ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

দলবদলের রাজনীতিতে আদর্শ প্রশ্নবিদ্ধ


এসএম পিন্টু photo এসএম পিন্টু
প্রকাশিত: ৮-১২-২০২৫ বিকাল ৫:৬

রাজনীতি হলো আদর্শ, ত্যাগ, নীতি, মূল্যবোধ, সংগ্রাম ও জনসেবার সমন্বয়। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য, সমাজ পরিবর্তন, রাষ্ট্র পরিচালনা, জনকল্যাণ নিশ্চিত করা।
কিন্তু সময়ের স্রোতে রাজনীতি তার আগের নৈতিকতাকে হারাতে শুরু করেছে। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতিবিদদের আদর্শ ও নীতিবোধ দিন দিন ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। রাজনীতি এখন অনেক ক্ষেত্রেই পেশা, ব্যবসা, নিরাপত্তা বেষ্টনী, অথবা ক্ষমতায় পৌঁছানোর সিঁড়িতে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে এক প্রবল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, দলবদলের রাজনীতি।
এটি এমন এক প্রবণতা যেখানে একজন রাজনীতিবিদ দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেন, কখনও নির্বাচনের আগে, কখনও পরাজয়ের পরে, কখনও ক্ষমতার ফায়দা নেওয়ার জন্য, কখনও মামলা বা তদন্ত থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে।
এই দলবদলকে অনেকেই বলেন, রাজনৈতিক বিবর্তন, পরিবর্তিত পরিবেশে নতুন অবস্থান, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অথবা কৌশলগত পদক্ষেপ। কিন্তু এর পেছনে প্রকৃত সত্য প্রায়শই অন্য কিছু। এর পেছনে থাকে, ব্যক্তিস্বার্থ, প্রভাবশালী হওয়ার আকাক্সক্ষা, অর্থনৈতিক সুবিধা, ক্ষমতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, রাজনৈতিক আশ্রয়- প্রশ্রয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাব, দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা, আইনি সুরক্ষার প্রয়োজন। এতসব কারণ মিলে দলবদলের রাজনীতি হয়ে উঠেছে একটি আদর্শহীন রাজনৈতিক বাজার, যেখানে দল মানে আর নীতি নয়, দল মানে ক্ষমতার সিঁড়ি।
রাজনীতি যখন ক্ষমতার সমার্থক হয়ে যায়, তখন আদর্শ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ইতিহাস, দলের দর্শন, সবকিছুই অবমূল্যায়িত হয়। ফলে প্রশ্ন ওঠে, দলবদল কি রাজনৈতিক বিবর্তন, নাকি রাজনৈতিক বিচ্যুতি? দলবদলকারী কি আদর্শগত উন্নতি ঘটায়, নাকি নৈতিক পতন?
একজন নেতা যদি গতকাল এক আদর্শ মানেন এবং আজ বিপরীত আদর্শে বিশ্বাসী হন, তাহলে কোনটিকে সত্য ধরা হবে? গতকালের বিশ্বাস নাকি আজকের সুবিধা?
রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র যখন দুর্বল হয়, তখন দলবদল রাজনীতির একটি ভয়াবহ উপসর্গ। তবু আমাদের দেশে দলবদল একটা সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। আর যুগেযুগে এটি হয়ে আসছে। 
দলবদলের রাজনীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
রাজনীতিতে দল পরিবর্তন কোনো নতুন ঘটনা নয়। হাজার বছরের রাজনীতির ইতিহাসে শাসন ব্যবস্থার চরিত্র এমন ছিল যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তন মানে ছিল গোষ্ঠীর আনুগত্য পরিবর্তন। প্রাচীন গ্রিস ও রোমে সেনেটররা কোনো এক শাসক দুর্বল হলে তার বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলাতেন। রাজনৈতিক জোট ভেঙে গড়ে উঠত ক্ষমতার ভারসাম্য অনুযায়ী। কিন্তু তখন রাজনৈতিক দল ছিল না, ছিল গোষ্ঠী বা শাসকদের প্রতি আনুগত্য।
মধ্যযুগে সামন্ততান্ত্রিক যুগে শাসকের প্রতি আনুগত্য থাকত অস্ত্র ও জমির বিনিময়ে। এক শাসক মারা গেলে বা দুর্বল হলে অভিজাতরা গোপনে দল বদল করতেন। 
উমাইয়া থেকে আব্বাসীয়দের উত্থান, বড় অংশ শাসকের দলে চলে যায়। ইসলামি খেলাফতে এটি ছিল দল পরিবর্তনের প্রথম লক্ষণ। রাজনৈতিক অবস্থান ছিল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও পারিবারিক বংশরক্ষার জন্য।
ভারতের রাজনীতিতে মোঘল আমলে হিন্দু–মুসলিম অভিজাতরা শাসকের শক্তির ওপর ভিত্তি করে আনুগত্য পরিবর্তন করতেন। শক্তিশালী বাদশাহ হলে সবাই পাশে, দুর্বল হলে সবাই অন্য শাসকের সঙ্গে। ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশদের “ডিভাইড এন্ড রুল” কৌশল রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা, আনুগত্য পরিবর্তন ও দল বদলকে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ছিল দলবদলের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ভারতীয় রাজনীতিতে সুবিধাবাদী আচরণের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দলবদল নিয়মিত রাজনীতির অংশ হয়ে ওঠে।
এরফলে তৈরি হয় দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আদর্শগত গড়িমসি, নেতা-কেন্দ্রিক রাজনীতি, শাসক দলের প্রভাবশালী ভূমিকা। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলবদল একটি নিয়মিত রাজনৈতিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
কেন দল ছাড়ে নেতাকর্মী?
