তারুণ্যের ভাবনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জীবন দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার ও বরকতসহ আরো অনেক ভাষা সংগ্রামী। পরবর্তীকালে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিও পেয়েছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ অনন্য মর্যাদা। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০০ সাল থেকে দিনটিকে বিশ্বের সব দেশেই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের সংগ্রাম ও অবদানের কথা স্মরণ করে বিশ্ববাসী। এর কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ছয় হাজার ভাষা থাকলেও মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যতটা সংগ্রাম করেছে ততটা সংগ্রাম আর দেখা যায় না। সে কারণে একুশের চেতনায় এবং এর অন্তর্গত তাৎপর্যে বিশ্বের সব দেশের মানুষই এখন আন্দোলিত হয়, উজ্জীবিত হয়। তারাও নিজেদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার তাগিদ ও দায়িত্ব বোধ করে। এখানেই ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ তাৎপর্য ও অতুলনীয় সফলতা। মহান এই ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান অনস্বীকার্য। ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকে শুরু করে চুড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত ছিল তাঁর অবদান। ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর অবদান, অংশগ্রহণ ও ভূমিকা সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইউছুব ওসমান।
বাংলাভাষা ও বঙ্গবন্ধু একে অপরের পরিপূরক
রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো বাংলার দামাল ছেলেরা। আজ আমরা একটি স্বাধীন ভূখন্ডে দাড়িয়ে নিজের মুক্ত চেতনাকে প্রকাশ করি পৃথিবীর কাছে।রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বিশাল প্রেক্ষাপটে অনেক নামের ভীরে যে নামটা আমাদের সামনে ভেসে আসে সেই নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার স্থপতি এই মহান পুরুষ জড়িয়ে আছেন শাসকশ্রেণীদের থেকে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিটি গল্পে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী যখন বাঙালির ভাষার অধিকার হরণ করতে চেয়েছিলো,তাদের অতৎপরতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন আজন্ম মাতৃভাষা প্রেমিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২-ভাষা আন্দোলনের এ কালপর্বে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ইতিহাসের অনন্য দৃষ্টান্ত।এই গোটা সময়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন কখনো মুক্ত থেকে, কখনোও বা কারাগারে বন্দি অবস্থায়। ভাষার দাবি আদায়ে রাজপথে নামার কারণেই '৪৮ এর ১১ ই মার্চ কারাবন্দী হন বঙ্গবন্ধু। '৫২ এর ভাষা আন্দোলনকালে বঙ্গবন্ধু কারাবন্দী থাকায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে না পারলেও পরোক্ষভাবে তিনি তার অনুসারী ছাত্র নেতাদের পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। 'আমি বাংলায় কথা কই; আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি, বাংলায় জেগে রই'- প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের এ গান যতবার গাই ততবারই ফিরে আসে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সেই হৃদয় কাঁপানো দিনগুলো,ফিরে আসে বঙ্গবন্ধু।ফারহানা খানম
বায়ান্ন ও শেখ মুজিব একই বৃন্তের দুটি ফুল
বাঙালি জাতি প্রতিবছর পালন করে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। নানান উদ্দীপনা এবং আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয় এ মহান দিবস। কিন্তু এর গোড়াপত্তন কোথায় বা আমরা যে জাতি হিসেবে বাঙালি এবং আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, তা কী এমনি এমনি এসেছে নাকি তা আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত? কে আন্দোলনের মহানায়ক? এমন হাজারো প্রশ্নের জবাবের শব্দ একটাই আর তা হলো শেখ মুজিব। ৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে বাংলা ভাষার ওপর যে হায়নাদের থাবা তা সিংহের মতো রুখে দিয়েছে মুজিব। ভাষা আন্দোলনে মুজিব ছিলো টগবগে যুবক এবং ধীশক্তিসম্পন্ন প্রখর ছাত্রনেতা। ১৯৪৮ সালের ১১মার্চ - ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে প্রথম সফল হরতাল যা কিনা একই সাথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর প্রথম হরতালও। এতে নেতৃত্ব প্রদান করেন শেখ মুজিবুর রহমান। জাতীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর বাংলার বিরুদ্ধে অবস্থান শুধু মাত্র শেখ সাহেবের জন্যই পরিবর্তন হয় এবং একই সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে তাঁর সমর্থন আদায় করেন। ’৫২ এর দিনগুলোতে ভাষা আন্দোলনকে সফল ও স্বার্থক করতে তিনি ফরিদপুর কারাগারে আমরণ অনশন করেন এবং রাজপথের সংগ্রামীদেরও নেতৃত্ব দেন। ’৫২-কে সার্থক ও রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত শেখ মুজিবুর রহমান। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু শহীদ স্তম্ভে ফুল অর্পনে সীমাবদ্ধ না থেকে মহানায়কের বাংলা ভাষাকে নিয়ে যে চেতনা তা জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত করাই জাতি হিসেবে মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।মোঃ মামুন হোসেন
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার বঙ্গবন্ধু
