ঢাকাকে ৬ অঞ্চলে ভাগ করে নতুন পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ
বিদ্যমান নানা সমস্যা কমিয়ে পরিকল্পিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অপেক্ষায় থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ‘ড্যাপ’ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়েছে ড্যাপ। এটি অনুমোদনের পরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে ড্যাপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ড্যাপ বাস্তবায়নের পর ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগে করে সেগুলোতে বেশকিছু পার্ক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজউকের উদ্যোগে প্রণীত নতুন ড্যাপে থাকবে- ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়নস্বত্ব, প্রতিস্থাপন পন্থা, ভূমি পুনঃউন্নয়ন, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতিসাধন ফি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং। ওয়ার্ডভিত্তিক জনঘনত্বের বিষয়ে দিকনির্দেশনাও থাকবে ড্যাপে। এছাড়া সড়ক, উন্মুক্ত স্থান এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সরবরাহের সামর্থ্য বিবেচনায় নেওয়া হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নতুন ড্যাপে ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলোতে বেশকিছু পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ড্যাপে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক-ইকোপার্ক ও ৪৯টি জল কেন্দ্রিক পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, গত ৩০ ডিসেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ড্যাপ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ড্যাপ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়েছে এবং উপস্থিত সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কারও প্রতি যদি অবিচার করা হয়ে থাকে তাহলে তা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আমরা কথা রাখতে পেরেছি। এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রতি তিন মাস পরপর রিভিউ কমিটির মিটিং হবে। কোথাও যদি সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে সবার সিদ্ধান্তক্রমে তা করা হবে। এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব এবং বেজ ফার নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো এলাকাভিত্তিক ভবনের নির্দিষ্ট উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়নি। রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব এবং বেজ ফারের মান পুনর্নির্ধারণ করা হবে। ভবনের উচ্চতা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।
জানা গেছে, ড্যাপে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকার চারপাশের ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ সচল করা এবং এক হাজার ২৩৩ কিলোমিটার সড়ককে হাঁটার উপযোগী করা। এ পরিকল্পনায় শহরের বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে স্কুলভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে রিং রোড, বাস রুট রেশনালাইজেশন, মেট্রোরেল চালু ও খাল ব্যবহার উপযোগী করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগকে ড্যাপে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সড়ক, জল ও রেলপথকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সুপারিশ করা হয়েছে এ পরিকল্পনায়।
ড্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মোট ৪৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। পরে জরিপ করে প্রতিটি ব্লকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের সার্বিক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় দুই হাজার ১৯৮ কিলোমিটার জলাধার সিএস রেকর্ড অনুযায়ী উদ্ধার করে সচলের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব এলাকাকে বিনোদন স্পটে পরিণত করারও সুযোগ সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ড্যাপে ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবনায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৬০ শতাংশ এলাকাকে নগর ধরা হয়েছে। এতে আবাসিক এলাকা ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকা শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্প প্রধান) ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ৪ দশমিক ১ শতাংশ, ভারী শিল্প এলাকা ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (বিদ্যমান) ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, কৃষি এলাকা ২৯ দশমিক ২২ শতাংশ, জলাশয় ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, বনাঞ্চল ১ দশমিক ৪১ শতাংশ, উন্মুক্ত স্থান ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার কেন্দ্রে জনসংখ্যার চাপ কমাতে বিভিন্ন এলাকায় সুষম উন্নয়ন এবং মেট্রোপলিটন এলাকাকে বাসযোগ্য গড়ে তুলতে বিদ্যমান ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামোর ধারণক্ষমতা, বিদ্যমান নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনায় এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব জোনিং প্রণয়ন করা হয়েছে।
এর আগে ড্যাপে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর অবকাঠামোর পাশাপাশি সবুজ ও জলাশয় করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশের ভারসাম্যের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত স্থান হিসেবে এবং সবুজায়নের জন্য পার্ক ও উদ্যান নির্মাণের পরামর্শ দেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেন, বড় স্কেলে পার্ক বা উদ্যান নির্মাণ এবং ছোট ছোট ব্লকের পার্ক নির্মাণ করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ড্যাপে পুরো ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগে করেছে, এ অঞ্চলগুলোতে পার্ক নির্মাণ করা হবে। ড্যাপ সংশ্লিষ্ট রাজউকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজধানীতে কিছু পার্ক-উদ্যান আছে কিন্তু সেগুলো প্রধান শহরের মধ্যে কিন্তু শহরের পরিধি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলে গেছে। সেই হিসাব করলে চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী পার্ক বা সবুজায়ন নেই। যে কারণে ড্যাপে পুরো ঢাকাকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক-ইকোপার্ক ও ৪৯টি জলকেন্দ্রিক পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ড্যাপের সার্বিক বিষয়ে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, নতুন ড্যাপে (২০১৬-৩৫) এলাকাভিত্তিক রাস্তা প্রশস্তকরণসহ স্কুল, কলেজ ও নাগরিক সুবিধাদি প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে জনঘনত্ব জোনিংয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমির মালিকদের একত্রে ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন, মেট্রোরেল স্টেশনের আশেপাশে ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, নিম্নবিত্তের জন্য আবাসন নির্মাণ, উন্নয়নস্বত্ব বিনিময় প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনঘনত্ব ও এফএআরের প্রণোদনা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া সময়ের বিবর্তনে একটি এলাকার নাগরিক সুবিধাদি যেমন স্কুল ও খেলার মাঠ এবং সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নতি ঘটলে অধিক জনঘনত্ব ও এফএআর প্রদানের প্রবিধান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রত্যেকটি এলাকার রাস্তার প্রশস্ততা, খেলার মাঠ, স্কুল ইত্যাদির পর্যাপ্ততার ওপর ভিত্তি করে ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত হবে। ড্যাপে চিহ্নিত বাণিজ্যিক এলাকা এবং প্রশাসনিক এলাকায় সুউচ্চ ভবনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের আবাসন নির্মাণের মাধ্যমে নতুন ড্যাপে যে এফএআর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে আবাসন শিল্পকে একটি নতুন মাত্রা দেবে এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনবে। শুধু ইট-পাথরের শহর নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ে তোলার জন্য ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (২০১৬-৩৫) সফল বাস্তবায়নের বিষয়ে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
জানা গেছে, এর আগে পাঁচ বছর মেয়াদি ড্যাপের মাস্টার প্ল্যান প্রথম প্রণয়ন করা হয় ২০১০ সালে। ২০১৫ সালে প্রথম ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। বর্তমানে সময় বাড়িয়ে নগর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাজউক। নতুন ড্যাপের মেয়াদ হবে ২০ বছর।
জামান / জামান
তিতাস গ্যাস জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ এর অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার আয়োজিত
ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় দফা দাবি
জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার অনুষ্ঠিত
কামরাঙ্গীরচর থানার মোঃ আমিরুল ডিএমপি লালবাগ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নির্বাচিত
পেশাদারিত্ব ও মানবিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডিসি মহিদুল ইসলাম
ঝিনাইদহ অফিসার্স ফোরামের নতুন কমিটি গঠন
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ শিখাচ্ছে পাথওয়ে
উত্তরায় SEDA ফাউন্ডেশনের ১৭তম মেধা যাচাইয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে রাজউক চেয়ারম্যান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় নকশা দাখিল ও অপসারণের নির্দেশ
হাতপাখা নির্বাচিত হলে ঢাকা-১৮ কে একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলা হবেঃ আলহাজ্ব আনোয়ার