দলবদলের পেছনের কারণ যতটাই বলা হোক “আদর্শের উন্নয়ন”, বাস্তবে দেখা যায়, ক্ষমতার নিকটবর্তী হওয়ার আগ্রহ, ক্ষমতা রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। ক্ষমতাসীন দলের সুযোগ-সুবিধা, পদ, প্রভাব, ব্যবসায়িক সুবিধা রাজনীতিবিদদের আকর্ষণ করে। যদি এক নেতা দেখেন, নির্বাচনে দল জেতার সম্ভাবনা কম, ক্ষমতার সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে, দলটির জনপ্রিয়তা কমছে, তখন তিনি দলে থাকার নৈতিকতা ভুলে অন্য দলে যোগ দেন। এটি রাজনীতিতে আদর্শের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন।
মনোনয়ন পাওয়ার নিশ্চয়তায় সর্বাধিক দলবদল ঘটে নির্বাচনের আগে। যে দলে মনোনয়ন পাওয়া কঠিন, সেখান থেকে নেতারা চলে যান অন্য দলে। মনোনয়ন কেন্দ্রিক দল বদলের কিছু বৈশিষ্ট্য আদর্শ নয়, টিকেটই মূল সিদ্ধান্ত। গতকাল যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, আজ তার দলের প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের টিকেট মানেই জয়ের সম্ভাবনা, ফলে রাজনৈতিক নীতিবোধ ভেঙে যায়। পদবঞ্চনার অভিমানেও অনেকে দল বদল করেন। এটি সাধারণত “অভিমান” ও “প্রতিশোধমূলক” প্রকৃতির।
দুর্নীতি বা আইনি সুরক্ষা প্রয়োজনে দলবদল করেন অনেকে, কিছু রাজনৈতিক নেতার দুর্নীতি, জমি দখল, টেন্ডারবাজি, আর্থিক অনিয়ম বা মামলা থাকলে তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়ে আইনি সুরক্ষা আশা করেন। এটি দল বদলের সবচেয়ে বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অপরাধীরা রাজনীতিতে টিকে যায়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়, আদর্শভিত্তিক নেতৃত্ব ধ্বংস হয়।
অনেক সময় সত্যিই দলের আদর্শ থেকে সরে যাওয়া, দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়া, গঠনমূলক রাজনীতির অভাব ইত্যাদি কারণে নেতা দল ত্যাগ করেন। তবে এটা বিরল ঘটনা। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এ কারণ সর্বনিম্ন।
দলবদল কেন আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে:
দলবদলকারী একজন নেতার রাজনৈতিক বক্তব্য সাধারণত দুই রকম, আগের দলকে গালমন্দ, নতুন দলের প্রশংসা। কিন্তু তার আগের বক্তব্য, আদর্শ, অবস্থান সবই পরস্পরবিরোধী। ফলে দ্বৈত আচরণ নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন জাগে।
 ১. আদর্শ কী?
আদর্শ মানে বিশ্বাস, নীতি, যুক্তি, দর্শন। কিন্তু দলবদলকারীর কাছে “আদর্শ” একটি স্থানান্তরযোগ্য জিনিস। গতকাল তিনি অমুক দলকে দুর্নীতিবাজ বলেছেন, নেতা সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করেছেন, সেই দলের নীতি-বিরোধিতা করেছেন আজ তিনি ঠিক সেই দলের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এই বিরোধ যে কোনো আদর্শকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
২. নৈতিকতার ভাঙন: রাজনীতিতে নৈতিকতা হলো, নিজের কথায় অবিচল থাকা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, মতাদর্শে স্থির থাকা, প্রাপ্ত সুবিধার সামনে আত্মসমর্পণ না করা। কিন্তু দল বদলকারী এই নৈতিকতার সবগুলো ভেঙে ফেলেন।
৩. জনগণের আস্থা পতন:
ভোটাররা মনে করে, “যে নেতা আজ দল বদলেছে, সে কালও এভাবে বদলে যাবে।” এর ফল, জনগণ রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করতে পারে না, নির্বাচনে আগ্রহ কমে যায়, তরুণরা রাজনীতির প্রতি নিরাশ হয়, গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়।
৪. রাজনৈতিক দল পরিচয় হারায়:
একটি দলের পরিচয় তার ইতিহাস, আদর্শ, সংগ্রাম, নেতাদের নৈতিকতা, মতাদর্শিক কর্মীদের উপস্থিতি। কিন্তু দল বদল বেড়ে গেলে দল হয়ে যায়, “রাজনৈতিক আশ্রয়ের বাজার”।
বাংলাদেশে দলবদলের রাজনীতি: 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলবদল দীর্ঘদিনের সমস্যা, বিশেষত,  নির্বাচনের সময় দল বদলের প্রবণতা চরমে পৌঁছায়। কারণ, মনোনয়ন নিশ্চিত, ক্ষমতার সুবিধা, বিজয়ের সম্ভাবনা, প্রশাসনিক প্রভাব ও দলের শক্তিশালী সংগঠনের প্রতি আকর্ষণ। এটি আদর্শের চরম অবমূল্যায়ন।
ক্ষমতার পরিবর্তন মানেই শুরু হয় নতুন আনুগত্য, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল পরিবর্তন হলেই, সরকারি দলের চিরশত্রুদের কিছু অংশ সেই দলে যোগ দেয়। বিরোধী দলে থেকে ক্ষমতা পাওয়া কঠিন,এ ধারণা দলবদল বাড়ায়। ক্ষমতাসীন দলকে “সুপার-পার্টি” হিসেবে দেখা হয়। সুপার পার্টির অংশীদার হতে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচনে, পদ লাভ, আর্থিক সুবিধা, স্থানীয় প্রভাব এসবের কারণে দলবদলের হার সবচেয়ে বেশি। আবার ব্যবসায়ীদের জন্য দল মানে, লাইসেন্স, টেন্ডার, জমি, আমদানি সুবিধা, সুরক্ষা। তাই তারা সাধারণত ক্ষমতার কাছাকাছি গিয়ে দলবদল করেন। অনেকেই পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সুবিধা পাওয়ার জন্য দলবদল করেন। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি হয়, নেতা-কেন্দ্রিক, স্বার্থভিত্তিক, আদর্শহীন, আস্থাহীন, প্রতিযোগিতাহীন এভাবেই দলবদলের সংস্কৃতি গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তোলে।
আদর্শ বনাম সুবিধা: রাজনৈতিক আদর্শ বলতে, বিচার সমতা, স্বাধীনতা, সুযোগের সমতা, মানবিকতা, রাষ্ট্র পরিচালনার দর্শন। আর রাজনৈতিক সুবিধা হচ্ছে পদ, ক্ষমতা, টাকা, নিরাপত্তা, নির্বাচনী জয়, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। ফলে দলবদল আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কারণ এতে দেখা যায়, রাজনীতিবিদরা আদর্শ নয়, সুবিধার পিছনে দৌড়ান।
আদর্শের স্থিরতা বনাম ব্যক্তিস্বার্থের ভাসমানতা:
আদর্শ স্থির থাকে, কিন্তু স্বার্থ ভাসমান। দলবদলকারী সাধারণত ভাসমান স্বার্থের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। আদর্শের রাজনীতিতে থাকে ত্যাগ কিন্তু সুবিধার রাজনীতিতে থাকে তোষণ। দলবদল সাধারণত তোষণমূলক রাজনীতির ফল।
দলবদল ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি: 
এক নেতা যদি, গতকাল এক আদর্শ আজ বিপরীত আদর্শ ধারণ করে তবে জনগণ মনে করে, এরা অবিশ্বাসযোগ্য। এতে সাধারণ মানুষ তাকে বিশ্বাস করতে পারে না। যুব সমাজ ভাবে, “রাজনীতি মানে সুবিধা আদায়।” ফলে রাজনীতির প্রতি মূল্যবোধ কমে যায়। যোগ্য তরুণরা রাজনীতিতে আসতে চায় না। ভোটারদের মনে হয়, দলবদলকারী নেতাকে ভোট দিলে সে আবার দলবদল করবে, ভোট মানে আর আদর্শ নয়, ভোট অস্থির ও অবিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করে। ফলে রাজনীতির প্রতি মূল্যবোধ কমে যায়। জনগণ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়। এটি গণতন্ত্রের জন্য বড় বিপদ।
