মাফিয়াদের ভয়াবহ নির্যাতনের পর নিঁখোজ মাদারীপুরের তিন যুবক

অল্প টাকায় লিবিয়া দিয়ে ইতালি নেয়ার প্রলোভন। এরপর লিবিয়ার বন্দি শিবিরে আটকে রেখে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বর নামে দুই দালালের বিরুদ্ধে।মাফিয়াদের ভয়াবহ নির্যাতনের পরও নিঁখোজ মাদারীপুর সদর উপজেলার হাউসদী গ্রামের তিন যুবক। এই ঘটনায় আদালতে মামলা হলেও ধরাছোয়ার বাইরে দালাল চক্র। উল্টো ভুক্তভোগীদের মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছে দালালরা। তবে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। এই ঘটনায় লিবিয়ায় অবস্থানরত এক দালালের হুমকির অডিও রেকর্ডে এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য হাউসদী এলাকার বাবুল ফকিরের ছেলে মারুফ হোসেন এবং তার ভাগনে মহিউদ্দিন মোড়ল লিবিয়ায় অবস্থানরত দালালের কাছে বন্দি। লিবিয়ার অবস্থারত এক দালাল বাবুল ফকিরকে হুমকি দিচ্ছে। তার হুমকির অডিও রেকর্ড হুবহু তুলে ধরা হলো:
বাবুল ফকির (লিবিয়ায় বন্দি মারুফের পিতা) : ভাই ভাই আমি গরীব মানুষ। টাকা জোগার করার সময় দেন। অপর প্রাপ্ত থেকে দালালের হুমকি, তোরে তো এক ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এরপর প্রকাশ অযোগ্য ভাষায় গালাগালি করেন দালাল। এরপর ভুক্তভোগী করুন কণ্ঠে বলেন, একটু দয়া করেন ভাই, একটু দয়া করেন। মটর সাইকেল বেইচ্যা আপনারে এক লাখ টাকা দিতেছি। এতোগুলো টাকা কোথা থেকে দিমু?
দালাল: এর আগে তিনদিন দিছি সময়। ওগো যে ছাড়াই আনছি ওগো তো কম টাকা লাগতেছে। তোরা কি এহন জানোস বর্তমানে মাফিয়া গো হাতে গেলে কত টাকা লাগে? ওগো তো কম টাকা লাগতেছে। এক এক জনের বিশ লাখ টাকা লাগে। এরপর ভুক্তভোগী মারুফের বাবা বলেন, দিমু তো। আপনারা আনছেন ছাড়াই দিমু আপনাগো টাকা।
এরপর কর্কশকণ্ঠে দালাল: তোগো একটা সুযোগ দিছি। আজকে এক লাখ দিবি, পরশু পাঁচলাখ করে দুইজনে দশ লাখ দিবি। পরের দিন ক্লিয়ার করে দিবি।
ভুক্তভোগীর বাবা: ঠিক আছে ভাই একটু আমারে সময় দেন। এরপর দালালের হুঙ্কার, টাকা দিতে যতক্ষন লেট হইবে ততক্ষন ওদের উপর লাঠি চলবে। পরে ভিডিও কইর্যা পাঠাই দেবোনে। এর ভুক্তভোগী মারুফের বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ভাই এমন কইরেন না, ভাই দয়া করেন। এরপর দালাল আদেশ দেয়, টাকা দিয়া ফোন দিবি, একেবারে সন্ধ্যার আজানের পর। এরপর ফোন কেটে দেয়। এভাবেই লিবিয়ায় বন্দিদের আটকে রেখে স্বজনের কাছে হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে,মাদারীপুরে সদর উপজেলার মধ্য হাউসদী গ্রামের মারুফ হোসেন,মহিউদ্দিন মোড়ল, সোলায়মান আকন। উভয়ের বয়স ২০। বাড়িতে থাকতে দালালচক্র ওদের প্রলোভন দেখায় ইতালির মোটা বেতনের। এরপর লিবিয়া নিয়ে আটকে রেখে চালায় নির্যাতন। নির্যাতনের সময় স্বজনদের মোবাইলে শোনানো হয় নির্যাতনের বর্ননা। টাকার জন্য লিবিয়ায় অবস্থারত দালালরা মোবাইল ফোনে দেয় হুমকি।এরপর আদায় করা হয় টাকা।এই ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে মানবপাচার করে থাকেন। প্রথম ধাপের দালালরা গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের অল্প টাকা ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখায়। এরপর তাদের ফাঁদের পা দিলেই তারা ভুক্তভোগীদের লিবিয়াতে অবস্থারত মায়িয়াদের হাতে তুলে দেয়।এরপর বন্দি শিবিরে আটকে রেখে নির্যাতণ করে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। এই নির্যাতনে অনেকেই প্রান হারায়। এই চক্রের সাথে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক কর্মকর্তরাও জড়িত।