১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬, এই কালখণ্ডে সংঘটিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই গোটা সময়েই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন—কখনো মুক্ত থেকে, কখনো বা কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায়।রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বলতে সাধারণভাবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কথাই মনে আসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস অনেক বিস্তৃত। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এর পরিধি। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কোনো মুহূর্তের বিষয় নয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বিশাল প্রেক্ষাপটে আদি থেকে চুড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত অনেক নামের ভিড়েও একটি নাম উজ্জ্বলভাবে আমাদের সামনে আসে। সে নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষাসৈনিক গাজীউল হক তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন- ‘১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক ছিলেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই ’৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে জেলে থেকেই তিনি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। ’ (গাজীউল হক, আমার দেখা আমার লেখা, পৃষ্ঠা-৪০)। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন কারাগারে বন্দি—তাই বায়ান্নর আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে তাঁর ভূমিকা পালনের কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু বায়ান্নর আন্দোলনের আগে-পরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সংশ্লিষ্টতা ছিল সরাসরি এবং প্রত্যক্ষ। মনে রাখতে হবে, এই আন্দোলনের যাঁরা পথিকৃৎ চিন্তক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের অন্যতম; আর এ-ও মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণেই পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক সরকার তাঁকে বন্দি করেছে ১৯৪৯ সালের ২৯ এপ্রিল৷ এরপর একাধিকবার তিনি বন্দি হন। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কারাগার থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন। মুক্ত অবস্থায় যেমন, তেমনি বন্দি থাকাকালেও নানা মাধ্যমে ও বিভিন্ন কৌশলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংগঠন ও ২১শে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। নানা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ছিলেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি ও সংগঠনের প্রধান স্থপতি। এ কথা আজ ঐতিহাসিক সত্য।নাসরুম ফাতেহা ঐশী
আজন্ম বাংলা ভাষা প্রেমী ছিলেন বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে গেছেন এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষীদের দাবির কথা বলে গেছেন। আজন্ম মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব এবং পরবর্তী সময় আইন সভার সদস্য হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর সরাসরি ভাষা আন্দোলনে শরীক হন।১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। এই হরতালে শেখ সাহেব নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণের পূর্বে শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক ময়দানে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসেও নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন। এটাই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বাংলা ভাষায় প্রণীত সংবিধান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছায়ার মতো না থাকলে আজ আমরা আমাদের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে অর্জন করতে সক্ষম হতাম না।ইরতাজ আরা
জেলে থেকেও ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি।'আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা গানের এ লাইন দুটি সকল বাঙালির কাছেই পরিচিত। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতে এই গান গেয়ে আমরা ভাষাশহীদদের স্মরণ করি। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ধর্মকে পুঁজি করে দেশ বিভাজিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয় মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী সচেতনভাবে বাঙালির কাছ থেকে ভাষার অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল।১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে পল্টন জনসভায় ঘোষণা করেন 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।' তবে এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া ১৯৪৮ সালের চাইতেও ব্যাপকতর ছিল। খাজা নাজিমউদ্দিনের ঘোষণায় জেলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শেখ মুজিব এবং মহিউদ্দিন আহমদ তখন ঢাকা জেলে বন্দী ছিলেন। মহিউদ্দিন আহমেদ এর ভাষ্যমতে শেখ মুজিব অসুস্থতার ভান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে অ্যাসেম্বলি ঘেরাও কর্মসূচির পরামর্শ দেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে ঢাকা মেডিকেল থেকে আবারো জেলে ফেরত পাঠানো হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জ স্টিমার ঘাটে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রনেতা শামসুজ্জোহা সহ কয়েকজন ছাত্র নেতার সঙ্গে কথা হয়। শেখ মুজিব পুনরায় অনুরোধ করলে ২১ ফেব্রুয়ারি তে হরতাল মিছিল শেষে আইনসভা যেন ঘেরাও করা হয় এবং বাংলা ভাষার সমর্থনে আইনসভার সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয়। শেখ মুজিব কারাগারে থাকা অবস্থায় বাংলাভাষার সমর্থনে ১৮ ই ফেব্রুয়ারি অনশন শুরু করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করেন। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন ছিল না, এই আন্দোলন ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন।মো: সাকিবুল ইসলাম
