ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ঘোড়াঘাটসহ উত্তরাঞ্চলে বিলুপ্ত প্রায় কাউন বা ফক্সটেল মিলেট চাষ


মাহফুজুর রহমান সরকার, ঘোড়াঘাট photo মাহফুজুর রহমান সরকার, ঘোড়াঘাট
প্রকাশিত: ২১-৬-২০২৫ দুপুর ১১:৫৫

দিনাজপুরের বিরামপুর,নবাবগঞ্জ,হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাটসহ উত্তরাঞ্চলে হারিয়ে যাচ্ছে কাউন বা ফক্সটেল মিলেট একটি শুষ্ক সহনশীল ও কম খরচের সুস্বাদু শস্য কাউন চাষ। সরকারি উদ্যোগ ও বাজার উৎসাহ না থাকায়  এ ফসল টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী হারিয়ে ফেলেছে চাষিরা।  

সুস্বাদু একটি ফসলের নাম কাউন। এক সময় মানুষজন কাউন চাল রান্না করে বিভিন্ন রকমের পিঠা ,খীর, পায়েস , খিচুরী , মলাসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি করতো। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ নামটি যেনো ইতিহাসের কোনো এক ফসলের নাম।বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি চাষ ও কৃষিতে অধিক ফলন কাউন চাষের প্রয়োজনীয়তা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছে।

সময়ের ক্রমাগত পরিবর্তন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে কাউনের চাষকে পেছনে ফেলে নিয়ে এসেছে বছরে তিন-চার ফসলি উৎপাদন। নতুন প্রজন্মের কাছে এর পরিচিতি ধরে রাখতে কাউন চাষের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো দরকার বলে অনেক কৃষক মনে করছেন।স্বল্প খরচ, সহজ চাষ পদ্ধতি ও পানি সাশ্রয়ী হওয়ার সত্যেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কাউন ফসলটি আজ দিনাজপুরের বিরামপুর,নবাবগঞ্জ,হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাটসহ উত্তরাঞ্চলে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এক সময় প্রচুর কাউন চাষ হতো। আবার এক সময় গরিবের প্রধান খাদ্যও ছিল এ কাউন। দিনের পর দিন মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এখন আর সেভাবে এসব অঞ্চলে কাউন চাষ হয় না। কালের আবর্তে কাউন চাষ হারিয়ে গেলেও নিজেদের খাওয়ার জন্য দিনাজপুরের বিরামপুর,নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাটের চর এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে  কাউন চাষ করা হয়েছে।

কাউন চাষ তেমন দেখা না গেলেও কাউনের চালের নানা ধরনের খাবার ধনীদের বিলাসী খাবারে পরিণত হয়েছে। তাই এটা চাষ করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে বললেন কয়েক জন কৃষক । তিনি এলাকার আত্রাই নদীর পাশের জমিতে চাষ করছেন এ কাউন।  উপজেলাগুলোর কয়েক জায়গায় হাতেগোনা কয়েকজন কাউনের চাষ করেন। কাউন চাষে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে এবং কাউন গাছ থেকে জমির ভালো সার তৈরি হয়। কাউনের চাল বর্ণে হলুদ।

এর চালের ভাত খেতে খুবই সুস্বাদু। ছোট দানাবিশিষ্ট কাউন চালের পায়েসের স্বাদ দারুণ। এ ছাড়া এ চাল দিয়ে নানা ধরনের খাবারও তৈরি করা যায়। মিষ্টান্ন পায়েস, ক্ষির ও ঝাল খাবার হিসেবে খিচুরি, পোলাও রান্নায় কাউন চাল এখন ধনীদের প্রিয় খাবার। এটি একটি পুরানো চাষ,চাষ করতে পানি ও সার কম লাগে। মানুষজন কাউনের ভাত,পায়েস ও মুড়ি খায়। এছাড়াও কাউন জন্ডিস রোগের উপকার করে। কিন্তু এখন দিন দিন কাউন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন খাওয়া জন্য বাজারে কাউন খুঁজলেও পাওয়া যাচ্ছে না।একসময় সময় কাউন অনেক বেশি চাষ করা হলেও সময়ের সাথে কাউন চাষ হারিয়ে যাচ্ছে। কাউন চাষ যেমন লাভজনক,তেমনি কাউন পুষ্টি গুণে ভরপুর। এবার আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটানোর জন্য কাউন চাষ করা হয়।   এছাড়াও এবার বাজারে কাউনের ভালো দাম ভালো।

এ প্রজন্ম  কাউন কেমন তা চোখের দেখেই নাই । রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বাচ্চারা তাকিয়ে থাকে, তারা জানে এটা কি ফসল। এলাকায় এবার চাষ করার ফলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে,এটা কাউন। এলাকা থেকে কাউনের চাষ প্রায় উঠেই যাচ্ছে । এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে তারা জানান,দেশী জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা উচিত।তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটির কথা। কাউন নামের এ ফসলটি যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায় এ জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। 

