হাইব্রিডের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় জাতের ধান

কৃষিব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যের দাপটে বারহাট্টার ফসলি মাঠ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির ধান। বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন হাইব্রিড জাতের ধান চাষাবাদের দিকে। ফলে কৃষকের মাঠে দেশীয় জাতের ধানের বদলে জায়গা করে নিচ্ছে বিভিন্ন হাইব্রিড প্রজাতির ধান। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে সরকারও জোর দিচ্ছেন হাইব্রিড ধান চাষাবাদে।
এক সময় এ উপজেলার কৃষকরা বিরই, কালোজিরা, নাতিশাইল, টেপি, জলকুমড়ী, কাইশাবেণী, কালজিরা, চিনিশাইলসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের ধানের আবাদ করতো। এখন আউশ, আমন, বোরো সব মৌসুমেই সরকার অনুমোদিত কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানির নতুন নতুন নামের বীজের ওপর নির্ভরশীল কৃষক। ফলে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলা সদর, সাহতা, বাউসী, চিরাম, রায়পুরের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, দেশী বা স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে স্বল্প জীবনকালীন বা হাইব্রিড ধানের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়। তাছাড়া স্বল্প জীবনকালীন (ব্রি-২৮, ব্রি-৮৮ ব্রি- ৮৯, ব্রি- ৯২, ব্রি-৯৬) জাতের ধান স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে প্রায় ২০-২৫ দিন আগে কাটা যায়। সেজন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদের দিকে ঝুঁকছেন তারা।
উপজেলা সদরের গড়মা গ্রামের বাসিন্দা তপন সরকার বলেন, হাইব্রিড ধান চাষের মূল কারণ হচ্ছে ফলন বেশি হয়। আর দেশী ধানে পোকামাকর কম হলেও ফলন কম হয়, এজন্য আমরা স্থানীয় জাতগুলো আবাদ কম করি। দেশী ধান এখন আবাদ হয় না বললেই চলে। আগে আমরা বিরই, নাতিশাইল, তুলসীমালা, কালোজিরা এগুলোর আবাদ করতাম। কিন্তু এখন এগুলো নাই বললেই চলে। সময়ের সাথে সাথে এগুলো হারিয়ে গেছে।
তিনি জানান, আগে আমরা দেশীয় জাতের ধান চাষ করতাম। দেশীয় জাতের ধান চাষের উৎপাদন খরচ কম ছিল। তখন ধান কাটার মৌসুমে গ্রামে পিঠা পায়েস, চিড়া, খই, মুড়ি তৈরির ধুমও ছিল। এখন তা আর হয় না। দেশীয় জাতের ধান আবাদে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হতো না।
রায়পুর ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামের জালাল উদ্দীন আফসোস করে বলেন, আগের সময়ে খুব ভালো মানের ধান ছিল। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, নাজিরশাইল, চিনিশাইল, কালোজিরা, টেপি এগুলো ছিল। আমাদের বাবাকেই দেখেছি তিনি অল্প অল্প করে আট রকমের ধান চাষ করতেন। কিন্তু বর্তমানে হাইব্রিড ধান ছাড়া আর কোনো কিছু চাষ হয় না বললেই চলে। সবাই শুধু ধানের ফলন বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। আমরা এখন চালের সঙ্গে বিষ খাচ্ছি। কীটনাশক ছাড়া কোনো ধানের আবাদ করা যায় না। আগে তো এগুলো কোনো কিছু দিতে হয় নাই, সার পর্যন্ত দিতে হয় নাই। আগে আমরা যে ভাত খেতাম সেটা অনেক সুস্বাদু ছিল, এখন তো শুধু খেয়ে যাচ্ছি এই পর্যন্তই কোনো রস-কষ নাই।
তিনি আরও বলেন, দেশীয় জাতের ধান চাষাবাদ করতে কোনো বীজ বাজার থেকে কিনতে হতো না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলতো। বর্তমানে আমরা যে ধান চাষাবাদ করছি তা বীজ রাখতে পারছি না। বছরে বছরে বাজার থেকে চড়া দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ধান রোপণের পর জমিতে কীটনাশক, সার, সেচ প্রচুর পরিমাণ দিতে হচ্ছে। না হলে ফলন ভালো হচ্ছে না।
ডেমুরা গ্রামের বাসিন্দা কৃষাণী কুলসুমা বেগম বলেন, আমরা আগে দেখছি বছরে সবাই দুইটা ফসল আবাদ করতো। একটা বাওয়া আর একটা আউশ। তখন বোইল্লা নামের ধান চাষ করতো, কালো রঙের হতো ওই ধানটা। ১০-১৫ সের করে ধান হতো প্রতি কাঠায়। আর এগুলো দিয়েই কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে আমরা দিন পার করতাম। আর এখন সমপরিমাণ জমি থেকেই কয়েক গুণ বেশি ধান আমরা ঘরে তুলতে পারি। আগে ৫-৭ জাতের ধান ছিল কিন্তু এখন যে কত ধরনের ধান এটার কোনো শেষ নেই। আমি আর এখন কোনো ধানের নাম বলতে পারি না। আগে আমাদের মা-চাচিরা বীজ ধান মটকায় ভরে রাখতরন। আর এখন দেখি সবাই প্যাকেট ধান কিনে নিয়ে এসে চাষ করে। আমরা বললে তো আর পুরুষ লোকেরা শুনে না। আমরা যদি বলি বিরই ধান চাষ করো, বিরইয়ে ভাত খাইতে খুব ভালা, তারা তো সেটা করবে না। আগে এক বাড়িতে কালোজিরা চালের ভাত রান্না করলে আরেক বাড়ি থেকে বুঝা যেতো কোন চালের ভাত রান্না হচ্ছে। আর এখন তো পোলাওয়ের চাল রান্না করলেও গন্ধ পাওয়া যায় না।
রামভদ্রপুর গ্রামের কৃষি কাজের সাথেঅবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দুলাল রায় (দুলু) বলেন, আমি হাইব্রিড এবং স্থানীয় জাত দুটোই চাষ করেছি। হাইব্রিডের ক্ষেত্রে দেখা যায় খরচ বেশি হয়, আবার ফলনও ভালো হয়। আবার দেশী ধানের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার কম দিতে হয় এবং ফলনও কম হয়। যেমন কালোজিরা ধান আমি দুই কাঠা জমিতে রোপণ করেছি। এটাতে আমার খরচ কম হয়েছে কারণ এখানে রাসায়নিক সার কম দিয়েছি। আবার উৎপাদনও কম হয়েছে। কিন্তু এ ধানের চাল অনেক সুস্বাদু এবং অনেক সুগন্ধি আছে। আর হাইব্রিড যে ধানের জাতগুলো আছে সেগুলো পাঁচ-ছয় মণ করে হয়েছে। কিন্তু এই ধানটা সিদ্ধ করে সংরক্ষণ করলে এটার চালটা ততটা সুস্বাদু হয় না। হাইব্রিড জাতগুলো আসায় আমাদের কাছ থেকে দেশীয় ধানের বীজগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটাও সত্যি যে, আমাদের জায়গা বাড়ছে না কিন্তু মানুষ বাড়ছে। এজন্যই আমাদের মাঝে হাইব্রিড জায়গা করে নিচ্ছে আর দেশি জাতগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় ১৮ হাজার স্থানীয় ধানের জাত ছিল, যা এখন বিলুপ্ত প্রায়। আমি চাই আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশীয় জাতগুলোকে সংরক্ষণ করি। এগুলো যেন আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে না যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, মাঠপর্যায়ে ধানের উৎপাদন বাড়াতে যে সব জাতের ফলন বেশি হয় সে সব ধানের জাত সম্প্রসারণে কাজ করে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ মূলত কৃষক ভাইদের ধানের উৎপাদন যেন বেশি হয় সেটি মাথায় রেখে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। নতুন যে জাতগুলো আছে বিশেষ করে আমন মৌসুমের জন্য ব্রি-ধান ৭১, ব্রি-ধান ৭৫, ব্রি-ধান ৮৭, ব্রি-ধান ১০৩, এবং বিনা ধান-১৭ এগুলো আমরা মাঠপর্যায়ে বিস্তার ঘটাচ্ছি। বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি-ধান ৮৮, ব্রি-ধান ৮৯, ব্রি-ধান ৯২, ব্রি-ধান ১০২ এই জাতগুলো আমরা কৃষকদের আবাদের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলোর ফলন ভালো এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম।
এমএসএম / এমএসএম

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সেকাল-একাল বই এর মোড়ক উন্মোচন

বড়লেখায় ইজ্জত বাঁচাতে চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে কলেজছাত্রী আহত, চালক আটক

মানবিক সাহায্যের আবেদন-‘বাঁচতে চায় শিশু ফরহাদ আলী’

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহীতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

কমলগঞ্জে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকল্প পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা হেঁচড়াসহ মারধরের অভিযোগ

বাঘা থানার অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত ও নিয়মিত মামলার ৬ আসামি গ্রেফতার

নবীনগরে কাঁঠালের ছড়াছড়ি: বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক ও ভোক্তা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় স্টপেজের দাবিতে ট্রেন থামিয়ে অবরোধ

সন্দ্বীপ থানার অভিযানে ১২ মামলার আসামী গাঁজা ব্যবসায়ী আটক

নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ যুবদল সভাপতি গ্রেফতার
