ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

প্রিমিয়ার গ্রুপের ইকবাল গেছে পালিয়ে, দুর্নীতির দুর্গ আছে দাঁড়িয়ে


শামীম আহমদ photo শামীম আহমদ
প্রকাশিত: ৭-৪-২০২৫ দুপুর ৪:২৫

তেজগাঁও রমনা অঞ্চলের সাবেক এমপি হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল বা এইচ বি এম ইকবাল প্রিমিয়ার গ্রুপের স্বত্বাধিকারী। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নানাভাবে অপব্যবহার করে নিজে গড়েছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। তার নামে রয়েছে দুদকের দুর্নীতির মামলা। ২০২৪ সালের আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনে ইকবাল আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন "হিলটন" স্থাপনের চুড়ান্ত পর্যায়ে ছিলেন। সরকার পতনের সাথে সাথেই তিনি হোটেলটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখে পালিয়ে গেছে। রাজউকের অনুমতি লঙ্ঘন করে নির্মিতব্য ৪২ তলা ভবনটি আছে দাঁড়িয়ে।

বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ইবাল সেন্টার সকলেরই চেনা। এরকম বেশ কিছু বড় বড় ভবন রয়েছে এইচবিএম ইকবালের। ব্যবসা আছে শতো আইটেমের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এইচবিএম ইকবাল প্রিমিয়ার গ্রুপ অফ কোম্পানিজ লিমিটে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ঢাকা-১০ আসনের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদ সদস্য। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে ঢাকা-১০ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। এর পরে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে বহু-মাত্রিক কর্পোরেট সংস্থা সৃষ্টি করেন, যা ব্যাংকিং, বীমা, লিজিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, সিমেন্ট, পেট্রোলিয়াম ও লুব্রিকেন্টস, প্রশিক্ষণ, ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ, ভ্রমণ ও পর্যটন, বিমানচালনা, মেডিকেল সেন্টার, স্টিল ও সুপার মার্কেট, এইচআরডি, সেবা খাত এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত ইকবাল আওয়ামী লীগের ঢাকা শহর শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। অজানা এক কারনে শেখ হাসিনার দরজা ইকবালের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। গত চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের ডোনার। নিজের বানিজ্য সম্প্রসারণ করতে তিনি আওয়ামী লীগের অন্য অন্য নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে।

প্রিমিয়ার গ্রুপ অফ কোম্পানি লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, প্রিমিয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লি. হিলটন হোটেল ও রিসোর্টস স্টার আমেরিকান চেইন হোটেল, প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লি. (রেঁনেসা বাই মেরিয়ট ইন্টারন্যাশনাল, পাঁচ তারকা আমেরিকান চেইন হোটেল), বেঙ্গল টাইগার সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রিমিয়ার টেকনোলজী এন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা এর ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, এটিএবি সেন্টার লি, বুখারা রেস্তোরাঁ (প্রাঃ) লিমিটেড, প্রিমিয়ার টেলি লিংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান। এছাড়াও সেনচুর লিমিটেড এবং নওরিন ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ইকবাল সেন্টার (বনানী-এ ২৩ তলা বাণিজ্যিক ভবন) এর কর্ণধার
কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল এর কর্ণধার ও বীকন ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এয়ার কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল লি. চেয়ারম্যান বনানী ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুর লি. চেয়ারম্যান আইবিসি পাওয়ার লি. চেয়ারম্যান। এছাড়াও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডেরও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন এই ইকবাল। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের প্রথম বিমান পরিবহন সংস্থা অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্সের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা এইচবিএম ইকবাল। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্থায়ীভাবে স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমোদন প্রদান করে। ২০২৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ইকবালের স্ত্রী মমতাজ বেগমের নামে নামকরণ করে।

২০০১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মালিবাগ এলাকায় ইকবালের সমাবেশ থেকে তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সমাবেশে গুলি চালানো হয়। ঘটনার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। বিএনপির সমাবেশে চারজন নিহত হন। ২০০২ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোয়েন্দা শাখা ইকবালসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় "রাজনৈতিক হয়রানির মামলা" উল্লেখ করে অভিযোগ প্রত্যাহারের সুপারিশ করার পর ২০১০ সালের আগস্টে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ তার, এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী এবং আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি বাতিল করে। ২০০৭ সালের ২৫ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইকবালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনে। ২০০৮ সালের ১১ মার্চ তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়; ২২.৯ কোটি টাকার অঘোষিত সম্পদের জন্য ১০ বছর এবং ১৬ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তির তথ্য গোপন করার জন্য ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার স্ত্রী মমতাজ বেগম, দুই ছেলে মঈন ইকবাল ও ইকরাম ইকবাল এবং এক মেয়ে নওরিন ইকবালকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এইচবিএম ইকবালকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১১ সালে হাইকোর্ট ইকবালকে খালাস দেয় কিন্তু তার পরিবারের সদস্যদের সাজা বহাল রাখে। দুদক খালাসের বিরুদ্ধে একটি আবেদন করে কিন্তু ২০১৫ সালে তারা তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়। পরিবারের সদস্যরা ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন লাভ করে। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে, ঢাকার নগর উন্নয়ন সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গুলশান এলাকায় প্রিমিয়ার স্কয়ার নামে একটি আকাশচুম্বী ভবন অবৈধভাবে নির্মাণের জন্য ইকবালের স্ত্রী মমতাজ বেগমকে ভাঙার নোটিশ পাঠায়। বারবার নোটিশ দেওয়ার পরেও তিনি ভবনের অনুমোদনের প্রমাণপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগে মালিবাগে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র থেকে ইকবালের নাম বাদ দিতে আদালতকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধ্য করেছিলেন। ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মামলাটি পুনরায় চালু করা হয় কিন্তু ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আবার তা বাতিল করে দেওয়া হয়।

৫ আগস্ট ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ইকবাল ও তার পরিবার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। দুর্নীতি দমন কমিশন ইকবাল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। দুদক জানিয়েছে যে ইকবালের সম্পদ, বনানীর ৫ তারকা রেনেসাঁ হোটেল এবং ঢাকার রয়েল ইউনিভার্সিটি অবৈধ উৎস থেকে তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ইকবাল, তার দুই স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও প্রয়াত মমতাজ বেগম, দুই ছেলে মঈন ও ইমরান এবং মেয়ে নওরিনের হিসাব জব্দ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০০১ সালে বিএনপির খিলগাঁও থানা ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি এবং মিছিলের একজন সদস্যের আবেদনের ভিত্তিতে মালিবাগ হত্যা মামলাটি পুনরায় চালু করে, যার উপর ইকবাল তার পিস্তল ছুড়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে, বাংলাদেশের হাইকোর্ট ২০০১ সালের মালিবাগ হত্যা মামলায় ভোলার প্রাক্তন এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ইকবাল এবং আরও ১৩ জনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, ইকবাল এবং তার ছেলে মঈন প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি-র পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার ছোট ছেলে ইমরানকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়। কোম্পানিটির বনানী কার্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে তাদের মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলে ইকবাল সেন্টারের নিচতলা থেকে প্রবেশে বাঁধা আসে। অভ্যর্থনা কেন্দ্র দ্বায়িত্বপালনকারী এক নারী সদস্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের মিডিয়া কমিউনিকেশন প্রধান জাকারিয়া রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন। জাকারিয়া রহমান সকালের সময়ের প্রতিবেদককে জানান চেয়ারম্যানে সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। ব্যাংকটির সোসাল মিডিয়া উইং দেখবাল করা কর্মকর্তা আরিক মশরুর বলেন আমরা ঈদের পর মাত্র আজই অফিস করলাম। ফুরফুরে মেজাজে আছি, এই অবস্থায় গুনলাম আমাদের কোম্পানির নামে নিউজ হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এই প্রতিবেদককে বলেন আজ থেকে আপনাদের সাথে সম্পর্ক শুরু হবে। ধীরে ধীরে সম্পর্ক উন্নত হবে। ছোট বড় বিল লেনদেন হবে। তা না করে যদি গলায় পারা দিয়ে নিতে চান সেটা কেমন হয়। এর পরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এইচ এম ইকবালের ছোট ছেলের সাথে সাক্ষাৎ চেষ্টা করা হলেও তার সাথে সাক্ষাৎ করা যায়নি। টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের কোন লোক পত্রিকার সাথে কথা বলতে রাজি হননি। কোম্পানিটির কোন স্টাফ পত্রিকায় মন্তব্য কিংবা কোন তথ্য দিতেও নিরুৎসাহিত ছিলো। বনানীর ইকবাল সেন্টারে কোম্পানির কর্মকর্তা প্রিমিয়ার ব্যাংকের হেড অব মিডিয়া কমিউনিকেশন জাকারিয়া রহমানের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তার চাহিদা অনুযায়ী তাকে হটসঅ্যপে লিখিত বার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে, তাদের কোম্পানির কিছু তথ্য জানতে এইচএম ইকবালের ছোট মোহাম্মদ ইমরান ইকবালের সাথে দৈনিক সকালের সময় সৌজন্যে সাক্ষাৎ করতে চায়।

এমএসএম / এমএসএম

প্রধান প্রকৌশলীর পিএস মুজিবরের মাসিক অবৈধ আয় লাখ টাকা!

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সামাদ ভূঁইয়া দম্পতি বিরুদ্ধে

যাদের কথা হয়না বলা

অভাবির পেটের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা

ফ্যাসিস্ট সরকারে প্রতাপশালী জেলার মাহবুবের লাপাত্তা

অবৈধ সম্পদের পাহাড় নিয়ে ওসমান গণির রাম রাজত্ব কায়েম

মিরপুরের ত্রাস তানজিব গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৭ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা আমিনুল

বিতর্কিত প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে আবারো তদন্ত কমিটি গঠন

প্রিমিয়ার গ্রুপের ইকবাল গেছে পালিয়ে, দুর্নীতির দুর্গ আছে দাঁড়িয়ে

অর্থ শাখায় চাকরি করেই শত কোটি টাকার মালিক মাহবুবুর রহমান

ঈদ সামনে রেখে জাল নোট তৈরির কারিগর ব্যস্ত

বরগুনায় জলমহাল ইজারা নিয়ে মহা-জালিয়াতি