ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

রফিকুল আমিনের নতুন ফাঁদ: প্রতারণা ঢাকতে রাজনীতিকে ঢাল!


জাহিদুল আলম photo জাহিদুল আলম
প্রকাশিত: ১৫-৬-২০২৫ দুপুর ৩:৪৩

বিতর্ক যেন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের শুরু থেকেই নিত্যসঙ্গী। এবার এই বিতর্কিত কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রফিকুল আমিন আরও একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া শত শত কোটি টাকা ফেরত না দিয়ে, তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পথে হেঁটেছেন। ভুক্তভোগী এবং সচেতন মহলের ধারণা, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো পূর্বে সংঘটিত এবং বর্তমানে চলমান প্রতারণার দায় এড়িয়ে যাওয়া। তাদের অভিযোগ, এটি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাতের একটি অভিনব পন্থা।

কারাগার থেকে প্রতারণার নতুন জাল

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড যাত্রা শুরু করেছিল একটি বহুমাত্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তবে এর প্রধান ব্যক্তি রফিকুল আমিন শুরু থেকেই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। ২০১২ সালে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তিনি কারারুদ্ধ হন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি কারাগারের অভ্যন্তরে বসেই আইনকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ১৭০টিরও বেশি কোম্পানি তৈরি করেন। সহজ-সরল মানুষের কাছে ১০০ টাকায় বছরে ১৮০০ টাকা লাভের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। তার প্রতিশ্রুতি ছিল, জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই তিনি লাভসহ সকলের মূলধন ফেরত দেবেন।

টাকা নয়, এখন রাজনীতি!

অবশেষে যখন রফিকুল আমিন কারাগার থেকে মুক্তি পান, তখন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চিত অর্থ লভ্যাংশসহ ফেরত পাওয়ার আশায় তার দ্বারে ভিড় করেন। তবে আমিন কৌশলে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরতের দায় এড়াতে চাচ্ছেন। এমনকি, যারা তার কাছে অর্থ জমা রেখেছিলেন, তাদের সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে বাধ্য করা হচ্ছে। নিরুপায় সাধারণ মানুষ তাদের অর্থের মায়ায় পড়ে বাধ্য হয়ে এই রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন।

আত্মসাৎ ও অবৈধ কার্যকলাপের ধারাবাহিকতা

রফিকুল আমিনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো, তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্টের টাকা ফেরত না দিয়ে সেই অর্থ ব্যবহার করেই রাজনৈতিক দল গঠন করে বাংলাদেশে প্রতারণার এক নতুন কৌশল তৈরি করছেন। এর মাধ্যমে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের যাবতীয় সম্পত্তি আত্মসাৎ করার এক অভিনব পন্থা তৈরির চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং সেই সাজার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। এছাড়াও, দ্বৈত নাগরিকত্বকারী কোনো ব্যক্তিরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। অভিযোগ উঠেছে যে, রফিকুল আমিন এবং তার পরিবারের সদস্যদের কানাডার নাগরিকত্ব থাকা এবং তিনি নিজে সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছেন।
কারাগারে বসে ১৭০টিরও বেশি কোম্পানি তৈরি করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সারা দেশের মানুষের সাথে কথা বলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া তার অবৈধ কার্যকলাপের সুস্পষ্ট প্রমাণ বলে অনেকে মনে করছেন। ২০১২ সালের পূর্বে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড এবং DMCSL-এর যৌথ বিনিয়োগে সরাসরি ১৭টি কোম্পানি গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে রফিকুল আমিন এই ১৭টি কোম্পানির কোনোটিরও আনুষ্ঠানিক দায়িত্বে না থেকেও কলকাঠি নাড়ছেন। তার ইশারায় নিজস্ব লোকদের মাল্টিপারপাস কোম্পানিগুলোর সভাপতি পদে বসিয়ে সমস্ত সম্পত্তি আত্মসাৎ করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন তিনি। 'ডেসটিনি গ্রুপ' নামে বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও, ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তিনি এই নামটি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের সাথে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। অথচ ৪৫ লক্ষ মানুষ আজও তাদের কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

জনগণের প্রশ্নের মুখে রফিকুল আমিন

সাধারণ জনগণের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা, রফিকুল আমিনের রাজনৈতিক দল গঠনের এই প্রচেষ্টা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিতাড়িত নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারী এবং ডিস্ট্রিবিউটররা রফিকুল আমিনের কাছে বেশ কিছু জরুরি প্রশ্ন রেখেছেন:

৪৫ লক্ষ ডিস্ট্রিবিউটরের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে রফিকুল আমিন কিসের রাজনীতি করতে চান?

ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের তাদের বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি কোন ধরনের রাজনৈতিক দল গঠন করছেন?

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ডেসটিনির ডিস্ট্রিবিউটররা রফিকুল আমিনের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থেকেছেন, তাদের কোনো প্রকার মূল্যায়ন না করে তিনি কিসের রাজনীতি করছেন?