দলবদল ও গণতন্ত্রের ক্ষয়: 
দলবদল মানে বিরোধী দলকে দুর্বল করা। বিরোধী দল দুর্বল হলে, নির্বাচনী মাঠে প্রতিযোগিতা কমে, সরকারের জবাবদিহিতা কমে, গণতন্ত্রে ভারসাম্য ভেঙে যায়। ক্ষমতাসীন দল শক্তিশালী হতে হতে হয়ে ওঠে “অপ্রতিদ্বন্দ্বী”। রাজনৈতিক একচ্ছত্রতা প্রতিষ্ঠিত হয়। আদর্শিক রাজনীতি হারিয়ে যায়, বাম, ডান, মধ্যপন্থী, এই বিভাজন মুছে যায়। সব দলই হয়ে ওঠে সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর আশ্রয়কেন্দ্র। এই ধারায়  যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে না, কারণ নেতৃত্ব পেতে হলে, আদর্শ নয়, তোষণ, ক্ষমতা, দলবদল প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্র ও সমাজ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দলবদলের সঙ্গে তাবেদারি, চাটুকারিতা ও রাজনৈতিক নৈতিকতার সংকট:
দলবদলের সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে, তাবেদারি, চাটুকারিতা, ব্যক্তিপূজা, ক্ষমতার সামনে মাথা নত করা। দলবদলকারী নেতা নতুন দলে টিকে থাকতে, নেতৃত্বের প্রশংসায় অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে, আদর্শগত অবস্থান ত্যাগ করে, মানুষের সমস্যার তুলনায় দলের তোষণে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ে, এর ফলে দলের আসল আদর্শিক কর্মীরা দমে যায়, দল হয়ে ওঠে “চাটুকারদের আখড়া”।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: ভারত: ভারতে দল বদল এত বেশি হয়েছে যে ১৯৮৫ সালে “দলত্যাগ বিরোধী আইন” করতে বাধ্য হয় সরকার। এর পরও বেশ কিছু রাজ্যে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন একটি চরম বাস্তবতা। 
পাকিস্তান:
পাকিস্তানে রাজনীতিবিদরা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের কাছে আনুগত্য দেখায়। যে শাসক ক্ষমতায়, তার দলে যোগ দেওয়া একটি সাধারণ ঘটনা।
শ্রীলঙ্কা ও নেপাল: ছোট রাষ্ট্র ও দুর্বল দলীয় কাঠামোর কারণে দল বদল বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়াই দলবদলের “হটস্পট”।
দলবদল কমানোর উপায়: দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে দলবদল বন্ধ বা কমানো উচিৎ। এর জন্য দলত্যাগ বিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। যে সংসদ সদস্য দলবদল করবে তার পদ চলে যাবে, এই বিধান নির্বাহী প্রভাব ছাড়াই বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র রক্ষায় নিয়মিত কাউন্সিল, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বচ্ছ নেতৃত্ব নির্বাচন, দলের প্রতি কর্মী ও নেতাদের আস্থা বাড়াবে। রাজনৈতিক কাজে অর্থায়ন স্বচ্ছ করা দরকার। যেকোন স্বচ্ছতা ফিরলে দুর্নীতি কমবে, দল বদলের নৈতিকতা কমবে. ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি হ্রাস পাবে। এর জন্য একটি আদর্শিক রাজনীতি গড়ে তুলতে রাজনৈতিক শিক্ষার শক্তিশালী ব্যবস্থা প্রয়োজন। পাশাপাশি সচেতন ভোটার যদি দল বদলকারীকে শাস্তি দেয়, তবে দলবদলের প্রবণতা কমে।
উপসংহার: দলবদলের রাজনীতিতে আদর্শের মৃত্যু অনিবার্য। আজ দলবদল রাজনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আদর্শের মৃত্যু ঘটছে, নৈতিকতার সংকট তৈরি হয়েছে, গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে, দলগুলি পরিণত হয়েছে “ক্ষমতার বন্দর” নেতৃত্ব হয়েছে সুবিধাবাদী। দলবদলের রাজনীতি যত বাড়ছে, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ততই কমছে। রাজনৈতিক আদর্শ এখন মৃতপ্রায় ফলে তরুণদের আগ্রহ নষ্ট হচ্ছে, গণতন্ত্রের ভিত্তি ভেঙে যাচ্ছে। সুতরাং দল বদলের রাজনীতিতে আদর্শ কেবল প্রশ্নবিদ্ধই নয়, বরং গভীর সংকটে নিমজ্জিত।
রাজনীতি যদি আদর্শহীন হয়, তবে তা আর জনকল্যাণে নয়, বরং ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হয়। দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র, সেই রাজনীতির দিকে এগোলে বিপদের মুখে পড়ে।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক, সভাপতি রেলওয়ে জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।

Aminur / Aminur