স্বজনরা জানান,দালালে প্রলোভনে ছয় মাস আগে ইতালির উদ্যেশে বাড়ি ছাড়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য হাউসদী গ্রামের মারুফ হোসেন ও মহিউদ্দিন মোড়ল,সোলায়মান আকন। প্রথম কিছু দিন তাদের সাথে স্বজনদের যোগাযোগ থাকলেও এখন তাদের সাথে যোগাযোগ নেই। লিবিয়ায় নেয়ার পরে তাদের অমানুষিক নির্যাতণ করে। ভিটেমাটি বিক্রি করার পাশাপাশি চড়াসুদে টাকা এনে দালালদের হাতে তুলে দেয় স্বজনরা। দালালরা লাখ লাখ টাকা আদায়ের পর দীর্ঘদিন ধরেই নেই যোগাযোগ। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাও জানে না স্বজনরা। এই ঘটনায় স্থানীয় দালাল হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বরের নামে ভুক্তভোগী পরিবার একাধিক মামলা করেছে। এরপরও মিলেনি সন্ধান। গ্রেফতার হয়নি দালালচক্র। উল্টো আরও হুমকি দিচ্ছে।
নিখোঁজ সোলায়মান আকনের মা সালমা আক্তার বলেন, আমার ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করে দফায় দফায় মুক্তিপনের জন্য টাকা আদায় করে। কয়েক দফায় বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে মোট পয়ত্রিশ লক্ষ ৪০হাজার টাকা প্রদান করি। এরপরও আমার ছেলের সন্ধান পাইনি। উল্টো আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় দালাল হাওয়া বেগম এবং বাবুল মাতুব্বর।
নিখোঁজ মারুফ হোসেনের বাবা এবং অপর নিখোঁজ মহিউদ্দিন মোড়লে মামা বাবুল ফকির বলেন, স্থানীয় দালাল হাওয়া বেগম এবং বাবুল মাতুব্বর আমাদের সহজে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখায়। এরপর লিবিয়াতে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপন দাবী করে। আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৬২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার নিয়েছে ওই দালাল চক্র। এরপরও সন্ধান পাইনি আমার ছেলে ও ভাগনের।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বরের সাথে যোগাযোগ করতে তাদের বাড়িতে গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। বাবুল মাতুব্বর মাদারীপুর শহরের চরমুগরিয়া বন্দর শাখা সোনালী ব্যাংকে দীর্ঘদিন থেকে কর্মরত। তবে মামলা পরে অনুপস্থিত রয়েছেন সেখানেও।
স্হানীয় ফরহাদ হোসেন বলেন এই মাফিয়া হাওয়া দালানরা শতশত মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, আমরা দালালদের কঠিন বিচার চাই।
এব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ওসি আদিল হোসেন জানান, দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হুমকি দিয়ে থাকলেও সেটাও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান বলেন, মানব পাচারের বিষয় তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএসএম / এমএসএম

বাকেরগঞ্জ উপজেলা চত্বরে গড়ে উঠেছে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম

আদর্শ সমাজ গঠনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

যোগ্য শিক্ষক পেতে হলে নিয়োগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে: বিচারপতি সাইফুল ইসলাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

অপহরণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিশু উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেপ্তার

শেরপুরে সাপ ধরার সময় দংশনে ওঝার মৃত্যু

বিপিজেএফ নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি শান্ত বণিক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ

নেত্রকোণার খালিয়াজুরিতে স্পিডবোট-নৌকা সংঘর্ষে ৪ জন নিখোঁজ-আহত-৩

তানোরের ঠাকুরপুকুরে হেরোইন ব্যবসার পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলায় আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ফুটবল টুর্নামেন্ট

ভালুকায় যাত্রীবাহী দুই বাসের সংঘর্ষ, নিহত ২

কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু

বেনাপোলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন
Link Copied