রফিকুল আমিন রাজনৈতিক দল গঠন করে ডেসটিনির ঐক্য নষ্ট করেছেন, কারণ ৪৫ লক্ষ ডিস্ট্রিবিউটরের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ রয়েছেন, এবং রফিকুল আমিন বিষয়টি জেনেশুনেও এই কাজ করেছেন।

প্রতারণার নতুন ফাঁদ: জেলখানায় বসে পরিচালিত স্কিমগুলো

প্রতারক রফিকুল আমিন কারাগারে বসে তার নিয়োগকৃত কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে যেসব প্রতারণামূলক কাজ করেছেন, তার কয়েকটি উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

প্রজেক্ট ১০০ প্লাস (২০১৪-২০১৫ সাল): এই প্রকল্পের আওতায় রফিকুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো অর্থের দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল।

ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড-এর কো-শেয়ার বিক্রি (২০১৩-২০২০ সাল): RJSC (যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়) থেকে কোনো প্রকার অনুমোদন না নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করে কয়েকশ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়।

ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেড-এর গাছ প্যাকেজ বিক্রি (২০১৬ সাল): আদালত ২৮০০ কোটি টাকা জমা দিলে রফিকুল আমিনের জামিন মঞ্জুর করবেন এমন ঘোষণার পর, তিনি কারাগারের ভেতরে বসেই তার কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে অগ্রিম গাছ প্যাকেজ (প্রতি প্যাকেজ ২৫ হাজার টাকা) বিক্রি করান। এর ফলস্বরূপ বাগানের সমস্ত গাছ বিক্রি হয়ে গেলেও রাষ্ট্রের কোষাগারে এক টাকাও জমা পড়েনি।

ডিটুকে অ্যাসোসিয়েটস লি: (২০১৭-২০১৯ সাল): কারাগারে অবস্থানকালে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে আরেকটি মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই কোম্পানিকে পণ্য সরবরাহের অজুহাতে সদস্যদের ব্যবহার করে ১৭০টি কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। পরবর্তীতে এই ১৭০টি কোম্পানির সমুদয় মূলধন রফিকুল আমিনের কাছে জমা রাখতে বলা হয় এবং বিনিময়ে তিনগুণ লাভসহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত কেউই এক টাকাও ফেরত পাননি, বরং যারা তাদের পাওনা টাকার কথা উত্থাপন করতে চেয়েছেন, তাদের মানি লন্ডারিং মামলায় জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ডোরা আরডিসি (২০১৭-২০২০ সাল): দেশব্যাপী ডিলার নিয়োগ দেওয়ার নামে এটি ছিল আরও একটি কৌশল, যার মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

বিজনেস সেন্টার (২০২০ সাল): প্রত্যেক নতুন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি বিজনেস সেন্টার প্রদান এবং প্রতি সেন্টার বাবদ ৩ হাজার টাকা আদায় করা হতো।

সুপিরিয়র মার্কেটিং (২০২০ সাল): এই কোম্পানির মাধ্যমে ১০০ টাকায় ১৮০০ টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রফিকুল আমিন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

স্বপ্নশহর হাউজিং প্রকল্প (২০২০ সাল): কিস্তিতে ডুপ্লেক্স ও ট্রিপ্লেক্স বাড়ি বিক্রির নামে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

চলমান অর্থ সংগ্রহ: এখনও বিভিন্ন অসাধু উপায়ে অর্থ সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই সকল অবৈধ কার্যকলাপের সাথে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কারাগারে বসে যাদের সাথে এই প্রতারণা করেছেন, তাদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত না দিয়ে রফিকুল আমিন কিসের রাজনৈতিক দল গঠন করতে চলেছেন? উল্লেখ্য, বর্তমানে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নিযুক্ত একটি পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

এমএসএম / এমএসএম

নতুন বাংলাদেশে কোন মোড়লীপনা কিংবা জমিদারী চলবে না : সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব

ঈদুল আযহা উপলক্ষে সহস্রাধিক ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার পরিবেশন করেছে আল ওয়াফা ফাউন্ডেশন

রফিকুল আমিনের নতুন ফাঁদ: প্রতারণা ঢাকতে রাজনীতিকে ঢাল!

ঈদুল আজহা উপলক্ষে উত্তরায় নিরাপত্তা জোরদার: ওসি হাফিজুর রহমান

ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কছাড় ও ভ্যাট অব্যাহতিকে ইতিবাচক মনে করছে বিএপিআই

জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই: আমিনুল হক

খাদ্য পরিবহন এসোসিয়েশনের অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জাতীয় ঐক্যে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল জিয়ার দর্শনঃ ড. মঈন খান

সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়ক, ভোগান্তি চরমে

আমদানিকারকদের জন্য যত সুবিধা- দেশিয় কসমেটিকস উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে

অতিরিক্ত বাসভাড়া আদায়ের অভিযোগে উত্তরায় সেনাবাহিনীর অভিযানে দুইজন গ্রেফতার

গাজীপুরের দুই মহাসড়কে বাড়ছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ

রফিকুল আমীন: মাইন্ড হ্যাকার নাকি ঠাণ্ডা মাথার প্রতারক?