উল্লাপাড়া'র ইউএনও'কে নিয়ে সমালোচনার ঝড়

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত'কে নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সচেতন মানুষ একই কথা বলছেন, দূর্নীতির দায়ে বদলী হওয়া ইউএনও'কে কেন উল্লাপাড়ায় দেয়া হলো ? আর যোগদানের ১ বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে না বদলিয়ে আগের পথেই হাঁটছেন। তারা বলছেন সরকার উল্লাপাড়ায় একজন দূর্নীতিবাজ ইউএনও'কে দিয়ে উল্লাপাড়ার মানুষের সাথে অন্যায় করেছেন। এ নিয়ে সিরাজগঞ্জের স্থানীয় ও দৈনিক সকালের সময়-সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিক-সহ সুশীল সমাজের অনেকেই জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়া।
২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আবু হাসনাত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া'র ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন৷ পবায় থাকাকালীন গত অর্থবছরে পবার কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ছাড়াই ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ নওগাঁর আত্রাই থেকে নিজের চাচাতো ভাই রাজীব রনককে এনে করাচ্ছিলেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘর নির্মাণে ইটভাটা থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। সে বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তাকে রাজশাহীর পবা উপজেলা থেকে বদলি করা হয়।
ইউএনও আবু হাসনাত'র বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির তুলে গত ৮ সেপ্টেম্বর উল্লাপাড়া'র ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগে এডিপি, এলটিএম, পিআইসি প্রকল্পের নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগে বলা হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় গৃহীত ১১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করে বাস্তবায়ন করা হয়। এর অনেকগুলোই উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা ও বিধিমালার পরিপন্থি বলে জানা গেছে। পিআইসি কর্তৃক বাস্তবায়িত বেশ কিছু প্রকল্প নামমাত্র দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে "উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঁচু নিচু বেঞ্চ সরবরাহ" একই নামে ছয় লাখ টাকার তিনটি প্রকল্প পিআইসি'র বাস্তবায়নে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ছয় লাখ টাকার একটি প্রকল্প ভেঙে তিন ভাগ করা হয়েছে। যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর লঙ্ঘন বলে জানা গেছে। তাছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চল্লিশ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ এনেও খরচ করেছেন নিজের ইচ্ছামত প্রকল্প তৈরি করে। অভিযোগ পত্রটিতে দেখা যায়, এই অর্থ বছরের মোট প্রকল্প ১১৮টি। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ ৫৩১ টাকা।
এর মধ্যে টেন্ডার পদ্ধতিতে (এলটিএম) ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৩১ টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) পদ্ধতিতে ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও এডিপির বিশেষ বরাদ্দের আরো ৪০ লক্ষ টাকার ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি অফিস মেরামত বাবদ ব্যয় করেছেন ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এএসপি সার্কেল অফিস ভবন মেরামত বাবদ ব্যয় করেছেন তিন লাখ টাকা। গেজেটেড ডরমেটরি ভবন মেরামত ববাদ ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, নন-গেজেটেড ডরমেটরি ভবন মেরামত ববাদ ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়াও এই বরাদ্দ থেকে পিআইসি'র মাধ্যমে প্রতি ২ লাখ টাকা করে খরচ করা তালিকায় রয়েছে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় মেরামত, আনসার ভিডিপি অফিস ও আইসিটি অফিস মেরামত, পাম্প হাউজ মেরামত , উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের অভ্যন্তরে পেভড টাইলস দ্বারা রাস্তা নির্মাণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ীর গ্যারেজ মেরামত সহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেন। অথচ উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল নির্দেশিকা ২০১৪ এর সংযোজনী-১ এর ক্রমিক নং ৭ স্পষ্ট বলা রয়েছে উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দ্বারা ব্যাংক বা অন্য কোন সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন ইমারত নির্মাণ/ মেরামত বা সম্প্রসারণ করা যাবে না।
দেখা যায়, এডিপির রাজস্ব উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ চত্বর কেন্দ্রিক নেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ টাকার প্রকল্প। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা পরিষদের সুনির্দিষ্ট গ্যারেজ না থাকা স্বত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তার নামে গ্যারেজ দেখিয়ে দশ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছেন ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। তাছাড়া উপজেলা প্রকৌশলীর গ্যারেজের ইটের গাঁথুনি ও মেঝের সিসি ঢালাই বাবদ দুই লাখ, একই গ্যারেজের প্লাস্টার, রং করণ ও টিনের চালা নির্মাণ বাবদ আরও দুই লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্প এলটিএম এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন না করে কেন তা ভেঙে পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার অনুমোদন দিলেন এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পিআইসি কর্তৃক বাস্তবায়িত এসব প্রকল্পের অধিকাংশই নামকাওয়াস্তে ও অর্থ আত্মস্মাতের জন্য করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসকদের নীতিমালা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ বাবদ ২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে একটি
উপজেলায় কতজন প্রশাসক থাকেন যে প্রশিক্ষণের বিল এত টাকা হয়।
৪ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে ইউএনও'র
উপহার হিসেবে যে সংগঠনগুলো ফুটবল পেয়েছে সেই সংগঠনগুলোর ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা জানান তারা হাতে গোনা
কয়েকটি ফুটবল পেয়েছেন। খেলোয়াড় কল্যান সমিতির সভাপতি ড. সামিউল ইসলাম রনি বলেন, আমি যে সংগঠনের দায়িত্বে আছি সেই সংগঠনকে চারটি ফুটবল দেয়া হয়েছে। রেজাউল নামে স্থানীয় ফুটবল কোচ বলেন, ছেলেদের
ফুটবল ক্লাবের মধ্যে দু'টিকে ডিআর ব্র্যান্ডের ৩টি করে ফুটবল দেয়া হয়েছে। আর বাদ বাকিগুলোকে কিভাবে দেয়া
হয়েছে জানি না।
এরআগে ওমর ফারুক নামে ঐ ব্যক্তি
গত ২২শে জুলাই তথ্য অধিকার আইনে আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বরাবরে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য না দিয়ে হয়রানি এবং তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বলে সংক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসক সিরাজগঞ্জ বরাবর তিনি আপিল করেন। আপিলে তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত
প্রকল্পগুলোর সভাপতি, সেক্রেটারি এবং শ্রমিকদের নামের তালিকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব ১% তহবিলের প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ এবং নামের তালিকা চেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতের সরকারী নাম্বারে ফোন দিয়ে না পেলেও, তিনি অন্য একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, আমার বিষয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ হয়েছে, এবিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নাই, কি অভিযোগ গেছে সেটা জেলা প্রশাসককেই জিজ্ঞেস করুন।
বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আপনি আগে বিষয়টি ভালভাবে জানুন, একজন অভিযোগ দিলো আর আপনি আমাকে ফোন করলেন। এটা ঠিক হয়নি। নিউজ করার আগে বিষয়টি ভালভাবে জানুন তারপর আমাকে প্রশ্ন করুন।
এমএসএম / এমএসএম

সীতাকুণ্ডে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

দুমকিতে গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

কাহালুতে জনতার হাতে ৫ ডাকাত আটক

গজারিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আটক ৩

পাঁচবিবি রেলওয়ে প্লাটফর্ম বর্ধিত করণ শুধুই আশ্বাস আন্তঃনগর ট্রেনে উঠা নামায় যাত্রীদের দূর্ভোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে মশক নিধন ও পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

মুকসুদপুরে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পোনা জাতীয় মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে

জরার্জীণ মহেশখালী আদালত ভবন,ভাড়া কক্ষে চলছে বিচারকার্য

নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত

রৌমারীতে শিক্ষার্থীর অশালীন ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন ও উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক

মোরেলগঞ্জে ৩ সাংবাদিককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় মামলা দায়ের
