ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে প্রাচীন ঐতিহ্য ঘানি শিল্প


বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি photo বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৪-৩-২০২৫ দুপুর ২:৪৩

আধুনিকতার ছোঁয়া ও নিত্যনতুন যন্ত্রপাতির ভিড়ে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে আহবমান গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য 'ঘানি শিল্প’। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে গ্রামে-গঞ্জে এখন আর চোখে পড়ে না গরু চালিত কাঠের ঘানিতে ভাঙ্গা সরিষার তেল। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের শব্দে এখন আর শোনা যায় না ঘানি শিল্পের সেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল ঘুরে ও প্রবীণদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এক সময় ঘানিতে সরিষা দিয়ে গরুর সাহায্যে ঘানি ঘুরিয়ে তেল বের করা হতো। গৃহস্থরা ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে আলু, বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন ভর্তা ও তরি-তরকারি সব ধরণের রান্নার কাজে ব্যবহার করতো। এক কথায় সে সময়ে ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল ছাড়া রান্নাবান্নাতে যেন গৃহিনীরা আর অন্যকিছু চিন্তাই করতেন না। অন্যদিকে ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার খৈল মাছের খাদ্য, গো খাদ্য, পানের বরজ ও ক্ষেতখোলাতে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা হতো।

তারা বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নে বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে ঐতিহ্যবাহী ঘানি শিল্প আর দেখতেই পাওয়া যায় না। ফলে এ পেশায় জড়িত অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। এখনও যারা আছে তারা তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য এ পেশাকে কোন রকম আকঁড়ে ধরে রেখেছে। এক সময় বারহাট্টা উপজেলা জুড়ে শতাধিক ঘানি ছিল। এখন হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিয়নে অতিকষ্টে পাঁচ থেকে সাতজন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে।

উপজেলার মোয়াটি গ্রামের জজ মিয়া, শেখেরপাড়া গামের সুরুজ মিঞা, খৈকোনা গ্রামের সুলতান আহমদ বলেন, আগেকার দিনে দিনরাত গরু দিয়ে কাঠের ঘানি ঘুরিয়ে সরিষা বীজ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় নিংড়ানো হতো খাঁটি সরিষার তেল। তেল সংগ্রহ করে হাঁড়িতে করে গ্রাম-গঞ্জে ফেরি করে এবং বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হতো। হাঁড়ির ঢাকনির নিচে থাকতো তালের বিচি অথবা নারকেলের শক্ত অংশ (আর্চি) দিয়ে তৈরা করা বাঁশের হাতলের ওড়ং। তেল তুলে দেয়ার জন্য এ ওড়ং ব্যবহার করা হতো। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতেন ঘানি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।  চাহিদা থাকলেও খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না তারা।

উপজেলার সাহতা এলাকার ৮০ বছর বয়সী একসময়ে ঘানি থেকে সরিষার তেল তৈরির কারিগর ইমান আলী জানান, ঘানি ব্যবহার করে তেল বের করতে ঘানির সঙ্গে একটি গরু চোখ বেঁধে দেওয়া হতো। পরে গরুটি চরকীর মতো চারদিকে নিজ মনে ঘুরতে থাকতো। তখন ঘানির নল দিয়ে টিপ টিপ করে ফোঁটা ফোঁটা তেল বের হতো। এ যেন সত্যিই গ্রাম বাংলার ঐহিত্যের অহংকার। কিন্তু কালের বিবর্তণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘানি শিল্প আজ বিলুপ্ত।

বাউসী বাজারে তেল কিনতে আসা ক্রেতা তৈয়ুব আলী, রোকসানা বেগম, নসরজ্জামান বলেন, আমরা কলু ইকবালের কাছ থেকেই সরিষার তেল কিনছি। তেলও গুণগত মানও খুব ভালো। বাজারে প্রচলিত সরিষার তেলের চেয়ে দাম একটু বেশি হলেও আমরা এই তেলই ক্রয় করি। আমাদের পরিবার এই তেল পছন্দ করে। তবে অনেকের মতে এখনো খাঁটি সরিষার তেল বলতে ঘানির তেলকেই বুঝিয়ে থাকেন। ঘানির তেলের এই ব্যাপক চাহিদার পরও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানি শিল্প।

বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক (বিজ্ঞান বিভাগ) ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সরিষা Mustard Cruciferae গোত্রের তৈল উৎপাদক দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। একবর্ষজীবী সরিষার বৈজ্ঞানিক নাম- Brassica napus। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তেলের ঘানি শিল্পের পরিবর্তে যন্ত্র চালিত তেলের কল চালু হওয়ায় এবং গৃহস্থরা খাঁটি সরিষার তেলের বিকল্প যেমন সয়াবিন, পামওয়েল, মেশিনে ভাঙ্গানো সরিষা তেল ব্যবহার করায় ঘানির সরিষা তেলের চাহিদা দিন দিন কমতে থাকায় এ শিল্প বিলুপ্তির পথে। আবার সরিষার আবাদ কমে যাওয়ায় এবং সরিষার দাম বেশি হওয়ায় ঘানির তেলের দামও বেশি।

বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমেন বিশ্বাস বলেন, খাঁটি সরিষার তেল সবাই খুঁজলেও ঘানি ভাঙা সরিষার তেলের খবর কেউ রাখে না। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর সেই ঘানি। অথচ দুই দশক পূর্বেও গ্রামবাংলায় ঘানি দেখা যেত। প্রক্রিয়াজাতকরণের এ পুরোনো পদ্ধতি থেকে পাওয়া তেল মান ও বিশুদ্ধতার দিক থেকে সেরা ছিল।

তিনি আরও বলেন,  আমার মতে ঘানি পেশাটি হারিয়ে যাওয়ার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে-আধুনিক প্রযুক্তি। কেউ কেউ এখনো এ ঘানি শিল্পকে ধরে রেখেছেন। কাঠের তৈরি এ ঘানিকে দেশের কোনো কোনো এলাকায় গাছের তেল বা তেলেরগাছ নামেও পরিচিত। এ পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কলু বা তেলী নামে পরিচিত। পারিপার্শ্বিক চাপে বর্তমানে কলু সম্প্রদায় তাদের ঘানি পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। ফলে আগের মতো খাঁটি সরিষার তেলের সেই স্বাদ আর পাওয়া যাচ্ছে না। আধুনিক মেশিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খেতে খেতে তাদের পারিবারিক পেশা এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমান প্রজন্মের নিকট ঘানিতে তেল তৈরির বিষয়টি কাল্পনিক গল্পের মত।

বারহাট্টা গোপালপুর বাজারের তেল বিক্রেতা আজমল বেপারি বলেন, বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। তাই গরুর ঘানি দিয়ে তেল ভাঙ্গনো সময় সাপেক্ষ ব্যপার। ক্রেতারা তাড়াতাড়ি তেল পেতে আগ্রহী। তাই তাদের চাহিদা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব মেশিনে ভাঙ্গিয়ে তাদের চাহিদা পূরণ করি। মেশিনে ভাঙ্গা তেলের চেয়ে ঘানিতে ভাঙ্গা তেলের ঝাঁঝ বেশি।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক নিপেন্দ্র গোস্বামী জানান, সরিষার তেলে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন-ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-এ সহ নানা উপাদান। সরিষার তেল ত্বক ভালো রাখে। ত্বকের ব্রণ হোক বা ট্যান পড়ো, সব ক্ষেত্রেই সরিষার তেল কাজে দেয়।

এমএসএম / এমএসএম

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সেকাল-একাল বই এর মোড়ক উন্মোচন

বড়লেখায় ইজ্জত বাঁচাতে চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে কলেজছাত্রী আহত, চালক আটক

মানবিক সাহায্যের আবেদন-‘বাঁচতে চায় শিশু ফরহাদ আলী’

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহীতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

কমলগঞ্জে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকল্প পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা হেঁচড়াসহ মারধরের অভিযোগ

বাঘা থানার অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত ও নিয়মিত মামলার ৬ আসামি গ্রেফতার

নবীনগরে কাঁঠালের ছড়াছড়ি: বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক ও ভোক্তা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় স্টপেজের দাবিতে ট্রেন থামিয়ে অবরোধ

সন্দ্বীপ থানার অভিযানে ১২ মামলার আসামী গাঁজা ব্যবসায়ী আটক

নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ যুবদল সভাপতি গ্রেফতার

কাউনিয়ার মেহরাব নৌপ্রধান স্বর্ণপদক পাওয়ায় এলাকায় অভিনন্দনের ঝড়