ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভালোবাসার নিদর্শন নালিতাবাড়ীর ঐতিহাসিক সুতানাল দীঘি


নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি photo নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০-২-২০২২ দুপুর ৩:২৬

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হলো কমলা রানীর দীঘি বা সুতানাল দীঘী বা বিরহীনি দীঘি। দীঘিটি কে কখন কোন উদ্দেশ্যে খনন করেছিলেন, তার ইতিহাসনির্ভর নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দীঘিটির নামকরণ নিয়ে রয়েছে পৌরাণিক চমকপ্রদ কাহিনী।

এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে জানা যায়, মোঘল আমলের শেষের দিকে আনুমানিক খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মধ্যমকুড়া গ্রাামে সশাল নামে এক গারো রাজা রাজত্ব করতেন। তার আমলেই এই দীঘি খনন করা হয়। কারো কারো দাবী এখানে বৌদ্ধ বিহার ছিলো। পরিখার মতো বিশাল এ দীঘিটি খনন করা হয়েছিল ১৮০ বিঘা জমির উপর। কথিত আছে রাজার শেষ বংশধর ছিলেন তাঁর রাণী বিরহীনি। হঠাৎ একদিন রানি বিরহিণী সামন্ত রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি কী আমাকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে কিছু দিতে চাও? তাহলে এমন কিছু দান কর যা যুগ-যুগ ধরে মানুষ আমাকে মনে রাখবে। তখন রাজবংশী সামন্ত রাজা রানীকে খুশি করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন।

চরকীর সাহায্যে অবিরাম একদিন একরাত সুতা কাটা হবে। দৈর্ঘ্যে যে পরিমাণ সুতা হবে সেই পরিমাণ সুতার সমান লম্বা এবং প্রশস্ত একটি দীঘি খনন করা হবে। ওই দীঘির পানি জনগণ ব্যবহার করবে আর তোমাকে স্বরণ করবে। রানীর সম্মতিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী দীঘির খনন কাজ শুরু হল। দিনের পর দিন খনন কাজ চলতে থাকল। নির্মিত হল বিশাল এক দীঘি। এই দীঘির এক পাড়ে দাঁড়ালে অন্য পাড়ের মানুষ চেনা যায় না।

আরো কথিত আছে, খননের পর দীঘিতে জল ওঠেনি। জল না ওঠায় সবাই যখন চিন্তিত তখন কমলা রানী স্বপ্নাদেশ পেলেন- ‘গঙ্গাপূজা কর নরবলি দিয়া, তবেই উঠিবে দীঘি জলেতে ভরিয়া’। এমন স্বপ্ন দেখে রানী চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন তিনি নরবলি না দিয়ে নিজেই গঙ্গামাতাকে প্রণতি জানানোর জন্য মহা-ধুমধামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দীঘির মাঝখানে গঙ্গাপূজার আয়োজন করেন। কমলা রানী গঙ্গামাতার পায়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, ‘কোন মায়ের বুক করিয়া খালি, তোমাকে দিব মাতা নরবলি। আমি যে সন্তানের মা, আশায় করিয়া ক্ষমা কোলে তুলিয়া নাও। মা পূর্ণ করো তোমার পূজা।’ এরপর বজ্রপাতের শব্দে দীঘিতে খুব দ্রুত জল ওঠা শুরু হয়। লোকজন দৌড়ে পাড়ে উঠতে পারলেও দীঘির টইটম্বুর জলে রানী তলিয়ে যান। কমলা রানী আর তীরে উঠতে পারেননি। সেই থেকে দীঘিটি কমলা রানী বা সুতানাল দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে।

সাবেক এমপি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবদুস সালামের লেখা 'নালিতাবাড়ীর মাটি মানুষ এবং আমি' বইতে তিনি বর্ণনা করেছেন, খ্রীষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শালমারা গ্রামে সশাল নামে এক গারো রাজার রাজত্ব ছিল। শালমারা গ্রামেই ছিল তাঁর রাজধানী। গ্রামের উত্তরে গারো পাহাড় পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। ১৩৫১ সালে বাংলার শাসনকর্তা শামস উদ্দিন ইলিয়াস শাহ সশাল রাজার বিরুদ্ধে সেনা পাঠান। সেসময় সশাল রাজা পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। পরবর্তী সময়ে গারো রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর সশাল রাজা শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছোট একটি ঘর নির্মাণ করে চারদিকে পরিখা খনন করেন। রাজা সেখানে রাত্রিযাপনকালে তাঁর রক্ষিরা বড় বড় ডিঙি নৌকায় করে চারদিকে পাহারা দিত। কালক্রমে ওই ছোট্ট ঘরের ভূখন্ড ধ্বসে গিয়ে দীঘিতে রূপ নিয়েছে। রাজার শেষ বংশধর ছিলেন রাণী বিরহিণী। পরবর্তীতে রাণী বিরহিণী নামে দিঘিটি পরিচিতি পায়।

১৯৪০ সালে সরকারি ভূমি জরিপে দীঘিটিকে রানী বিরহিনী নামেই রেকর্ড করা হয়েছে। তবে দীঘিটি খননের সত্যিকারের দিনক্ষণ ইতিহাসে জানা না গেলেও এটা যে একটা ঐতিহাসিক নিদর্শন এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন দীঘিটি পরিত্যাক্ত থাকায় জলের উপর শৈবাল জমে গজিয়ে উঠে ঘাস। যার জন্য দীঘিটির উপর গরু ছাগল অবাধে ঘাস খেতে পারত। ১৯৭২ সালে প্রথম দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

ঐতিহাসিক এ দীঘিকে কেন্দ্র করে ভূমিহীনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। ১৯৮৩ সালে এই দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘মধ্যমকুড়া সুতানালি দীঘিরপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি’। ১৯৮৪ সালে সমিতিটি রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১৭ জন। বর্তমানে সমিতির সভাপতি হিসেবে মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক দিসেবে ইদিস আলী দায়িত্ব পালন করছেন।

এই দীঘির চারপাশে ১৮০টি পরিবারের ২১৫টি খানার লোকজন বাস করেন। বর্তমানে প্রতিবছর অক্টোবরে এ দীঘিতে মৎস্য শিকারের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মৎস্য শিকারীরা আগমন করে থাকেন। সারাদেশ থেকে আসা মৎস্য শিকারীরা সমিতির দেয়া টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকার করে থাকেন। এ দীঘির মাছ খুব সুস্বাদু বলে বেশ প্রশংসাও রয়েছে। কালের সাক্ষী হয়ে আজও রয়েছে এই ঐতিহাসিক সুতানাল দীঘি।

শাফিন / জামান

আ.লীগের প্রায় ৩০ হাজার সন্ত্রাসীকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ হাসনাত আবদুল্লাহর

বাঁশখালীতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযোগ্যে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

ভূরুঙ্গামারীতে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

হাটহাজারীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান

শ্যামনগরে উপজেলা পর্যায়ে সরকারী ও বেসকারী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

রায়গঞ্জে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বোরো ধানের হাইব্রিড বীজ বিতরণ

বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে এসেছেন অলি-আউলিয়ারা, রাজনৈতিক দল নয়—পীর সাহেব ছারছীনা

নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ: আইডিয়াল স্কুলে বৃত্তিপ্রাপ্তদের সংবর্ধনা

টঙ্গীতে রনি'র সমর্থনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৭ নেতার প্রস্তুতি সভা

কুমিল্লায় বেগম রোগমুক্তি কামনায় হাজী ইয়াছিনের উদ্যোগে কুরআন খতম ও দোয়া

নাচোলে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘নাচোল সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব’-এর কার্যালয় উদ্বোধন

সুবর্ণচরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমির ওপর অবৈধ ইটভাটা অপসারণ দাবিতে স্মারকলিপি