চরাঞ্চলের মানুষের সংগ্রামী জীবন: রাষ্ট্রের বাইরে এক বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও নদীর বুক চিরে গড়ে ওঠা চরাঞ্চলে বাস করা লাখো মানুষ যেন রাষ্ট্রের মূলস্রোত থেকে চিরবিচ্ছিন্ন এক বাংলাদেশে বসবাস করছে। গাইবান্ধার ঘাঘট, তিস্তা, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীবেষ্টিত ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল রয়ে গেছে অবহেলার ধূসর সীমারেখায়। এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগসহ মৌলিক অধিকারগুলো এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
চরের উর্বর জমিতে ধান, পাট, ভুট্টা, মরিচ, তামাক, বাদাম ও মিষ্টি আলুর মতো ফসলের ভালো উৎপাদন হলেও বেশিরভাগ মানুষ ভূমিহীন বা বর্গাচাষী। প্রতি বছর নদীভাঙনের শিকার হয়ে হাজারো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। গত এক দশকে গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার এবং নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৮ হাজার হেক্টরের বেশি আবাদি জমি। ভূমিহীন হয়েছে আরও প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। এসব বিপর্যয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট সরকারি হিসাব কিংবা কার্যকর পুনর্বাসন পরিকল্পনা নেই।
শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র আরও করুণ। প্রায় ৭৬ হাজার শিশুর বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৬টি মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা। ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষক সংকট, দুর্বল অবকাঠামো ও যাতায়াত সমস্যার কারণে নিয়মিত পড়াশোনা করা শিশুদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেণিতে এসেই থেমে যায়। মাধ্যমিক বিদ্যালয় দূরে হওয়ায়, যাতায়াত খরচ বহন করতে না পারায় বহু শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ছে।
চিকিৎসাসেবার অবস্থাও শোচনীয়। চরাঞ্চলে কাগজে-কলমে দুটি চরভিত্তিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে নেই চিকিৎসক, নেই ওষুধ, নেই জরুরি সেবা। মোল্লার চর ও এরেনাবাড়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র দু’টি প্রায়ই তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে। একটি মাত্র কম্পাউন্ডার মাঝে মধ্যে উপস্থিত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এর ফলে গর্ভবতী নারী, নবজাতক, দুর্ঘটনা কিংবা হঠাৎ অসুস্থ রোগীরা মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা ও চিকিৎসার অভাবে প্রসবকালীন জটিলতা দিন দিন বাড়ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাও দুর্ভোগের অন্যতম বড় কারণ। বর্ষাকালে পুরোপুরি নৌনির্ভর হয়ে পড়ে চরবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থা। অথচ জেলার ৩০টি নৌরুটের মধ্যে ১২টি দীর্ঘ সময় পানিশূন্য হয়ে পড়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে। শুকনো মৌসুমে হাঁটু কাদা আর বালুর মধ্যে দিয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে হয়। ফলে স্কুলগামী শিশু, অসুস্থ রোগী ও জরুরি কাজে নিয়োজিত মানুষগুলো নানান ঝুঁকির মুখে পড়ে।
চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলারও তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নেই কোনো পুলিশ ক্যাম্প বা ফাঁড়ি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা এবং সন্ত্রাসীদের হাতে এখানকার নিরাপত্তা নির্ভর করে। বর্ষাকালে নৌডাকাতি, গরু-ছাগল চুরি, এমনকি ঘরের টিন খোলার ঘটনাও নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়েও বিচার পায় না।
চরাঞ্চলে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের হার উদ্বেগজনক। জানা গেছে, শতকরা ৯৮ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সে। অভাব, কুসংস্কার ও নিরক্ষরতার কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে। ফলে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপুষ্টি ও গড় আয়ু হ্রাস পাচ্ছে।
চরের মানুষের দুঃসহ জীবন, রাষ্ট্রের কাছ থেকে কার্যত বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী যেন এক ‘রাষ্ট্রের বাইরে আরেক বাংলাদেশ’-এর প্রতিচ্ছবি। অবিলম্বে চরাঞ্চলের উন্নয়নে টেকসই পরিকল্পনা, পুনর্বাসন কর্মসূচি, শিক্ষা-চিকিৎসা ও যোগাযোগে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
এমএসএম / এমএসএম
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুললেন শরীফ উদ্দিন
রাণীনগরে প্রায় ৮০ লক্ষ্য টাকা ব্যয়ে নির্মান হলো বৌদ্ধভূমিতে স্মৃতিসৌধ
নাজিরপুরে নামওয়াস্তে কাজ করে ৪০ লক্ষ টাকার শিংহভাগ আত্মসাতের অভিযোগ
মধুখালীতে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে জেলেদের বকনা বাছুর প্রদান
চট্টগ্রামে গিয়াস কাদের ও হুম্মাম কাদেরের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ
মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতার দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ
এবারের নির্বাচন হবে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন- মনিরুল হক চৌধুরী
শৃংখলার সাথে প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি গিয়ে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করুন : মাহমুদ হাসান খান বাবু
তানোরে তিন ফসলি জমি নষ্ট করে হিমাগার নির্মাণ
যশোরে খেজুরের রস ও গুড় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ১০০ কোটি টাকা
নোয়াখালীতে মাদক-সন্ত্রাস ও কিশোরগ্যাং রোধে ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্ট
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল