির কর্ণফুলী উপজেলা শাখার এক নেতা বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় সব পক্ষকেই সতর্ক থাকতে হবে। গুজবের আশ্রয় না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে নিশ্চিত তথ্য নেওয়া উচিত।
কিছু ব্যক্তি রাজনৈতিক মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতারকচক্র মামলার ভয় দেখিয়ে কারো কারো কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। তবে এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
একজন ভুক্তভোগী, যিনি পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, আমাকে ফোন করে বলা হয়েছে যে আমার নামে মামলা হয়েছে, এবং মামলা থেকে বাঁচতে কিছু টাকা দিলে তারা ব্যবস্থা করতে পারবে। পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি, আসলে আমার নামে কোনো মামলা নেই।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভুয়া তথ্য ও গুজব রোধ করা জরুরি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ভুয়া মামলার কপি ছড়ানো বা প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে।
একই বিষয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের ব্যাপারে তদন্ত করছি। কেউ যদি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএসএম / এমএসএম

নুরাল পাগলা’র দরবারে পুলিশের ওপর হামলা, ৩৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় ডেকোরেশন কর্মীর লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রারে রৌমারীতে সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

চৌগাছায় পনিতে ডুবে আড়াই বছরের শিশু আবু বক্করের মৃত্যু

কালীগঞ্জে দুই মাদক কারবারী আটক

হাতিয়ায় চেয়ারম্যান ঘাট-নলচিরা নৌরুটে নতুন সি-ট্রাক উদ্বোধন

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো- মোস্তাফিজুর রহমান

রাজশাহীর সেই বহিস্কৃত এসআই ২ দিনের রিমান্ডে

রাজশাহীতে আদিবাসীদের ভয় দেখিয়ে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন

হাসিনার শাসন ইতিহাসের জঘণ্যতম অধ্যায়: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ছাত্রদলের উগ্র ও সন্ত্রাসী স্লোগানের প্রতিবাদে সাভারে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

পটুয়াখালীর জেলের জালে ৪৪ কেজির কোরাল, বিক্রি ৬৬ হাজার টাকায়
