ঢাকা শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সিনেমা হলের শেষ গল্প: তাজ সিনেমা হল থেকে স্মৃতি হারাচ্ছে দর্শক


মজিবর রহমান, গাইবান্ধা photo মজিবর রহমান, গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ২০-৯-২০২৫ বিকাল ৫:১৯

এক সময়ে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের প্রাণকেন্দ্র ছিল সিনেমা হল। ঢালিউডের সুদিনে, নতুন সিনেমা মুক্তির খবর মানেই পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে হলের পথে রওনা। ছোট্ট শহরের বড় প্রেক্ষাগৃহগুলো যেন এক শিল্পের মন্দির। সেখানে শুধু সিনেমা দেখার জন্য নয়, মানুষের জীবনের আনন্দ, কষ্ট, প্রেম, হাসি-কান্না—সবই ছিল। আজ সেই দিনগুলো যেন শুধু স্মৃতির পাতায় লেখা।

গাইবান্ধার নুপুর সিনেমা হল আর চৌধুরী সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। শূন্য আসন, ফাঁকা হল, ফিকে আলো—সব কিছু আজ এক অচেনা দৃশ্যের মতো। এমনকি ঢালিউডের বড় বড় সিনেমাও দর্শক টানতে পারছে না। প্রায় প্রতিটি হল মালিকই বছরের পর বছর লোকসানের বোঝা সইয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মাটির কামড় দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিলেন প্রিয় সিনেমা হলগুলো। কিন্তু এখন সেই ধৈর্যও শেষ।

এবার দুঃসংবাদ ছড়াল তাজ সিনেমা হল থেকে। দীর্ঘদিন ধরে এই হলটি ছিল স্থানীয় মানুষের আনন্দের ঠিকানা। জন্মদিনের আনন্দ, বন্ধুর সঙ্গে দেখা, প্রেমের প্রথম সাক্ষাৎ—সব স্মৃতি এই হলের দেয়ালে মিশে আছে। কিন্তু এখন দর্শক যেন সোনার হরিণ। শূন্য আসনের দৃশ্য দেখেও প্রিয় হল কর্ণধার ইদ্রিস সাহেব ক্লান্ত। বহু বছর ধরে লোকসানের বোঝা টেনে নেওয়ার পর অবশেষে তিনি হলটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সিনেমা হল শুধুই বিনোদনের স্থান ছিল না; এটি সামাজিক মিলন, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। ঢালিউডের সুদিনে, নতুন সিনেমার মুক্তি মানেই চারপাশে আনন্দের ঝড়। পরিবার-বন্ধু, শিক্ষার্থী, শিল্পী, সাধারণ মানুষ—সবাই মিলিত হতেন এই প্রেক্ষাগৃহে। তখন সিনেমা হল মানেই জীবনের অংশ। কোথাও সিনেমার গান গুনগুন করা, কোথাও গল্প নিয়ে হইচই—সবই ছিল জীবনের ছোঁয়া।

কিন্তু আজ সেই সুদিনের গল্প কেবল স্মৃতিতে। বাংলাদেশের সিনেমা হলের সংখ্যা ক্রমেই শতকের নিচে নামছে। শহরগুলোতে প্রেক্ষাগৃহের অভাব শুধু বিনোদনের ক্ষতি করছে না, সামাজিক জীবনেরও ঘাটতি তৈরি করছে। ছোট শহরের মানুষ আজ আর নতুন সিনেমার জন্য বিশাল হলের দরজা খুলতে যায় না। অনেক সময় পরিবার-বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসেই সিনেমা দেখার চেষ্টা করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধুই ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয় নয়। এটি সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষতি। চলচ্চিত্র শুধু ছবি নয়, এটি ইতিহাস, মানুষ ও সময়ের সাক্ষী। প্রিয় সিনেমা হল বন্ধ হলে, শুধু বিনোদনের আনন্দ নয়, সেই সময়ের আবেগ, স্মৃতি এবং শিল্পী-দর্শক সম্পর্কও হারিয়ে যায়।

