হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা বাঁধ ও ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক
যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
শুকনো মৌসুমে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার নদীতে জেগে ওঠা আবাদি জমির মালিকদের জিম্মি করে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে অসাধু বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে কতিপয় অসাধু চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় বসতভিটা, ঘর-বাগি, মসজিদ-মন্দির, আঞ্চলিক সড়ক ও স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সে সময় ভাঙন রোধে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও তা রোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তীব্র ভাঙন ও নদীপাড়ের ক্ষয়কে বালু উত্তোলনের একমাত্র কারণ বলে জানিয়েছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে যমুনা ফার্টিলাজার সার পরিবহনের জন্য ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর সড়কের গোবিন্দাসী কাকুদাইর পযর্ন্ত সেতুরক্ষা বাঁধ, বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের গাইড ওয়ালও। সারাবছরই অবাধে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মীর সহযোগিতায় ও প্রশাসনের লোকজনদের ম্যানেজ করেই এমন অবৈধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম ফরিদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের জগৎপুরা থেকে ননিল বাজার পর্যন্ত ৫টি ঘাট পরিচালনা করছেন তিনি। এতে ট্রাকপ্রতি কমিশন নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা।
এসব ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা গ্রামের ভুক্তভোগী মো. মানিক হোসেন নামে এক ব্যক্তি অবৈধ বালুর ঘাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, জগৎপুরা এলাকায় রাতের আধারে বেআইনিভাবে বালু মাটি কাটা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সময় বালু মাটি কাটা বন্ধ করার কথা বলায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। অথচ অভিযোগের ১২ দিন পার হলেও অদৃশ্য কারণে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া হতে নলীন বাজার পর্যন্ত সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ করেছে। কিন্তু ওই গাইড ওয়ালের কাছ থেকে ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। জগৎপুরা এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ৫টি বালুর ঘাট তৈরি করে ট্রাকযোগে বালু মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু মাটি কাটার ফলে বন্যার সময় নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ এসব বালুর ঘাট।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে অর্জুনা এলাকায় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় কতিপয় নেতাকর্মীরা যত্রযত্র বালুর ঘাট তৈরি করেছে। বালু ব্যবসায়ীরা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্যালাসাইডিং ভেঙে রাস্তা তৈরি করে হাজার হাজার ট্রাকে বালু বিক্রি করছে।
জগৎপুরা গ্রামের রায়হান বলেন, আপনারা লিখে কী করবেন। প্রশাসনের লোকজন আসে বেশি টাকা পায় চলে যায়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রহিজ উদ্দিন বলেন, যমুনায় বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। এরমধ্যে প্রভাবশালীরা বাঁধের কাছ থেকে ভেকু দিয়ে বালু কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। কিছু বলতে গেলে মারধর করতে আসে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিগত দুই মাস ধরে জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করছে তারা। এভাবে বালু মাটি কেটে ফেলা হলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাবে।
রাজন হোসেন বলেন, যমুনা নদীতে যে গভীরতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তার থেকে বেশি গভীর করে বালু ভেকু দিয়ে কাটা হচ্ছে। এতে বন্যা হলেই ভেঙে পড়বে বাঁধ। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বালু উত্তোলণের ফলে হুমকিতে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক।
ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোকারী মানিক হোসেন খান বলেন, বাপ-দাদার জমিতে চর জেগে উঠেছে। সেই চর জোরপূর্বকভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে। বাঁধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। লিখিতভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, এ নিয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, বালুর ঘাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে রাতের আঁধারে আবার তারা বালুর ঘাট চালু করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে এসব বালুর ঘাট বন্ধে সংবাদকর্মীদের ফোনের পর শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অর্জুনা ও জগৎপুরা এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর বাঁধের পাশে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, উপজেলার জগৎপুরা এলাকায় গাইড ওয়ালের কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএম / জামান
মির্জা ফখরুলকে নিয়ে কন্যার হৃদয়স্পর্শী পোস্ট
পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নের বিরুদ্ধে তৃণমূলের তীব্র ক্ষোভে উত্তাল নেছারাবাদ উপজেলা
কুমিল্লায় মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থনে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ
ধামইরহাটে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিশুদেরকে কোরআনের ছবক প্রদান
আদমদীঘিতে নিখোঁজের ৩দিন পর ডোবার থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
পাবনায় রেজিস্টারদের প্রাণনাশের হুমকি! সেই শাহীনসহ ৬ দলিল লেখকের সনদ বাতিল
হালদা নদী থেকে বালুভর্তি ড্রেজার জব্দ, চালককে জরিমানা
শাল্লার কুশিয়ারা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের তান্ডব,নদীভাঙনের মুখে শত শত ঘরবাড়ি
বগুড়ার শেরপুরে মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত
গ্রাম আদালতকে আরও গতিশীল করতে চেয়ারম্যানদের নিয়ে ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের চেষ্টা চলবে-নেত্রকোনায় দেলাওয়ার হোসেন আজিজী
চট্টগ্রামের ৫টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