ঢাকা রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী শীল-নোড়া


বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি photo বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৯-৬-২০২৫ বিকাল ৬:১০

খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুড়া করার জন্য একসময়ে বাসা-বাড়ির পাশাপাশি হোটেলগুলোতেও শীল-নোড়ার বিকল্প কিছু ছিল না। অথচ সময়ের বিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী শীল-নোড়ার  ব্যবহার। নগরজীনে শীল-নোড়া এখন বিলুপ্তির পথে।

একসময়ে বাংলার প্রতিটি পরিবারে শীল-নোড়ার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। মাছে ভাতে বাঙালী আর তিন বেলা খাবারেই ভাতের সঙ্গে খেতে হয় বিভিন্ন ধরনের তরকারি। আর এসব তরকারী রান্না করতে প্রয়োজন হয় মসলা। এই মসলা পিশানোর জন্য প্রয়োজন শীল-নোড়া। কেবল মসলাই নয়, তখন নানান ধরণের খাবারের ভর্তা বাটার কাজটিও সারা হতো শীল-নোড়ায়। বর্তমানে বাসা-বাড়িতে শীল-নোড়ার ব্যবহার খুব একটা চোখে না পড়লেও বিয়ের  অনুষ্ঠানে বাবুর্চির গ্রুপে আসা মহিলারা এসব অনুষ্ঠানের রান্নার মসলা শীল-নোড়াতেই বাটাবাটি করে থাকে। আর তাই এসব অনুষ্ঠানের খাবারের স্বাদই ভিন্ন। অথচ শীল-নোড়ায় বাটা মসলার স্বাদ আধুনিক সমাজের অনেকেই ভুলে গেছেন। শীল-নোড়ার বদলে এখন ব্ল্যান্ডার মেশিনেই চলে মসলা বাটার কাজ। আর পাশাপাশি প্যাকেট মসলাতো আছেই। একসময়ে আদা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা, পেয়াজ বাটার জন্য শীল-নোড়া ছাড়া আর কোন উপকরণ ছিলো না। শত ব্যস্ততায় ঘরের গৃহিণীরা চুলোয় রান্না শুরুর আগে শীল-নোড়ায় মসলা বাটাবাটির কাজটি সেরে নিতেন। প্রতিটি ঘরে শীল-নোড়ার ব্যবহার ছিল সচল। সময়ের বিবর্তনে এখন রান্নায় প্যাকেটের গুঁড়ো মসলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। বর্তমানে শীল-নোড়ায় মসলা বাটার কথা ওঠলে ভ্রু কুঁচকে ওঠেন গৃহিনীরা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রান্নার প্রকৃত স্বাদ আজ হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়।

বারহাট্টার গ্রাম-গঞ্জে ও শহরের নিম্নবিত্ত পরিবারে এখনো শীল-নোড়ার ব্যবহার রয়েছে। আর মধ্যবিত্ত ও অভিজাত পরিবারে বাজারের প্যাকেট মসলা আর আদা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা পিষানোর জন্য ইলেকট্রনিক্স ব্ল্যান্ডার মেশিন শীল-নোড়ার জায়গা দখল করে নিয়েছে। একসময় শীল-নোড়ায় মেহেদি পাতা বাটা হতো। এখন সেটিও টিউব মেহেদীর দখলে। এদিকে বারহাট্টা উপজেলার শতাধিক হার্ডওয়ার দোকানের মধ্যে ১০-১৫টি দোকানে শীল-নোড়ায় চোখে পড়ে। র্হ্ডাওয়্যার দোকানিরা জানান, শীল-নোড়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় এটি এখন আর সব দোকানে খুব বেশি একটা রাখা হয় না। অন্যদিকে একসময় বারহাট্টা উপজেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত দেখা মিলতো শীল-নোড়া ধারকাটানোর কারিগরদের। হাতুড়ি, ছেনি নিয়ে এসব কারিগররা বিভিন্ন বাড়ির সামনে গিয়ে হাকডাক তুলতো 'পাটা খোদাইবেন-ডেকছির কাছা লাগাইবেন..।' এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। আর যারা টিকে আছেন তারা মানবেতর জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনরকমে টিকে রয়েছে।

উপজেলা সদরের কাশবন গ্রামের ৭০ বছর বয়সী সুরবালা সরকারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, একসময়ে গ্রামীণ সমাজের প্রত্যেক ঘরে ঘরে শীল-নোড়া ছিল রান্নার মসলা বাটার জন্য একমাত্র সম্বল। কিন্তু এখন মেশিনেই হয় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, গরম-মসলাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মসলার গুড়া। তাই শীল-নোড়ার ব্যবহার এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

একই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ ঝর্ণা, মালতি, পারভীন, মনোয়ারাসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, মিল কারখানার কারণে ধীরে ধীরে কমতে থাকে শীল-নোড়ার ব্যবহার। এই অঞ্চলে শীল-নোড়ার এখন বিলুপ্তির পথে। সবাই এখন প্যাকেট মসলা কিনে ও ব্যালেন্ডার করে খায়। রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুঁড়া করার জন্য এক সময় শীল-নোড়ার বিকল্প বলতে কিছু ছিল না। এছাড়াও বিয়ে-সাদির অনুষ্ঠানে 'হলুদ বাটো মেন্দি বাটো….' এইসব গান গাইতো আর শীল-নোড়া দিয়ে মেহেদি বাটতো। এছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোজন বিলাসী গৃহিণীরা হরেক রকম স্বাদের মসলা বাটা করে দিতেন। কালের আর্বতনে ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, বাঙালির সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শীল-নোড়ার ব্যবহার।

কথা হয় উপজেলার নৈহাটি এলাকার শীল-নোড়া ধারকাটা কারিগর জীবন সরকার, বাউসী এলাকার জজ মিয়া, দশধার এলাকার মনু মিয়ার সাথে তারা জানান, আগে পাটা বা নোড়া খোদাই কাজের কদর ছিল এখন কমে গেছে। অনেকেই এ কাজ ছেড়ে যুগালী, ইট ভাঙার কাজ করছে। কেউ কেউ বাপ-দাদার এ পেশায় টিকে থাকলেও মানবেতর জীবন পার করছে।

বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি সকালের সময়কে বলেন, একসময় দৈনন্দিন জীবনে শীল-নোড়ার বিকল্প কিছুই ছিল না। আমাদের এলাকায় এর নাম শীল-পাটা। ৮০ দশকেও আমাদের মা-দাদীরা পাটায় হলুদ-মরিচ, মসল্লা বেটে রান্না করতেন সুস্বাদু নানা ধরনের খাবার। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সে খাবার খেতো পরিবারের সদস্যরা। যুগ যুগ ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শীল-নোড়ায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করে আসছে। শীল-নোড়ায় পিষা কাঁচামরিচ ও শুটকি মাছ আর কালজিরার ভর্তার অতুলনীয় স্বাদ আজও মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা স্মৃতি। অথচ বর্তমানে সময় ও কালের প্রবাহে বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শীল-নোড়ার ব্যবহার। এখন প্রত্যেক এলাকায় রাইস মিল রয়েছে। রাইস মিলে গুড়া করা হয় হলুদ, মরিচ, মসল্লা। গুড়া মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন হওয়ায় পাথরের শীল-নোড়া মসল্লা পিষার গুরুত্ব একেবারেই হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া গৃহিণীরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পেতে প্যাকেটজাত মসল্লার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শীল-নোড়ার বিকল্প হিসেবে এসেছে ব্লেন্ডার মেশিন। তুলনামূলক কম কষ্টসাধ্য হওয়ায় ব্লেন্ডারেই মসলা পেষার কাজ সারছেন গৃহিণীরা। ফলে বর্তমানে গ্রামাঞ্চল থেকেও বিলুপ্ত প্রায় এই ঐতিহ্য।

এমএসএম / এমএসএম

দর্শনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ফেনীতে এলজিইডির প্রকল্পে অনিয়ম, নেপথ্যে দীপ্ত বাবু

আদমদীঘিতে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের দুই কোচ লাইনচ্যুত

লাকসামে শিক্ষক সমিতির ভবনে গরু-ছাগলের বসবাস

কাউনিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিস্কুট জুস ব্যাগ সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

দাউদকান্দিতে নদী পুনরুদ্ধার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

মা‌নিকগঞ্জ প্রেসক্লা‌বের সভাপ‌তি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহানুর ইসলাম

দোহারে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক চালু

জয়পুরহাটে ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্রের সহায়তাকারী ও কম্পিউটার কর্মীদের প্রশিক্ষণ

পরিবেশ রক্ষায় ট্যুরিস্ট পুলিশের মতবিনিময় সভা ও বৃক্ষরোপণ

শান্তিগঞ্জের ইমা যাচ্ছেন হকি খেলতে চীনে

জলবায়ু সংকটে বাস্তুহারা বাড়ছে, সমাধান খুঁজতে রাজশাহীতে কর্মশালা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলা শুরু