চরাঞ্চলে একসময়ের পরিচিত ও পুষ্টিকর খাদ্যশস্য কাউন আজ বিলুপ্তির পথে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষিজীবী মানুষের খাদ্যের অংশ হয়ে থাকা এ শস্য এখন আর চরাঞ্চলের মাঠে আগের মতো দেখা যায় না। উপজেলার প্রত্যন্ত চরের কৃষকরা কাউন চাষ ছেড়ে ঝুঁকছেন বেশি লাভজনক ও উচ্চ ফলনের ফসলের দিকে।
৩ দশক আগে জমিতে কাউন চাষ হতো। একসময় যেসব চরভূমিতে সোনালি কাউনের ঢেউ উঠত,সেখানে এখন চাষ হচ্ছে ধান,ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা বাণিজ্যিক ফসল।‘বর্তমান ধারায় পরিবর্তন না এলে এক দশকের মধ্যেই চরাঞ্চল থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে কাউন।এটি শুধু ফসলচক্রের পরিবর্তন নয়,বরং একটি গ্রামীণ খাদ্য ঐতিহ্যের অবক্ষয়।’

কাউন বা ফক্সটেল মিলেট একটি শুষ্ক সহনশীল ও কম খরচের শস্য। বন্যা বা দুর্ভিক্ষের সময় চরবাসীর ভরসা ছিল এ ফসল।ধানের তুলনায় কম পানি ও সার লাগে বলে দরিদ্র কৃষকরা সহজে এটি চাষ করতেন।ভাতের বিকল্প হিসেবে এটি খাওয়া হতো।তবে সময় বদলেছে।কৃষকরা এখন লাভের কথা ভাবেন। ‘কাউনে লাভ নেই। 
বাড়তি উৎপাদন খরচ,শ্রমিকসংকট ও ভোক্তার রুচির পরিবর্তনে কাউন আজ অতীত হতে চলেছে। অনেকেই মনে করেন, এ শস্য এখন আর যুগোপযোগী নয়।
‘আগে বন্যার কারণে ধান হতো না। তখন কাউনই ছিল ভাত।এখন হাইব্রিড ধান করি, ভুট্টাও হয় ভালো।কেউ আর কাউন খায় না। ‘এক সময় নিয়মিত কাউনের ভাত খেত। শরীরেও শক্তি পাওয়া যেত। এখন সেই স্বাদই ভুলে গেছে মানুষ।’

তবে কাউন পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। বর্তমানে এটি পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন পাখিপ্রেমীরাই কাউনের বড় ক্রেতা। এক সময়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় শস্য আজ পরিণত হয়েছে প্রান্তিক পণ্যে, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির দিক থেকেও।ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান জানান,ছোট দানাবিশিষ্ট কাউন প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে পানি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। আগের মতো এখন আর কাউন চাষ হয় না। কাউন একটা বিলুপ্ত প্রায় ফসল। এবার ঘোড়াঘাট উপজেলায় ০.২ হেক্টর জমিতে কাউন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জমিতে কাউনের সাথে সাথি ফসল হিসেবে ্অন্য ফসলের চাষ করা হয়েছে। দেশে এখন দানাদার শস্য বোরো ধান, ভুট্টা,গম সহ বিভিন্ন ফসল লাভজনক ভাবে চাষ হওয়ায়, কৃষকেরা অধিক লাভের আশায় কাউন এর পরিবর্তনে এসব ফসল চাষ করছে।

‘জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময়ে কাউনের মতো খরাসহনশীল ও কম খরচের ফসল অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ও বাজার উৎসাহ না থাকলে চাষিরা এ ফসল টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী।

এমএসএম / এমএসএম

খালিয়াজুরীতে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার আওয়ামীলীগ নেতা, দাবী পরিবারের

টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি কার্ড উদ্ভোদন

মহেশখালীতে ডাকাত সর্দার মঞ্জুর পুলিশের হাতে আটক

হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে: শেখ সাদী

শ্রীপুরে মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়তে সপ্তাহব্যাপী ফুটবল উৎসব

পুকুর ও খালে ভেঙ্গে পড়েছে সড়ক, ১ লাখ মানুষের দুর্ভোগ

লোহাগড়ায় সরকারি রাস্তা দখল, ঘরবন্দি শিরিনা খাতুন

সান্তাহারে ইয়াবা ট্যাবলেট ও প্রাইভেট কারসহ দুইজন গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গরুর গাড়ি মার্কা প্রার্থীর সমর্থনে সভা

কাউনিয়ায় এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে গাছের চারা বিতরণ

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা