তারেক রহমানের প্রতিশ্রুতি ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা
এক-এগারোর ঝড় পটপরিবর্তনের সময় যে মানুষটিকে রাজনৈতিকভাবে মাইনাস করতে তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের সব শক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল, যাকে নির্যাতন, কারাবাস ও নির্বাসনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির প্রান্তে ঠেলে দিতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি আজ দেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় বিএনপির একক নেতৃত্বের শীর্ষে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের আবির্ভাব শুধু একজন নেতার উত্থান নয়-এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শিক উত্তরাধিকার ও বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামী নেতৃত্বের এক জীবন্ত ধারাবাহিকতা। পারিবারিক ঐতিহ্যের মহিমা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক চিন্তা এবং নবপ্রজন্মের নেতৃত্বের মেলবন্ধনে তিনি হয়ে উঠেছেন বিএনপির পুনর্জাগরণের প্রতীক-এক জীবন্ত অধ্যায়; যিনি প্রমাণ করেন, তারেক রহমান কেবল ইতিহাসের অংশ নন, তিনি আজও জীবন্ত এক প্রেরণা।১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তারেক রহমান। ১৯৯১ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে দলের কার্যক্রমে সক্রিয় হন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দলের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া, দলকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করার প্রচেষ্টা-এসবই তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয় দেয়।বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ সময়ের সবচেয়ে যোগ্য, মেধাবী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক তারেক রহমান। এদেশের কোটি তরুণ ও যুবসমাজের কাছে তিনি ভালোবাসার পাত্র। দেশের ১৮ কোটি মানুষের চিন্তায় তিনি আগামীর রাষ্ট্রনায়ক। স্বাধীনতার ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর পরে বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতিতে তারেক রহমানের নামটিই এখন উচ্চারিত হচ্ছে সগৌরবে।
শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের
অনুপ্রাণিত ভবিষ্যৎ নেতাদের সাথে বাংলাদেশের তারেক রহমানের নামও আলোচিত হচ্ছে। তাঁর তৃণমূলের রাজনীতি নিয়ে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা হচ্ছে।ক্যামব্রিজের রিজেন্ট স্ট্রিটে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি আর্মস-এর চার্চিল অডিটোরিয়ামে তারেক রহমানের রাজনৈতিক চিন্তা ও ভাবনা নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় বছর কয়েক আগে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা হয় তারেক রহমানের রাজনীতি নিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ সময়ে বহুল আলোচিত ও সসমাদৃত তারেক রহমানকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন তারা। এতে বলা হয়েছে, তারেক রহমান বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করেন। তিনি পরনির্ভরশীলতার জাল ছিন্ন করে দেশের মানুষকে উন্নত জাতির মর্যাদায় উন্নীত করতে চান। একটি উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন তারেক। তার স্বপ্ন মানুষের উন্নয়ন ও দেশের সমৃদ্ধি নিয়ে। তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছেন। এটা খুব সুন্দর উদ্যোগ। তারেক রহমান ডিজিটাল বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক-প্রকৌশলী। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে তার নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারেন। একটি দেশের উন্নয়নের জন্যে রাজনীতিবিদদের এই গুণ থাকা খুব বেশি প্রয়োজন। ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারেক রহমানের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা আজ অনেকের কাছে রীতিমতো ঈর্ষণীয়। তিনি মাটি ও মানুষের নেতা-স্বপ্ন দেখেন একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশের। তারেক রহমান তার মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মবীরত্ব, ত্যাগ, ভিশনারি বক্তব্য, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগাতে পেরেছেন। যা এর আগে একমাত্র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই পেরেছিলেন।
তারেক রহমান প্রচলিত রাজনীতি বদলাতে চেয়েছেন। রাজধানীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ড্রয়িংরুমের রাজনীতিকে নিয়ে যেতে চান তৃণমূলে। তিনি ১৮ কোটি মানুষকে উন্নয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে চান। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। তাই তিনি রাজধানী ছেড়ে ছুটে গেছেন তৃণমূলে। দীর্ঘদিন তিনি দেশের বাইরে, তারপরও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ কমেনি। মাটি ও মানুষকে জাগিয়ে বাংলাদেশকে আপন সম্পদে স্বয়ম্ভর করা, আধুনিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করানো, প্রান্তিক মানুষকে সামনে রেখে রাজনীতিকে বিকাশিত করা, গণতন্ত্রের আত্মাকে সজীব-সচল করা-সবই তার ঘোষিত স্বপ্ন যা শহীদ জিয়ার স্বপ্নেরই এক সময়োচিত সম্প্রসারণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং এর সুঠাম-স্বনির্ভর অভিযাত্রার সঙ্গে জিয়া পরিবারের যে আত্মিক বন্ধন, তার ধারাবাহিকতায় তারেক রহমান আজ অজেয় উত্তরাধিকারে স্থিত হয়েছেন। কৃষির উন্নয়ন এবং একে ভিত্তি করে শিল্পের বিকাশ সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, কৃষকের জন্য ভালো বীজ দেওয়া, গরিবের সঙ্গে হাঁস-মুরগির প্রতিপালনসহ অসংখ্য কাজে তিনি হাত বাড়িয়েছেন আগ্রহ ভরে। গ্রামে গ্রামে জরিপ চালিয়েছেন কত মাছ, ফল, ধান হয় প্রতি গ্রামে। সাগরে ও নদীতে জেগে ওঠা পলিকে সোনা বানানোর রূপকল্পও তাঁর ভাবনার বাইরে নয়। তলাবিহীন একটি ঝুঁড়িকে, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পীড়িত একটি দেশকে প্রেসিডেন্ট জিয়া যেভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন, ভিক্ষুকের হাতকে যেভাবে কর্মীর হাতে পরিণত করার জন্য প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের খপ্পর থেকে রাজনীতিকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন মুক্ত মাঠে; নিজে শক্ত হাতে কোদাল চালিয়ে অনাবাদি মাঠে এনেছিলেন ফসলের সমারোহ, ভরিয়ে দিয়েছিলেন ফসলের সুষমায়, তারেক রহমানও আজ একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তারেক রহমানের কর্মপ্রবাহের মধ্যে কৃষি ও শিক্ষা পাচ্ছে সর্বাধিক মনোযোগ। আবার শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় সর্বস্তরের মানুষকে সংহতি, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একত্রিত করার ভেতর দিয়ে তিনি জাতীয় শক্তি মজবুত করেছেন। ফলে এ কথা বলাই যায়, যোগ্যতার বলেই দীপ্তিমান হয়ে উঠছেন জননেতা তারেক রহমান। বাংলাদেশের মানুষ এই তরুণ নেতার মধ্যে একদিকে যেমন উন্নয়ন ও অগ্রগতির রাজনীতির চলমান ধারাকে অব্যাহত রাখার প্রত্যয় দেখতে পাচ্ছেন, অন্যদিকে খুঁজে পাচ্ছেন শহীদ জিয়ার প্রতিচ্ছবি। তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন রাজনীতি যদি কল্যাণমুখী হয়, জনগণ পাশে থাকে। আর জনগণ পাশে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রে কাজ হয় না। হ্যাঁ এটিই সত্যি, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দীর্ঘ ১৭ বছরের কলঙ্কময় স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে যিনি সুদূর লন্ডন থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে সফল হয়েছেন। জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হঠানোই নয় আগামীতে কীভাবে দেশ গঠন করবেন ভিশনারি নেতা হিসেবে সেটিও তিনি চিন্তা করে রেখেছেন। তারেক রহমানকে আমরা শুরু থেকেই দেখেছি, তিনি একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষ শান্তিতে থাকবেন, কোনো নাগরিক তার অধিকার বঞ্চিত হবেন না। তিনি দেখেছেন স্বৈরশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা জনগণের প্রত্যাশাকে বারবার ব্যাহত করেছে। বিশেষত, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার অভাব এবং স্বচ্ছতার সংকট গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে। দেশান্তরী হওয়ার পরও তিনি কীভাবে একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়া যায়, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায় তা নিয়ে নিমগ্ন ছিলেন। বিএনপির ৩১ দফা মূলত তাঁর সেই চিন্তারই ফসল।তারেক রহমানের এই চিন্তায় কেবল সমস্যাগুলোর সমাধানই নয়, বরং একটি টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনার প্রস্তাব রয়েছে।
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই তিনি ঘোষণা করেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে, সব মত ও পথের মানুষের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন, যেখানে সামাজিক বৈষম্য দূর করা হবে এবং জ্ঞানবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যৎমুখী মানবিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। এটা সত্যি যে, গণতন্ত্রের সংকট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নানান সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালীকরণের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।তারেক রহমান প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপক্ষে, বরং জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৭ বছর আগের তারেক রহমান এবং বর্তমানের তারেক রহমানের মধ্যে বিস্তর তফাৎ লক্ষণীয়। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার এবং দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যে তার মধ্যে ধীরতা ও রাজনৈতিক পরিপক্কতার ছাপ দেখছেন অনেকে। এসব বক্তব্য প্রশংসিত হচ্ছে সমালোচকদের কাছ থেকেও। এছাড়া জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তারেক রহমান শুরু থেকেই অত্যন্ত বিনয়ী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি এই বিজয়ের কৃতিত্ব কোনো রাজনৈতিক দলকে না দিয়ে বারবার শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ জনতাকে দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে বারবারই বলেছেন,'এই বিজয় কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়, এই বিজয় বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার'। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক, যুক্তরাজ্য
Aminur / Aminur
পরিশুদ্ধ রাজনীতির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি
তারেক রহমানের প্রতিশ্রুতি ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা
জ্বালানি ব্যবস্থায় আমদানিনির্ভরতা কমাতে করণীয়
ইউরোপ আমেরিকার সম্পর্কের টানাপোড়েন
জুলাই সনদ, গণভোট ও নির্বাচন
বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগার জরুরি
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচেতনতার বিকল্প নেই
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক তারেক রহমান
তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা
গণতন্ত্র, সুশাসন এবং জনগণ
বৈষম্য ও দারিদ্র্য কমাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়
গ্রামীণ ঐতিহ্য ও শীত কালীন রসদ সুমিষ্ঠ খেজুর রস