তাজ সিনেমা হলের বন্ধের খবর কেবল গাইবান্ধার নয়, সমগ্র দেশের প্রেক্ষাগৃহ শিল্পের জন্য উদ্বেগজনক। মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের বোঝা সহ্য করে আসছিলেন। কিন্তু এখন আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আরেকটি প্রিয় হল চলে যাচ্ছে, আরেকটি ইতিহাস হারাচ্ছে।

সিনেমা প্রেমীদের আবেগও এখানে অমলিন। ছোট বেলায় প্রথম সিনেমা দেখার উত্তেজনা, বন্ধুর সঙ্গে হেসে কেঁদে থাকা মুহূর্তগুলো—সবই এখন ফিকে হয়ে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, "কবে আর আমরা সেই প্রিয় হলের সিটে বসে সিনেমার আনন্দ উপভোগ করতে পারব?"

ঢালিউডের নতুন প্রজন্মের জন্যও এটি একটি শিক্ষা। সুদিনের ছবি শুধু সিনেমায় নয়, মানুষের মনেও আঁকা থাকে। প্রতিটি হলের দেয়ালে হাজারো গল্প লুকিয়ে থাকে। পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, প্রেমের স্মৃতি, ছোট শহরের সাংস্কৃতিক মিলন—সবই এই হলগুলোতে শুরু হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের উপজেলা ও ছোট শহরে প্রেক্ষাগৃহের অভাব যেন ঢালিউডের ইতিহাসকে হুমকির মুখে ফেলেছে। শুধু ব্যবসায়িক দিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেরও বড় ক্ষতি হচ্ছে। যদি এই প্রেক্ষাগৃহ সংকট অব্যাহত থাকে, তাহলে শতকের পুরোনো সিনেমা হলগুলো ইতিহাসের পাতায় সীমিত হয়ে যাবে, আর নতুন প্রজন্ম শুধুই গল্পের মাধ্যমে সেই সুদিনের স্মৃতি জানতে পারবে।

তাজ সিনেমা হলের বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সংকেত। এটি শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, বাংলাদেশের সিনেমা প্রেমীদের জন্য এক আবেগময় ক্ষতি। সুদিনের স্মৃতি, সিনেমার সঙ্গে মানুষের সংযোগ, পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে আনন্দ—সবই এই প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে জড়িত। সেই সব স্মৃতি এখন কেবল চলচ্চিত্রের মতো স্মৃতির পাতায় লেখা।

ঢালিউডের সুদিন ফিরলেও, সিনেমা হলের সংকট অব্যাহত থাকলে নতুন প্রজন্ম কবে সেই আনন্দ অনুভব করবে তা অনিশ্চিত। তাই প্রয়োজন স্থানীয়, ছোট শহরের প্রেক্ষাগৃহ এবং সিনেমাপ্রেমীদের জন্য সংস্কৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ। না হলে, দেশের সিনেমার ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে, আর প্রিয় হলগুলো কেবল ইতিহাসের গল্প হয়ে থাকবে।

এমএসএম / এমএসএম

চৌগাছায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক ব্যক্তির আত্মহত্যা

নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সাইবারস্পেস নিশ্চিত করতে কর্মশালা

বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির নির্বাচনে সভাপতি সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক মিলন

নাঙ্গলকোটে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

মেহেরপুরে অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ

পাবিপ্রবিতে ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস’ শীর্ষক কর্মশালা

বেনাপোল চেকপোষ্টে কুলি শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

নেত্রকোনায় জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসকের উদ্যোগে ধলাই নদী পরিষ্কার পরিছন্নতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত

সিনেমা হলের শেষ গল্প: তাজ সিনেমা হল থেকে স্মৃতি হারাচ্ছে দর্শক

হাটহাজারীতে শারদীয় দূর্গা পূজার ১১৮টি মন্ডপে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি

মাদারীপুরে মানব কল্যাণ সংগঠনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

শালিখায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতিমূলক সভা

লাকসামে বাংলাদেশ ছাত্র হিযবুল্লাহ উদ্যোগে ইসলামী সাংস্কৃতিক ও কুইজ পুরুষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত