দিনাজপুরের ৪ উপজেলায় সবজিতে বিষ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ ক্রেতারা

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ৪টি উপজেলার আবাদি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকরাও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
কীটনাশক বিক্রেতা ও কৃষক সূত্রে জানা গেছে, বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সর্বত্র সবজি বাগানে বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে সবচাইতে বেশি।
উপজেলার ভর্নাপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ তকাব্বর হোসেন জানান, ধান চাষের সময় প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ২০০ গ্রাম করে তরল কীটনাশক ব্যবহার করেন। এছাড়া সবজি চাষের ক্ষেত্রে প্রতি দু’তিন দিন অন্তর কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। এতে এক মৌসুমে সবজির ক্ষেতে বিঘাপ্রতি তরল কীটনাশকের দরকার পরে গড়ে ২ থেকে ৩ কেজি। তিনি আরও জানান, শুধু তিনিই নন, এলাকার সকল কৃষকই এ হারে কীটনাশক ব্যবহার করেন।
চাষি মাহাবুর হোসেন বাবু জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টি, কুয়াশা, খড়াসহ প্রাকৃতিক যে কোনো দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলে প্রথমেই সার, বীজ এবং কীটনাশক কোম্পানির লোকজন এগিয়ে আসেন। তারা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন। কৃষকরা তাদের পরামর্শ মতো অনেক সময় বেশি কীটনাশক ও সার ব্যবহার করে ফসল রক্ষা করেন, এতেও অনেক সময় বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। এই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকরা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও তাদের সচেতন করার কোনো উদ্যোগ নেই। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে মাঝে-মধ্যে কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির পাশাপাশি উপকারী অনেক পোকামাকড়। কীটনাশকের মধ্যে রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি ইত্যাদি বেশি বিপজ্জনক। কম বিপজ্জনকের মধ্যে আছে নগস, সুমিথিয়ন, ডাইমেক্রন, ম্যালালাথিয়ন, অ্যারোমাল ইত্যাদি। এসব কীটনাশক প্রয়োগের পর অপেক্ষমাণকাল কোনোটির ৩ দিন, কোনোটির ৭ দিন, কোনোটির ২১ দিন- এমনকি ৬ মাস পর্যন্ত হতে পারে। অথচ কৃষকরা সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কীটনাশক প্রয়োগের দু-এক দিন না যেতেই সেগুলো বিক্রি শুরু করে দেয়। এতে ভোক্তারা বাজারে পাচ্ছে বিষাক্ত শাকসবজি।
কাঁচাবাজারে সর্বাধিক চাহিদা থাকে অসময়ের শাকসবজির। যখন যার সময় নয়, তখনই ফলানো হচ্ছে সেই শাকসবজি। এগুলোর দামও আকাশছোঁয়া। তরুণদের অনেকেই জানেন না কোনটি কোন ঋতুর ফসল। বারো মাসের সবজি হয়ে দাঁড়িয়েছে টমেটো। কয়েক বছর আগেও শীতের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুতে পাওয়া যেত এসব সবজি। টমেটো মূলত শীতকালীন ফসল। কিন্তু এখন সারা বছরই টমেটোর চাষ হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক কায়দায় অন্য ঋতুর টমেটো ফুলে কেমিক্যাল স্প্রে (ফোর সিপিএ) করা হলে পুরুষ ও স্ত্রী রেণুর পরিণতি একই সঙ্গে ঘটে। ফলে বছরের যে কোনো সময় টমেটো উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু অসময়ের টমেটোর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা ও ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্ভর করতে হচ্ছে কেমিক্যাল বা মেডিসিনের ওপর। গাছ রোপণের পর থেকে কেটে নেয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার কীট ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আর এগুলো কেমিক্যাল স্প্রে ছাড়া পাকানো যায় না।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাগুলোতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ধান, ভূট্টা ও বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবজি চাষের জন্য দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, বিরামপুর নবাবগঞ্জ বেশ খ্যাতি রয়েছে। সারাদেশে যে পরিমাণ সবজির আবাদ হয় তার অন্তত ৪০ ভাগ উৎপাদন হয় এই উপজেলাগুলোয়। উপজেলাগুলোর উৎপাদিত নানান ধরনের সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। ঘোড়াঘাট উপজেলার কীটনাশক ডিলার জানান, প্রত্যেক ডিলার বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত কীটনাশক বিক্রি করে থাকেন।
এ ব্যাপারে কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলেন, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত খাদ্যের সঙ্গে বিষ খাচ্ছেন। কারণ এ অঞ্চলে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি উৎপন্ন হয় তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগ-ব্যাধিতে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসলি জমি তার উর্বর শক্তি হারাচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, পাতাভোজী, কান্ডভোজী ও শেকড়ভোজী কীটপতঙ্গের জন্য পৃথক বিষ প্রয়োগ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে কীট মারতে ব্যবহৃত যেসব বিষ রক্তে দ্রত বিস্তার লাভ করে সে ধরনের ওষুধগুলো ভয়ঙ্কর। এগুলো মানবদেহের জন্যও বেশি ক্ষতিকর। রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো এই বিষাক্ত শাকসবজি খেয়ে শুধু মানব সমাজই নয়, এর সঙ্গে পশুপাখি, মৎস্য সম্পদ এবং পরিবেশেও ঘটে বিপর্যয়। ফলমূল ও শাকসবজি পাকানোর জন্য রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর পরে এ সবের ভেতরের বিষক্রিয়া বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে এসব সবজির রঙের উজ্জ্বলতা বেশি হয়।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একাধিক সুপারভাইজার বলেন, কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তারা প্রায়ই কৃষকদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এর ফলে আবাদি জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে।
এখন জনপ্রিয় সবজি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারী ধাতু ও অতিরিক্ত কীটনাশকের কারণে। এর ফলাফল ভয়াবহ—মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড় ভাইরাসের মতো ক্ষতিকর। এখন সময়: সতর্ক হওয়া ও পরিবর্তন আনা। উপজেলা স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ধরনের সবজিতে বিষক্রিয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চালানো সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশেষ করে ধনিয়া, বেগুন, পটল, ঢেঁড়শ, পাকোয়া ও কুমড়া–সহ ৯ ধরনের সবজির ভিতরে বিষের উপস্থিতি রয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম

খালিয়াজুরীতে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার আওয়ামীলীগ নেতা, দাবী পরিবারের

টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি কার্ড উদ্ভোদন

মহেশখালীতে ডাকাত সর্দার মঞ্জুর পুলিশের হাতে আটক

হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে: শেখ সাদী

শ্রীপুরে মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়তে সপ্তাহব্যাপী ফুটবল উৎসব

পুকুর ও খালে ভেঙ্গে পড়েছে সড়ক, ১ লাখ মানুষের দুর্ভোগ

লোহাগড়ায় সরকারি রাস্তা দখল, ঘরবন্দি শিরিনা খাতুন

সান্তাহারে ইয়াবা ট্যাবলেট ও প্রাইভেট কারসহ দুইজন গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গরুর গাড়ি মার্কা প্রার্থীর সমর্থনে সভা

কাউনিয়ায় এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে গাছের চারা বিতরণ

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত
