ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

সফলতার গল্প

মামার অনুপ্রেরণায় আইনজীবী হয়েছেন অভিজিৎ


ফাহমিদা হায়দার তিথি photo ফাহমিদা হায়দার তিথি
প্রকাশিত: ১-১২-২০২১ দুপুর ১২:১৮

পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্ম গ্রহণ করেন যাদেরকে মানুষ এক নামেই চিনে। তাঁদের মত এডভোকেট অভিজিৎ কর্মকারও পরিচিত মুখ। আইন পেশায় ভাল করার পাশাপাশি জুনিয়রদের ভাইভাভীতি দূর করার জন্য যিনি জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা অকপটে স্বীকার করছেন তিনি আর যাই হোক সাধারণ মানুষ নন। তার সাথে সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ আজ তুলে ধরছি।

এই কর্মযোগী মানুষটি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের চাকরির জন্য ফরিদপুর ভাঙ্গা নামক শহরে বসবাস করা হয়েছিল। পৈত্রিক নিবাস অভয়নগর থানা, যশোর।মায়ের নাম প্রণিমা ভৌমিক এবং বাবার নাম অশোক কর্মকার। মা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি ২০০০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মারা যান। বাবা বর্তমানে পাটকলে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। শৈশবে মাতৃবিয়োগের দরুন মায়ের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে নি।
তৃতীয় শ্রেনিতে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু। এর পূর্বে বাড়িতেই বাবা, মা ও রত্না দিদির (গৃহ শিক্ষক) কাছে অধ্যয়ন করেন। এক বছর পর ১ নং আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নের পর মায়ের মৃত্যুর পরে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে যশোরের পি.পি.বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে নওয়াপাড়া মডেল কলেজে অধ্যয়ন করেন।

ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পরীক্ষা দিয়ে (নামে মাত্র) অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। অর্থনীতিতে গণিত থাকায় বিষয় বদলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন কিন্তু পড়েন নি। পড়া বাদ দিলে মামার জোরাজোরি ও পীড়াপীড়িতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) তে আইন বিষয়ে ভর্তি হন।
জীবনে নানা চড়াই-উৎরাই, তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা রয়েছে।মাঝে কিছুদিন পাটকলে কাজ করা হয়েছিলো তবে কোনো কিছুই স্বপ্নকে থামিয়ে রাখতে পারে নি।

সিনিয়র অমিত দাশ গুপ্ত স্যারের নিকট ইন্টিমেশন পেপার সাইন করাতে গিয়ে স্যারকে দেখে তার আন্তরিক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে আইনজীবী হওয়ার অনুপ্রেরণা পান। এর পূর্বে আইনজীবী সম্পর্কে দাদার ধারণা খারপ ছিল। মামার অর্থায়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে অধ্যয়ন করেন। এদের দুইজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা অসীম।
বর্তমানে তিনি ডিবেটিং ক্লাব অব বিইউবিটির সাধারণ সম্পাদক। বিইউবিটি এলামনাই এসোসিয়েশন এর প্রচার সম্পাদক। ৭১ এর ঘাতক দালাল নিমূল আইন সহায়ক কমিটির সদস্য। বিইউবিটি ল এলামনাই এসোসিয়েশন ঢাকা বার শাখার সভাপতি। ২২ ও ২৩ তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিটিভিতে দুইবার বিতার্কিক ও দলনেতা হিসাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
নতুনদের প্রতি যারা আইনপেশায় জড়িত হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে দাদা বলেন, "প্রথমত পড়ার বিকল্প কিছু নেই।জানতে হলে পড়তে হবে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো সাঁতরে নদী পাড় করার মতো করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দায়িত্ববোধ থাকতে হবে এবং কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে আইনজীবী হয়ে উঠতে হবে।"

দাদা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চান। তিনি বিশ্বাস রাখেন সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি এবং অপসংস্কৃতির প্রভাবে সংবিধানের ৪টি মূলনীতি থেকে যে বিচ্যুতি ঘটেছে তা খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে পারবে। সচেতনতা, বাঙালি সংস্কৃতিচর্চা এবং দেশপ্রেম থাকলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
দক্ষ আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষের সেবা করার মাধ্যমে দাদা মানুষের মাঝে হাজার বছর বেঁচে থাকতে চেয়েছেন। দাদার লালিত স্বপ্ন পূরণ হোক এবং সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করছি।

এমএসএম / এমএসএম