জারুলের বেগুনী রঙে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ষড়ঋতুর বাংলাদেশ। ঋতুবৈচিত্র্যের পরিবর্তনে একেক ঋতু প্রকৃতিতে একেক রকমের বার্তা নিয়ে আসে। ঋতু পরিবর্তনের পালাবদলের খেলায় গ্রীষ্ম ঋতুতে খরতাপের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতেও গ্রীষ্মের জুড়ি নেই। সবুজ প্রকৃতির মাঝে ঝলমলে রোদে গাছের ডালে ডাল শোভা পাচ্ছে গাঢ় বেগুনি রঙের থোকায় থোকায় জারুল ফুল।
এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ, সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকৃপী ঘাসে অবিরল; সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল, হিজল; সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।' রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের মতো অনেকেই বাংলা কবিতা ও গানের উপমা হিসেবে এনেছেন জারুলের অপরূপ সৌন্দর্য। জারুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে অন্যতম আধুনিক কবি আহসান হাবিবের 'স্বদেশ' কবিতায় ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতিতে এসেছে আবার জারুলের সৌন্দর্য। কবির ভাষায় – 'মনের মধ্যে যখন খুশি; এই ছবিটি আঁকি; এক পাশে তার জারুল গাছে, দুটি হলুদ পাখি, এমনি পাওয়া এই ছবিটি- কড়িতে নয় কেনা।' গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের মাঝে সারা দেশের মতোই প্রকৃতি জুড়ে যেন থোকায় থোকায় গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলে সেজেছে বারহাট্টার প্রকৃতি। দেখলে মনে হয়, গ্রীষ্মের খরতাপে জারুলের উজ্জ্বল প্রস্ফুটনে প্রকৃতির চারিদিকে যেন উচ্ছলতার রঙিন বিকিরণ। গাছে গাছে জারুলের মোহনীয় রূপে সেজেছে বাংলার প্রান্তর। আবহমান বাংলার প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখতে জারুল ফুলের কোনো জুড়ি নেই। জারুল সাধারণত জমির আইলে, রাস্তার পাশে, ঝোপ-জঙ্গলে ও পরিত্যক্ত অবস্থায় এমনিতেই জন্মায়। পাপড়ির নমনীয় কোমলতায় দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে জারুল ফুল।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আঁকাবাঁকা পথের ধারে, জমির আইলে, পুকুর পাড়ে, ঝোপ-জঙ্গলে, বাড়ির আঙিনায় ও জলাশয়ের পাশে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে গাঢ় বেগুনি রঙের জারুল ফুলের মনভোলানো সৌন্দর্যে প্রকৃতিকে করেছে প্রাণবন্ত। গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে জারুলের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা। অসম্ভব সুন্দরের বর্ণছটায় জারুল ফুলে শোভা প্রকৃতিকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। এ ফুলের মনকাড়া সৌন্দর্যে চলতি পথে পথচারীরা থমকে দাঁড়াচ্ছেন। জারুল ফুলের এমন মনোমুগ্ধকর রূপে বিমোহিত হয়ে কেউ কেউ মোবাইল ফোনে তুলছেন স্থির চিত্র, কেউ কেউ নিচ্ছেন ভিডিও কেউবা আবার ব্যস্ত টিকটকে।
উপজেলা সদরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত সাহিত্যমনা কবি মনোয়ার সুলতানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গ্রামবাংলায় জারুল গাছ একটি অতি পরিচিত নাম। সড়কের দু’পাশে ঘন সবুজ শ্যামলিমা। সেই সবুজকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে থোকা থোকা গাঢ় বেগুনি রঙের ছোপ। কোথাও ঝাঁকড়া চুলের মতো বাতাসে দুলছে ফুলেল ডালপালা, কোথাও ঝোপঝাড়ের ফাঁকে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে থোকা থোকা ফুল। এমন অনিন্দ্যসুন্দর মনকাড়া দৃশ্য কতই না চমৎকার! জারুলকে বলা হয় বাংলার চেরি। চোখ ভরে যায় তার রূপ দেখে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে প্রকৃতি যখন উষ্ণ হয়ে ওঠে, তখন সেই উষ্ণতাকে ম্লান করে দিয়ে হেসে ওঠে জারুল ফুল।
তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলা ফুলগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যে অন্যতম ফুল জারুল। এ ফুলের সৌন্দর্য প্রতি গ্রীষ্মেই মানুষ প্রাণ খুলে উপভোগ করেন। জারুল ফুলের সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে জীবনানন্দ দাশ 'ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ দুপুর' কবিতায় লিখেছেন- 'ভিজে হয়ে আসে মেঘ দুপুরে চিল একা নদীটির পাশে;জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে।'
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, জারুল এর ইংরেজি নাম-Giant Crape-myrtle, Queen's Crape-myrtle, Banabá Plant, Pride of India। বৈজ্ঞানিক নাম- Lagerstroemia speciosa। জারুল লেজারস্ট্রমিয়া গণের উদ্ভিদ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রজাতি। এটি মধ্যমাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কাণ্ডবিশিষ্ট জারুল ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পত্র বৃহৎ ৬-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, আয়তাকৃতির মসৃণ ও পাতার রঙ সবুজ। এর পাতার পিঠের রঙ ঈষৎ ম্লান। এর পত্রবিন্যাস বিপ্রতীপ মঞ্জরী অনিয়ত, শাখায়িত, বহু পৌষ্পিক ও প্রান্তিক। জারুলের ফুলের বেগুনি বর্ণ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি শোভন-সুন্দর তার পাঁপড়ির নমনীয় কোমলতা। ছয়টি মুক্ত পাঁপড়িতে গঠিত এর ফুল। যদিও এর রং বেগুনি, তবুও অনেক সময় এর রং সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। গাছের বাকল মসৃণ ও রং ধূসর বা পিতাভ ধূসর। ফুল বেগুনি। জারুল গাছে এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে। জারুল গাছ যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় তখন চারদিক ঘ্রাণে মোহিত হয় না বটে, দৃষ্টিনন্দন নিলাভ, বেগুনি রাশি শোভায় সবারই চোখ আটকে যায়। আকৃতি ভিন্ন হলেও জারুল ফুলের রং সাধারণত কচুরিপানা ফুলের মতো বেগুনি আর সাদার মিশেল। সাধারণত এ গাছে ফুল আসলেই গাছটি সহজেই নজরে আসে। এর ফুল মন কেড়ে নেওয়ার মতো সুন্দর হয়। এ ফুলের ঝলমলে রঙের খেলায় যেকেউ সহজে আকৃষ্ট হয়।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, প্রকৃতি মানেই স্বস্তির জায়গা, আর তা যদি হয় ফুলে ফুলে সজ্জিত তাহলে তো কথাই নেই। ফুল প্রকৃতির অলংকার। গ্রীষ্মের এ খরতাপের মধ্যেই বাংলার প্রকৃতিতে বিভিন্ন জাতের অনেক ফুলের মধ্যে মানুষের নজর কাড়ছে বেগুনি রঙের থোকা থোকা জারুল ফুল। পাপড়ির নমনীয় কোমলতা, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে যেন আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে এ জারুল ফুল।
তিনি আরও বলেন, একটা সময় গ্রামগঞ্জে, পুকুরে কিংবা খালের পাড়ে অনেক জারুল গাছ দেখা যেত। এখন জারুল গাছের আর সেই প্রাচুর্য নেই। তার পরও প্রকৃতি থেকে তার সরব উপস্থিতি এখনও হারিয়ে যায়নি। অনেক হেলাফেলা নিয়েই কোথাও একা, কোথাও সঙ্গীসাথিসহ উৎসবের রঙে হাসছে জারুলের ফুল। অথচ বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন বারহাট্টা থেকে কমে যাচ্ছে প্রকৃতিকে রঙিন করা এই গাছ। একসময় এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে জারুলসহ অন্যান্য গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি প্রকৃতিপ্রেমীদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, জারুল হচ্ছে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ, সেই সাথে পরিবেশবান্ধব, প্রকৃতির শোভাবর্ধক ও ঔষধি গুণসম্মত। অন্যদিকে গ্রীষ্মের খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় জারুল গাছগুলো। ফুলের রঙে জারুল প্রকৃতিকেও যেন অনেক অপরূপ দেখায়। কিন্তু অপরিকল্পিত আধুনিকায়ন, অতি নগরায়ন এবং মানুষের অসেচতনতা ও বৃক্ষ নিধনে দিন দিন সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে যে কোন আবহাওয়ায় জন্মানো এই ঐতিহ্যবাহী মনোমুগ্ধকর গাছটি। প্রকৃতির স্বার্থেই আমাদের স্ব-উদ্যোগে এসব ফুল জাতীয় উদ্ভিদ বেশি বেশি লাগানো উচিত।
এমএসএম / এমএসএম

লাকসামে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে করোনা ভাইরাস সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রেসমিট

সন্দ্বীপ পৌরসভায় ব্র্যাকের ক্লিনিং ক্যাম্পেইন ২০২৫ অনুষ্ঠিত

সাতক্ষীরায় স্বর্নের বারসহ এক নারী আটক

হাতিয়ায় দেওয়ানি ও ফৌজদারী আদালত ভবন নির্মাণের দাবি

রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু

নবীনগরে নদীতে গোসলে নেমে কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু

টেলিগ্রামে প্রেমের ফাঁদ, মাদরাসা ছাত্রীকে নিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি, মূল হোতা গ্রেফতাে

সিংগাইরে ইয়াবা ও গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারী গ্রেফতার

শ্রীপুর পৌরসভার ১০৮ কোটি ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৮ টাকার বাজেট ঘোষণা

বালিয়াকান্দিতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত

ক্ষেতলালে সফল উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রদান

আনোয়ারার বারশত ইউনিয়ন ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত