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও উজ্জ্বল ছিলেন বঙ্গবন্ধু
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বিশাল প্রেক্ষাপটে আদি থেকে চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত অনেক নামের ভিড়েও একটি নাম উজ্জ্বলভাবে আমাদের সামনে আসে নাম হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।১৯৪৭ সালে নবগঠিত দুটি প্রদেশের মধ্যে পূর্ববাংলার প্রতি শাসকগোষ্ঠী ভাষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। ফলে শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায়।ভাষা আন্দোলন-বাংলা-বাঙালি-বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই গোটা সময়েই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন—কখনো মুক্ত থেকে, কখনো বা কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায়। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, ভাষার চেতনাকে বুকে ধারণ করেছিলেন। তার চিন্তা-চেতনায় ছিল মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতি বিধানের সংকল্প। বাঙালিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এ চেতনা ছিল সর্বদা সক্রিয়। এ ব্যাপারে তিনি আমৃত্যু ছিলেন আপাসহীন, কঠোর।এমনকি ভাষা আন্দোলন- কেবল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সীমিত ছিল না। একুশের উৎস থেকে জেগেছিল গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন; সে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দানা বেঁধেছিল সংগ্রাম। এই মহান আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্থপতির ভূমিকা পালন করে আমাদের একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ’ নামক এ ভূখণ্ডের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই স্বীকার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকৃতি বা অবমূল্যায়ন মানেই আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সর্বোপরি আমাদের জাতিসত্তা ও অস্তিত্বকেই অস্বীকৃতি।মুন্নি আক্তার প্রিয়া
বঙ্গবন্ধুর নির্মল চোখে ছিল মাতৃভাষার প্রেম
বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু যেন একই সুতোয় গাঁথা। জন্মলগ্ন থেকে আমরা যতই বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জেনেছি ঠিক তত টাই জেনেছি বঙ্গবন্ধু নিয়ে।ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন দেশপ্রেমিক ও কর্তব্যপরায়ণ। ভাষা আন্দোলনেও তার অবদানের কমতি ছিল না। ভাষা আন্দোলনের মূল কাণ্ডারি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পশ্চিমা শাসকদের শোষনেও যতটা সোচ্চার ছিল পূর্ববঙ্গ ঠিক ততটাই সোচ্চার ছিল নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনেও। ১৯৫০ সালে লিকায়ত আলী খান উর্দুকে জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার পরে দিশেহারা হয়ে যায় পূর্ব বাংলা। তখন উদ্ভব ঘটে এক বীরের। যার হাত ধরেই স্বাধীনভাবে বাঁচার শক্তি ফিরে পায় বঙ্গীয়রা।মাতৃভাষা বাঁচানোর উদ্যেমে যুক্ত হয় বেশ কিছু আন্দোলনে। লড়ে যায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন বাঙালিদের নতুন পথের দিশারী। সেই পথেই অগ্রসর হয়ে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে রাজপথে নামে হাজার হাজার মানুষ। সেই পথে অগ্রসর হয়ে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতরা বুক পেতে দেয় ঘাতকদের কবলে। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা।শান্ত চন্দ্র শীল
বঙ্গবন্ধুই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি অপরটির সঙ্গে এমনি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের দশ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি। ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়, হরতালে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু, পুলিশি নির্যাতনের স্বীকার ও কারাবরণ করেন, পরবর্তীতে আইনসভার সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু কারাবন্দী থাকলেও হাসপাতাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতেন। এক কথায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।আরিফুজ্জামান রঞ্জু
এমএসএম / এমএসএম

ফেসবুক ছিল বিনোদনের জায়গা, এখন আয়ের মূল উৎস

তোমাদের মৃত্যুর দায় আমরা এড়াতে পারি না

সুফি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার ১ যুগ পার করল সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন

ব্যতিক্রমী ধারার আলো নেভার পথে

টেকসই কৃষির জন্য চাই জৈব বালাইনাশক

ঈদযাত্রা হোক দুর্ঘটনামুক্ত

রমজানে ভ্রমণে যে বিষয় মেনে চলা জরুরি

সুস্থ থাকার জন্য কেমন পানির ফিল্টার নির্বাচন করবেন

সাপের ক্ষিদে মেটাতে পাখিশূন্য দ্বীপ

একদিনের ট্যুরেই ঘুরে আসুন চীনামাটির পাহাড়ে

আধ্যাত্মিকর যাত্রা পথে সুফি মেডিটেশন এর গুরুত্ব

খাজা ওসমান ফারুকীর কুরআন দর্শন

খাজা ওসমান ফারুকীর সুফি তত্ত্বের নিদর্শন
Link Copied