লালমনিরহাটে জেঁকে বসেছে শীত
উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এ জেলার গ্রামীণসহ শহরের জনপদ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে ঘন কুয়াশায়। রাতে ও সকালে টুপটাপ করে ঝরছে শিশির। সকালে সূর্যের আলোকচ্ছটায় ধানের শীষে শিশিরের ফোঁটা ফোঁটা পানি যেন একেকটা মুক্তদানা। ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালই বলছে জেঁকে বসেছে শীত। জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ সাধ্য অনুযায়ী গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন গরম কাপড়। কারো কারো গরম কাপড় না থাকায় হালকা কাপড় পরে বেরিয়ে পড়েছেন কাজের সন্ধানে। বুধবার (১৭ নভেম্বর) রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলবলা ইউনিয়নের নিথক গ্রামের শাহ আলী জানান, প্রচুর ঠাণ্ডা পড়ছে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। ঠাণ্ডার কারণে মাঠে কাজ করতে যেতে পারছি না। কয়েক দিন ধরে খুবই শীত পড়ছে। সকাল ১০টায়ও সূর্যের দেখা নেই।
এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট বেড়েছে নিদারুণ। গত কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা কম থাকলেও রাত থেকে হুহু করে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়া বাড়তে শুরু করায় সাধারণ মানুষ কাবু হয়ে পড়ছে। তিস্তাপাড়ের শিশু বৃদ্ধ সকলেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
লালমনিরহাটের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ১৩টি নদ-নদী তীরবর্তী ৬৩টি চরের লক্ষাধিক মানুষসহ নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা। শীতে খেটে খাওয়া মানুষ কাজকর্মে যেতে না পেরে কষ্টে দিন পার করছেন। গত পাঁচ দিন থেকে শীতের তীব্রতা তেমন না থাকলেও গত রাত থেকে শীতের তীব্রতা হুহু করে বেড়েছে। এতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাঁপানি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, হৃদরোগসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানান, লালমনিরহাটে ঠাণ্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ৩৫ জন।
তিস্তাপাড়ের লাভলু মিয়া জানান, গত পাঁচ দিন থেকে তিস্তার পাড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। পাশাপাশি ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় এলাকার মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে।
সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, অত্র ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা বেশি। শীত আর ঠাণ্ডা বাতাসে অনেক অসহায় পরিবার কষ্টে দিন পার করছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।
এমএসএম / জামান